লোকসানের অজুহাতে স্থবির করে রাখা হচ্ছে সার কারখানা, চিনি ও পাটশিল্পের মতো অর্থকরী খাতগুলোকে। বিপরীতে বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা।
, ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
অথচ যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে এ খাতগুলোকে চূড়ান্ত লাভজনক খাতে পরিণত করা সম্ভব।
সরকারের উচিত, দেশের অর্থকরি খাতগুলোকে পুনরায় সচল করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দেয়ার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার আমদানিনির্ভরতা কমানোর কথা বলছে। অথচ যেসব খাতের বিকাশ হলে আমদানিনির্ভরতা হ্রাস করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যেত, সেই রাষ্ট্রায়ত্ত খাত/শিল্পগুলোকে নিদারুণ অবহেলার মধ্যে বন্ধ করে ফেলে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো, চিনি, সার ও পাটশিল্প।
(১)গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে সার আমদানি না করে বন্ধ সার কারখানাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করা এবং উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, দুই দশক আগেও স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশ থেকে সার রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে সার কারখানাগুলোর বয়স বাড়তে থাকলেও আধুনিকায়নে অবহেলা করা হয়েছে। দিন দিন বেড়েছে উৎপাদন খরচ। ফলে বেশির ভাগ সার কারখানা বছরে ৪-৭ মাস বন্ধ থাকছে। এই সুযোগে বিদেশ থেকে প্রতি বছর ৫ হাজার কোটি টাকার সার আমদানি করা হচ্ছে। ফলে সারের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারিভাবে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৬ টাকা থেকে ৩৭.৫% বৃদ্ধি করে ২২ টাকা করা হয়েছে। ডিলার পর্যায়ে ১৪ টাকা থেকে ৪২.৮% বৃদ্ধি করে ২০ টাকা করা হয়েছে। যাতে কৃষকের বাড়তি ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। কৃষকের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যপণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অথচ সার আমদানিতে যত টাকা খরচ হচ্ছে তার অর্ধেক টাকাও খরচ করে যদি দেশের সার কারখানাগুলোর উন্নয়ন করা যেত তাহলে বছরে ৪০ লাখ টনেরও বেশি সার উৎপাদন সম্ভব ছিলো। এছাড়া, আমদানি খরচের তুলনায় দেশীয় সার কারখানাগুলোর উৎপাদন খরচ কয়েক গুন কম। যমুনা ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেডের (জেএফসিএল) কারখানা এক দিন বন্ধ থাকলে ১৭০০ টন সার উৎপাদন কম হয়। এই পরিমাণ সার উৎপাদনে জ্বালানি ও কাঁচামালের খরচ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ সব ধরনের খরচ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যয় হয় দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে, ১৭০০ টন সার আমদানিতে উৎপাদনের খরচের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।
(২)
সারের মতো একই পরিস্থিতির মুখে দেশের চিনি শিল্প। বর্তমানে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও তা নাগরিক সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি নতুন করে চিনির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে যার দাম ছিল ৯৫ টাকা। চিনির এই সংকট এবং দামবৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেয়া হলেও এর প্রধান কারণ বেসরকারি আমদানিকারকদের ওপর একক নির্ভরশীলতা। দেশে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো একসময় বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টন চিনি উৎপাদন করত, যা বাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করত।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চিনিকলগুলোর আধুনিকায়ন করা হয়নি। সরকারি নজরদারি দুর্বল থাকায় চিনিকলগুলো হয়ে উঠেছে দুর্নীতি-অনিয়ম ও লুটপাটের আখড়া। ক্রমাগত লোকসানী হতে থাকে চিনিকলগুলো। ২০২০-২১ অর্থবছরে চিনিকলগুলোর লোকসানীর পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এরই মধ্যে সরকার ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের মধ্যে ৬টির উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় চিনিকল বন্ধ থাকায় দেশীয় উৎপাদন কমে ৩০ হাজার টনে নেমে এসেছে। কৃষকেরা আখ চাষ বাদ দিয়ে অন্য আবাদে চলে গেছে। এতে দেশের চিনি খাত প্রায় শতভাগ আমদানিভিত্তিক বেসরকারি কলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে চিনির বাজারের ওপর সরকারের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। চিনির অতিমূল্যে ভুগছে সাধারণ মানুষ।
অথচ বন্ধ হওয়া চিনিকলগুলো চালু করে যদি যথাযথ আধুনিকায়ন করা হয় তাহলে দেশের বাৎসরিক চাহিদার শতভাগ চিনি দেশেই উৎপাদন সম্ভব এমনকি রফতানিও সম্ভব।
(৩)
সার ও চিনির চাইতে সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি দেশের পাট শিল্পের। বিএনপি চারদলীয় জোট সরকার যখন বিশ্বব্যাংকের টোপ গিলে দেশের পাটখাতকে ধ্বংস করেছে তখন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পাটশিল্প পুনরায় লাভজনক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। লোকসানের কথা বলে ২৫ টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে ২০২০ সালের জুলাই মাসে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেয় সরকার। বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় আধুনিকায়ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন করে চালুর ঘোষণা দেওয়া হলেও দ্ইু বছরে তা বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাংলাদেশে যে মানের পাট উৎপাদন হয় তা বিশ্বের কোনো দেশে হয়না। সেক্ষেত্রে দেশের পাটকলগুলো যদি একেবারেই বন্ধ করে না দিয়ে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সেগুলো পুনরায় সচল করতো, উন্নত যন্ত্রপাতির সন্নিবেশ ঘটাতো, দুর্নীতি ও লুটপাট নির্মূল করে রাষ্ট্রীয় নজরদারি কঠোর করতো তাহলে পূর্বে যেভাবে দেশের অর্থনীতিকে পাটশিল্প শক্তিশালী করেছিলো সেই স্বর্নালী যুগ আবারও ফিরে আসতো।
কিন্তু বাংলাদেশে শিল্পখাত বন্ধ করে দেয়াতেই সমাধান দেখে থাকে সরকার। যা আত্মঘাতি তো অবশ্যই পাশাপাশি দেশের অথনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে অন্যতম বাধা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের অর্থকরী খাতগুলো পরিপূর্ণভাবে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। যার ভয়াবহ প্রভাব এসে পড়বে জনগণের উপর। বিদেশিদের উপর নির্ভরশীল ও জিম্মি হয়ে পড়বে দেশ।
আমরা মনে করি, মাথা ব্যাথা মানেই মাথা কেটে ফেলা নয়। সরকারের উচিত হবে, শুধু সার, পাট কিংবা চিনি শিল্পই নয় বরং দেশের সকল অর্থকরী খাতগুলোর উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বন্ধ হয়ে যাওয়া সার কারখানা, চিনিকল ও পাটকলগুলোর যথাযথ আধুনিকায়ন করে সেগুলো অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এতে করে যে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে তাই নয় পাশাপাশি আসন্ন বৈশ্বিক মন্দা থেকে দেশকে রক্ষায় এগুলো গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করবে। ইনশাআল্লাহ!
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)