রোগীদের জিম্মি করে রাখছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। দিচ্ছে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও মনগড়া স্বাস্থ্য রিপোর্ট। দেশীয় চিকিৎসায় আগ্রহ হারাচ্ছে জনগণ। দেখার কি কেউ নেই?
, ১৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মন্তব্য কলাম
উল্লেখ্য, ‘যত টেস্ট তত টাকা’, এই কমিশন বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই চলছে একশ্রেণীর ডাক্তারের অর্থ উপার্জনের বেপরোয়া কর্মকা-। প্রেসক্রিপশনে যত বেশি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার বিষয় উল্লেখ থাকবে, ততই কমিশন পাবে সে। ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার পায় শতকরা ৩০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন। একইভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী ভর্তি, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ প্রেসক্রাইব, অপারেশন নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লাইফ সাপোর্টে পাঠানো, কেবিনে রোগী ধরে রাখাসহ লাশ হিসেবে হস্তান্তর পর্যায়ের নানা ধাপেই কমিশন লেনদেন হয়।
একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার অসংখ্য নজির রয়েছে। পুরুষের পরীক্ষা রিপোর্টে তুলে ধরা হয় মেয়েলি রোগের বিবরণ। আবার উল্টো চিত্রও আছে। এসব রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়ে। তা সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণীর ডাক্তারের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যথেচ্ছ টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। অভিযোগ তুলেও এসবের প্রতিকার মিলছে না। ডাক্তাররা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরবরাহকৃত সিøপে টিক মার্ক দিয়ে দেয় কোন্ কোন্ টেস্ট করাতে হবে। রোগী নিজের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই টেস্ট করালে ডাক্তার সে রিপোর্ট গ্রহণ করে না। ডাক্তার তার নির্ধারিত সেন্টার থেকে আবার একই টেস্ট করিয়ে আনতে চাপ দেয়। ওই সেন্টার তাকে কমিশন দেয়। কমিশন নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল চিকিৎসা মেলে। পরীক্ষার ফি বাবদ ইচ্ছামাফিক টাকা-পয়সা আদায় করা হচ্ছে। একই ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য একেক প্রতিষ্ঠানে ধার্য আছে একেক ধরনের ফি। নিয়ম আছে রেট চার্ট প্রতিষ্ঠানের দর্শনীয় স্থানে লাগিয়ে রাখার। কেউ সে নিয়ম মানছে না। বেশি টাকা দিয়ে টেস্ট করিয়েও সঠিক রোগ নির্ণয়ের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। রোগী আকর্ষণের জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় বিশেষজ্ঞদের তালিকার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হলেও তাদের অধিকাংশকেই পাওয়া যায় না। নাম ব্যবহার বাবদ মাসিক ফি দেয়া হয় ওইসব ডাক্তারকে। ডাক্তাররা এখন সামান্য জ্বর, ঠান্ডা, কাশির জন্যও ডজন ডজন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা লিখে দিচ্ছে। প্রয়োজন না থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করিয়ে ছাড়ে তারা। সুযোগ থাকলে অপারেশনের মুখোমুখি করিয়ে লাইফ সাপোর্টের পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয় রোগীকে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডাক্তারের জন্য রয়েছে লোভনীয় কমিশন।
এ কমিশন বাণিজ্যের প্রভাবে চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গরিব মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে আরো নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অপারেশন, ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি, অর্থোপেডিক রোগীদের ফিজিওথেরাপি, কিডনি রোগীদের ডায়ালিসিসের ক্ষেত্রেও আলাদা কমিশন নির্ধারণ করা আছে।
প্রসঙ্গত, টেস্ট বাণিজ্যের প্রভাবে চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি ওষুধ লেখার জন্য আগে থেকেই ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে কমিশনের নামে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা নেয় অনেক চিকিৎসক। ওষুধ কোম্পানি এখন প্রতিযোগিতা করে ডাক্তারের ঘরে মশলা, ফল, পোশাক, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বিদেশ ভ্রমণের যাবতীয় খরচও দেদারছে দিচ্ছে।
এদিকে এগুলো ছাড়া আছে হাসপাতালে রোগী পাঠানোর জন্য কমিশন। এক্ষেত্রে আইসিইউ বা সিসিইউয়ে রোগী পাঠানোর জন্য রয়েছে বিশেষ কমিশন। আছে অপারেশনের কমিশনও।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান চিকিৎসা খাতে এসব অসৎ চিকিৎসকদের কারণে ভয়াবহ সঙ্কট বিরাজ করছে। দেশের সাধারণ জনগণ দেশীয় চিকিৎসার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এসব কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। তন্মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই চলে যাচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার উপরে। অথচ চিকিৎসকদের টেস্ট ও কমিশন বাণিজ্যের বিষয়টি অনৈতিক ও পেশাগত বিধিমালার পরিপন্থী। চিকিৎসা সেবায় সম্পৃক্ত ব্যক্তি যেসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত সেসব প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। চিকিৎসকদের কমিশন গ্রহণ একটি অন্যায় এবং অনৈতিক কাজ। অথচ এটি মোকাবেলার জন্য সরকারের মনিটরিং নেই বললেই চলে। এতে করে সরকার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে।”
