শরীয়তের ফতওয়া অনুযায়ী ক্বদমবুছী নেয়া বা করার জন্য অনুমতি প্রদান করা খাছ সুন্নত মুবারক
, ০১ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
৪. হাদীছ শরীফ উনার শরাহগ্রন্থ থেকে দলীল
হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা বলেন,
وفي الحديث دليل على جواز تقبيل الأرجل
অর্থ : আর হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ক্বদমবুছী জায়িয হওয়ার দলীল রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (লুম‘আত ৮/৫১, আওনুল মা’বূদ ১৪/১৩৬)
হাশিয়ায়ে সিন্দীর ২য় খ-ের ৩৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছেন,
جَوَازُ تَقْبِيلِ الرِّجْلَيْنِ
অর্থ : দুই পা বুছা দেয়া তথা ক্বদমবুছী করা জায়িয। ’
৫. ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল
আল্লামা ইমাম বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
فعلم من مجموع ما ذكرنا إباحة قبلة اليد والرجل والرأس
অর্থ : আমরা যা আলোচনা করলাম, এসকল দলীলসমূহ থেকে জানা গেলো যে, হাত, পা ও মাথায় বুছা দেয়া জায়েয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (আল বিনায়াহ্ শারহুল হিদায়াহ্ ১২/১৯৮, ফতওয়ায়ে শামী)
বিশ্বখ্যাত হানাফী ফক্বীহ হযরত ইমাম তাহতাবী রহমতুল্লাহ আলাইহি তিনি ‘হাশিয়ায়ে মারাক্বিউল ফালাহ্ ১ম খ-ের ২১৬ পৃষ্ঠায়’ বলেন,
فعلم من مجموع ما ذكرنا إباحة تقبيل اليد والرجل والكشح والرأس والجبهة والشفتين وبين العينين
অর্থ : আমরা যা আলোচনা করলাম, এসকল দলীলসমূহ থেকে জানা গেলো যে, হাত, পা, কোমর, মাথা, কপাল, দুই ঠোট ও দুই চোখের মাঝখানে বুছা দেয়া জায়েয রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
ফিক্বাহের কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছেন,
(طَلَبَ مِنْ عَالِمٍ أَوْ زَاهِدٍ أَنْ) يَدْفَعَ إلَيْهِ قَدَمَهُ وَ(يُمَكِّنَهُ مِنْ قَدَمِهِ لِيُقَبِّلَهُ أَجَابَهُ
অর্থ : যদি কোনো আলিম অথবা পরহেযগার ব্যক্তির নিকট কেউ যদি এটা আরজী করে যে, উনি যেন উনার ক্বদম মুবারক বিস্তার করে তাকে ক্বদমবুছী করার সুযোগ দানে ধন্য করেন, তাহলে তিনি তাকে সুযোগ দিবেন। সুবহানাল্লাহ! (দুররুল মুখতার ৬/৩৮৩, ফতওয়ায়ে শামী ২৬/৪৪৪, শরাম্বলালী, গায়াতুল আওতার, আলমগীরী ৫/৪০৪, আশয়্যাতুল লোময়াত, কুনিয়া ইত্যাদি)
হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
يُسْتَحَبُّ تَقْبِيلُ يَدِ الرَّجُلِ الصَّالِحِ وَالزَّاهِدِ وَالْعَالِمِ... وَتَقْبِيلُ رَأْسِهِ وَرِجْلِهِ كَيَدِهِ
অর্থ : নেককার, পরহেযগার ও আলিম উনাদের হাতে বুছা দেয়া মুস্তাহাব। হাতের ন্যায় মাথা ও পায়ে বুছা দেয়া তথা ক্বদমবুছী করাও মুস্তাহাব। সুবহানাল্লাহ! (শারহুল মুহায্যাব ৪/৬৩৬)
হযরত শায়েখ আবিদ সিন্দী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
تمام روايات سے ثابت هوا كه علماء ومشاءخ اور ديني شرف ركهنے والے حضرات كي دست بوسي بلكه قدم بوسي نيز پيشاني وغيره پر بوسه دينا سنت اور تعامل صحابه وتابعين سے بلا كسي نكير كے ثابت هے
অর্থ : হাদীছ শরীফ উনার সকল বর্ণনা মুবারক দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ এবং দ্বীনদার ব্যক্তি উনাদের সম্মানিত দস্তবুছী এবং ক্বদমবুছী (পা চুম্বন), এমনকি কপালে অন্যান্য জায়গায় দেয়াও সম্মানিত সুন্নাত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম, হযরত তাবে‘য়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আমল হিসেবে বিনা প্রশ্নে প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ! (আল কারামাতু ওয়াত্ব তাক্ববীল)
দেওবন্দীদের মুফতী শফী ‘জাওয়াহিরুল ফিক্বাহার ১ম খ-ের ২০২ পৃষ্ঠায় বলেছে,
پسی مختصر بات یھی ہے کہ سنت رسول اللہ صلی اللہ علیہ و سلم اور تعامل صحابہ مین اس کی حوحد منقول ہے اسکی اسی حدپر رکہا جاءے-تو بلا شبہ دست بوسی قدم بوسی معانقہ مصافحہ سب جائز بلکہ سنت ومستحب ھی
অর্থ : সুতরাং সংক্ষিপ্ত কথা হলো- হাদীছ শরীফ এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারক দ্বারা ক্বদমবুছী উনার যে সীমা বর্ণনা করা হয়েছে, আমাদেরকে এই সীমার মধ্যেই থাকা উচিত। নিঃসন্দেহে সম্মানিত দস্তবুছী মুবারক, ক্বদমবুছী, মু‘য়ানাক্বাহ্, মুছাফাহাহ্ সবই জায়িয; বরং সম্মানিত সুন্নত মুবারক এবং মুস্তাহাব। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ ফতওয়া দেওবন্দীদের গুরু থানবী, মাহমূদুল হাসান, আব্দুল হাই লাখনবী, রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীসহ আরো অনেকে তাদের কিতাবে দিয়েছে।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফ উনার শরাহ্, ফিক্বাহ এবং ফতওয়াসহ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের দলীল দ্বারা এটাই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ক্বদমবুছী করা বা নেয়া জায়েয তো অবশ্যই; বরং আখাছ্ছুল খাছ সুন্নত মুবারক, সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম, সুন্নতে ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম। সুবহানাল্লাহ! বিশেষ করে মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে ক্বদমবুছী করা আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রত্যেকের জন্য ফরযে আইন হচ্ছেন- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে স্বীয় শায়েখ আলাইহিস সালাম উনাকে কদমবুছী মুবারক করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সেই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক দায়িমীভাবে অনন্তকাল যাবৎ পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)