লালমনিরহাটের ১৪শ বছর আগের ঐতিহাসিক ‘হারানো মসজিদ’ (১)
, ১১ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ১৫ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) স্থাপত্য নিদর্শন
লালমনিরহাটের ১৪শ বছর আগের ঐতিহাসিক ‘হারানো মসজিদ’ (১)
বাংলায় মুসলিম আগমনের প্রসঙ্গ এলে সবার আগেই আসে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজির কথা। তবে তারও আগে একাদশ শতাব্দীতে সুফিদের আগমন ঘটেছিল। তবে বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমনের প্রারম্ভিক ইতিহাসের রাজসাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন নিদর্শন ‘হারানো মসজিদ’। মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় ১৪শ’ বছর আগে, ৬৯ হিজরী, ৬৯০ খ্রিস্টাব্দে । রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় মসজিদটির অবস্থান।
মসজিদটি কারা নির্মাণ করেছে তা নিয়ে প্রতœতাত্ত্বিক ও গবেষকরা অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। এই অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে লালমনিরহাটের ‘হারানো মসজিদের’ তথ্য তুলে ধরা হবে।
প্রাচীনতম অববাহিকাগুলোর একটি নিদর্শন:
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রাম। এই গ্রামেই মিলেছে এক অত্যাশ্চর্য মুসলিম নিদর্শন। প্রায় ১৪০০ বছর আগে এই গ্রামেই নির্মিত হয়েছিল একটি মসজিদ। ধারণা করা হচ্ছে, এই মসজিদটিই এখন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো মুসলিম নিদর্শন। কিন্তু এত বছর আগে এখানে মসজিদ কি করে এলো তা প্রাথমিক অবস্থায় প্রতœতাত্ত্বিকদেরও অবাক করে দিয়েছিল।
ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম অববাহিকাগুলোর একটি। তাই এই অববাহিকায় ৬৯ হিজরী বা ৬৯০ খ্রিস্টাব্দে একটি মসজিদ নির্মাণের ঘটনা বিস্ময় জাগানিয়া হলেও একেবারে অস্বাভাবিক নয়।
নির্মাণ হয়েছে কাদের মাধ্যমে?
সহস্র বছরের পুরনো মসজিদের অস্তিত্ব সাড়া ফেলেছিল রামদাস গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। যেখানে মসজিদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সেখানেই তারা গড়ে তুলেছে নতুন আরেকটি মসজিদ। এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে ‘হারানো মসজিদ’। স্থানীয় অধিবাসী এবং ‘হারানো মসজিদ কমিটি’র সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির তথ্য অনুযায়ী, কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া মসজিদটি নির্মাণ করেছেন একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যিনি এই অঞ্চল দিয়ে চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। চীনের বিস্মৃত কোয়াংটা নদীর ধারে কোয়াংটা শহরে উনার নির্মিত মসজিদ ও মাজার শরীফ রয়েছে। সেই ছাহাবী উনার নাম মুবারক হযরত আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
যেভাবে আবিষ্কৃত হয় ঐতিহাসিক মসজিদটির অস্তিত্ব:
বর্তমানে হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যে স্থানে অবস্থিত, সেই স্থানটি এক সময় পরিচিত ছিল মোস্তের আড়া বা মজদের আড়া নামে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, স্থানটি টিলার মতো ছিল। ওখানে কেউ যেত না। তবে অনেকেই আগরবাতি, মোমবাতি, ফুল, ধূপ ইত্যাদি ওই স্থানে রেখে আসত। এখানে মসজিদ না অন্য কিছু আছে কিছুই জানত না তারা।
উল্লেখ্য, স্থানীয় ভাষায় আড়া শব্দের অর্থ হলো জঙ্গলময় স্থান। দীর্ঘদিনের পতিত এই জঙ্গলে স্থানীয় লোকজন হিংস্র জীবজন্তু, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করত না।
জানা যায়, এই গ্রামে বর্তমানে যারা বাস করছেন, তাদের পূর্বপুরুষরা ২০০ বছর আগে এখানে বসতি শুরু করেন। হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যা আগে আড়া নামে পরিচিত ছিল, এক সময় তার মালিক ছিলেন পচা দালাল নামে এক ব্যক্তি। পরে তার কাছ থেকে এই আড়া কিনে নেন তৎকালীন স্থানীয় ইয়াকুব আলী। এই কেনা-বেচাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল আনুমানিক ১৯৪৯ সালে। পরে উত্তরাধিকার সূত্রে জায়গাটির মালিক হন নবাব আলী। হারানো মসজিদ আবিষ্কারের পর তিনি জায়গাটা হারানো মসজিদ কমপ্লেক্সের নামে দিয়ে দেন।
রহস্য অনুসন্ধানে গবেষকরা:
এই মসজিদের রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা আরও জানতে পারেন, মসজিদটি যেখানে ছিল সেই মজদের আড়ায় চাষাবাদ করার জন্য স্থানীয় লোকজন জমি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেন। সে লক্ষ্যে মাটি খোঁড়া শুরু হয় ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে। টিলাটি সমতল করার জন্য খোঁড়া শুরু হলে এখানে প্রাচীনকালের তৈরি প্রচুর ইট পাওয়া যায়। যে ইটগুলোতে অংকিত ছিল নান্দনিক ফুল। এসব দেখে স্থানীয় লোকজন ধারণা করে, পুরনো কোনো জমিদার কিংবা রাজা-বাদশাহর বাড়ি হয়তো এখানে ছিল। এ কারণে তারা ওইসব ইট নিয়ে কোনো প্রকার সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। যে যার মতো ভাঙা ইটের টুকরো নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গেছে এবং বেশিরভাগ ইট নিজেদের বাড়িঘরের কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু একটা ঘটনায় পাল্টে যায় পুরো ঘটনাচক্র।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৭)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাজীগঞ্জ দুর্গ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৬)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সুনামগঞ্জে কালের সাক্ষী শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পাগলা বড় মসজিদ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
৫০০ বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন বাঘা শাহী মসজিদ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৫)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০৩)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০২)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় (পর্ব ০১)
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৪০০ বছরের আলোচিত প্রাচীন স্থাপত্য তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
১২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)