বলাবাহুল্য, স্বাধীনতাউত্তর গণতান্ত্রিক সুশাসক দাবীদার সব সরকারই সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ কার্যকর করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অবহেলা করেছে, করছে। জনগণের প্রতি সব গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্বহীনতা এবং দুর্নীতি প্রবণতাই এর মূল কারণ। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ গণতান্ত্রিক শাসন কখনোই জনগণের কল্যাণের জন্য নয়।
এক্ষেত্রে জনগণ শুধু শোষিত আর বঞ্চিতই হয়ে আসছে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা যালিমও হয়ো না এবং মযলুমও হয়ো না।”
কাজেই সরকারের উচিত- প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, তেমনি জনগণেরও উচিত নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। তাই চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য চিকিৎসার বাণিজ্যিক সেন্টারে না গিয়ে সত্যিকারের চিকিৎসাকেন্দ্রে বা হাসপাতলে যাওয়া। আর এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ঢাকার প্রাণকেন্দ্র রাজারবাগে অবস্থিত ‘আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতাল’। সকলের উচিত- এখানে এসে সত্যিকারের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উন্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
০২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহম্মাদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
এদেশে যারা পহেলা বৈশাখের নামে বাঙ্গালীয়ানার হুজ্জোতে মেতে উঠে তারাই আবার ইংরেজী থার্টি ফার্স্ট নাইটের অশ্লীলতায় মজে থাকে। পহেলা বৈশাখের বাঙ্গালীয়ানা এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটের খ্রীষ্টিয়ানা কোনটাই ৯৮ ভাগ মুসলমানের এদেশে চলতে পারে না। পশ্চিমা বিজাতীয় খ্রিষ্টানদের অপসংস্কৃতি থার্টি ফার্স্ট নাইট এদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই বিজাতীয় সংস্কৃতি সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী তথা দেশের যুবসমাজের চরিত্র বিধ্বংসী।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে- সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কতিপয় ফযীলত মুবারক বর্ণনা
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও বন্ধ করলে যা লাভ হবে চালু রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হবে ৫৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের দাবী অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হোক কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে পরিবেশ উপদেষ্টা প্রমাণ করছে
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সুন্দরবন ধ্বংসে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে ক্রমেই ছোট হচ্ছে সুন্দরবন, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য আমাদের পরম প্রয়োজনীয় সুন্দরবন, এই সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে ইনশাআল্লাহ
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে যাচ্ছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাড়ছে পরকীয়া, বাড়ছে তালাক সমাজে বাড়ছে কলহ-বিবাদ, শিথিল হয়ে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন দ্বীনী মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ।
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজও বেশি বেশি করতে হবে।
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পেয়াজ, সরিষা, ধান এমনকি ভরা মৌসুমে আলুর নিম্নমানের বীজে মহা ক্ষতির মুুখে চাষিরা। বহুদিন ধরে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজে প্রবঞ্চিত হবার পর এখন খোদ সরকারের প্রণোদনার বীজেও প্রতারিত কৃষক। কৃষিপ্রধান দেশে কৃষক ও কৃষিপণ্য নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা আর কতদিন চলবে?
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানের সংজ্ঞা কতজন মুসলমান জানে? প্রকৃত মুসলমান না হয়ে শুধু বাহ্যিক মুসলমান দাবি কী অন্যায় নয়? মুসলমান মাত্রই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে হবে।
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা। সরকারের উচিত- দ্রুত দেশের ইন্টারনেট জগতে কন্টেন্ট ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের ইন্টারনেট আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুশাসন প্রচার প্রসার করা।
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)