শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
, ২২ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ১০ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আপনাদের মতামত
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا عَدْوٰى وَلَا طِيَرَةَ وَلَا هَامَةَ وَلَا صَفَرَ.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, অশুভ বলতে কিছু নেই, পেঁচার মধ্যে কোন কুলক্ষণ নেই এবং সম্মানিত ছফর শরীফ মাসে কোন খারাপী নেই। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৫৭৫৭, ৫৩১৬, এবং ৫৪২৫, উমদাতুল ক্বারী ৩১/৩৮২, নুযহাতুল আলবাব ৪/২৪০৯ ইত্যাদি)
কাজেই মুসলমানদেরকে আক্বীদা শুদ্ধ করতে হবে, কেননা এটাও কাফির-মুশরিকদের একটা ষড়যন্ত্র। যে মুসলমানদেরকে ছোঁয়াচে বিশ্বাস করিয়ে ঈমানহারা করা। মূলত, শরীয়তের দৃষ্টিতে ছোঁয়াচে রোগের কোন অস্তিত্ব নেই। ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করা জায়িয নেই।
ওয়াক্বিয়া থেকে শিক্ষা: ‘উত্তম ধারণা হচ্ছে উত্তম ইবাদত’
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘কোনো মুসলমান ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করা মহাপাপ।’ (কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, ‘উত্তম ধারণা হচ্ছে উত্তম ইবাদত।’ সুবহানাল্লাহ!
একজন দরবেশ লোক বহু ইবাদত করেছে বলে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, অপরাপর লোককে তুচ্ছ জ্ঞানে ঘৃনা করে তাদের প্রতি বদগুমান (খারাপ ধারণা) রাখে। নাউযুবিল্লাহ! আর এক ব্যক্তি অপর একজন মুসলমান ভাইকে নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ধারণা করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য মুবারক পাওয়ার জন্য তাদেরকে মুহব্বত করে। এই দুই ব্যক্তির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
আবার এমনও আশঙ্কা আছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দরবেশ লোকটির যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির উনার মর্যাদা সেই বদগুমান (খারাপ ধারনা) কৃত লোকটিকে দান করে উক্ত দরবেশকে স্বীয় ইবাদতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত রাখতে পারেন।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, বণি ইসরাঈল উনার একজন শ্রেষ্ঠ আবিদ (ইবাদতকারী) ব্যক্তি এবং আর একজন সর্বাপেক্ষা জঘণ্য পাপী ব্যক্তি ছিল। একদিন উক্ত আবিদ ব্যক্তি কোন একস্থানে বসে ছিলেন। এক খ- মেঘ উনার মাথার উপরে ছায়া দিচ্ছিল। এটা দেখে উক্ত পাপী ব্যক্তি মনে মনে বলতে লাগল, এই দরবেশ ছাহেব স্বীয় ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মুশাক্কাতের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার এমনি সন্তুষ্টি রেযামন্দি হাছিল করেছেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ছায়া প্রদানের জন্য এক খ- মেঘকে নির্ধারণ করেছেন। আমি এই আবিদ লোকটির পার্শ্বে বসলে উনার ছোহবতের বরকতে হয় তো মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার প্রতি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন। এই ভেবে পাপী লোকটি আবিদের পার্শ্বে গিয়ে বসলো। তাকে দেখামাত্র আবিদ লোকটি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তিরস্কার পূর্বক বললো, ‘এই লোকটি কে? কোন সাহসে আমার পাশে বসেছে? লোকটি তো বড়ই বেয়াদব। যাও, দূর হও। পাপী লোকটি হতাশ হয়ে নিতান্ত দুঃখিত মনে সেখান থেকে উঠে চলে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে মেঘ খন্ডটিও পাপী ব্যক্তির মাথার উপর ছায়া প্রদান করে চললো। সুবহানাল্লাহ!
তৎকালে যিনি বণি ইসরাঈল বংশের নবী ছিলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ওহী মুবারক করলেন যে, উক্ত ফাসিক (পাপীব্যক্তি) ও আবিদ উভয় ব্যক্তিকে বলে দিন তারা যেন উভয়ে নতুনভাবে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির আরম্ভ করে। ফাসিক ব্যক্তি যা কিছু পাপ কার্য করেছিল, অনুতপ্ত হয়ে ঈমান পরিপক্ক করার দরুণ আমি তার সমস্ত পাপ মার্জনা করেছি। আর আবিদ ব্যক্তি যা কিছু ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করেছিল, বদগুমান এবং অহংকারের কারণে তার সবকিছুই বাতিল করে দিয়েছি।’ (কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত)
এর থেকে শিক্ষা হলো; একজন মুসলমান নিজেকে সব সময় ছোট মনে করতে হবে, ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির সবকিছুই করতে হবে। অন্য মুসলমান ভাই, বোনদের প্রতি সুধারণা পোষণ করতে হবে। তাহলে তার জন্য আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হওয়া সহজ হবে।
প্রত্যেকের উচিত হবে যদি কেউ তার থেকে অপেক্ষাকৃত কম জ্ঞানী লোককে দেখে তা হলে যেন মনে করে- বেচারা মূর্খ, নির্বোধ, দোষ-ত্রুটি ও পাপ সমন্ধে তার বহু ওযর গ্রাহ্য হবে, অনেক দোষত্রুটি মার্জিত হবে। কিন্তু আমার জ্ঞান থাকাবশত: আমি সে সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত থাকবো। অতএব, এ ব্যক্তি আমার চেয়ে উত্তম। আবার নিজের তুলনায় অধিক জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেখলে মনে করবে, তিনি এমন বিষয়ের জ্ঞান রাখেন, যা আমি জানি না। কাজেই তিনি আমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। নিজের চেয়ে অধিক বৃদ্ধ লোককে দেখলে মনে করবে, তিনি আল্লাহ পাক উনার ইবাদত আমার অপেক্ষা অনেক বেশি করেছেন, অতএব তিনি আমার থেকে শ্রেষ্ঠ। আর কোন অল্প বয়স্ক বালককে দেখতে পেলে মনে মনে ধারনা করবে, আমি দীর্ঘদিন বেঁচে বহু পাপ কাজ করেছি। কিন্তু এ নিষ্পাপ বালকটি এখন পর্যন্ত পাপ কাকে বলে জানেই না। অতএব সে আমার থেকে অনেক ভালো। মূলত: তাছাউফের সমস্ত কিতাবেই এ শিক্ষাই দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে কাফির-মুশরিকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার, মুসলমানদেরকে মুহব্বত করার, সুধারণা পোষণ করার, অহংকার, ফখর, রিয়া ও মুনাফেকিসহ সমস্ত বদস্বভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করেন। আমীন!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
১০ ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া একটি ভয়াবহ চক্রান্ত
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তাহলেই রাজধানী হবে সমস্যামুক্ত
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুলুমতন্ত্র থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করুন
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতিদের যেভাবে উস্কানি দিচ্ছে এনজিওগুলো
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাও একসময় মুসলমান ছিলো
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাবার খাবেন কোথায়?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের রক্তাক্ত ইতিহাস, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জায়নবাদী ইহুদী পরিকল্পনার গোপন দস্তাবেজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মীরা কখনোই চায়নি, এখনও চায় না মুসলমানদের উন্নতি
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ স্টাইলের শাসকগোষ্ঠী দিয়ে উন্নয়ন নয়, লুটপাটই হবে
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুসলমানরা তাদের সন্তানদের কি শেখাচ্ছে, কি শেখানো উচিত? (২)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)