রেলের কয়লা ইঞ্জিন এখন ইতিহাস
, ১৬ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৭ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পাঁচ মিশালী
নীলফামারির সৈয়দপুর রেল কারখানার প্রবেশ মুখে চোখে পড়বে বাংলাদেশে আসা প্রথম কয়লাচালিত লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিনের। ইংল্যান্ডের ভলকান কোম্পানির তৈরি এই ইঞ্জিনসহ একই ধরনের তিনটি ইঞ্জিনের ঠাঁই হয়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার প্রদর্শনী ইয়ার্ডে। কারখানার দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়কের অফিসের সামনে সবুজ ঘাসের ওপর রাখা আছে ব্রিটিশ আমলের কয়লাচালিত এসব ইঞ্জিন। রেলের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই ইঞ্জিনগুলো।
জানা গেছে, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর দেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই শহর অনেক আগে থেকে প্রসিদ্ধ হলেও অনেকের কাছে রেলের শহর হিসেবে বেশি পরিচিত। ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর সৈয়দপুরে নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন এবং বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ রেল কারখানার ২৬টি উপ-কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন। রেলের ছোট বড় যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সব কাজ করা হয় এই কারখানায়। রেলওয়ে সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনে দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কারখানা পরিদর্শন করেন।
সৈয়দপুর রেল কারখানা ঘুরে দেখা মেলে ইতিহাসের সাক্ষী কয়লাচালিত ইঞ্জিনের। কারখানা চত্বরে যে তিনটি লোকোমোটিভ স্থান পেয়েছে তার মধ্যে একটি ন্যারোগেজ ইঞ্জিন, একটি কয়লাচালিত ব্রডগেজ এবং অন্যটি ডিজেলচালিত মিটারগেজ ইঞ্জিন।
কয়লাচালিত ন্যারোগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন সিএস ১৫। এটি তৈরি করা হয় ১৯৩৬ সালে। বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের অনেক পরে। ইঞ্জিনটি নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের ডব্লিউজি বাগলান লিমিটেড নামের একটি কারখানা। ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা আর ১৯ ফুট দীর্ঘ ইঞ্জিনটির ওজন ১১.৭৬ টন। খুলনা-বাগেরহাট রুটে কয়লাচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করত। সর্বশেষ ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলাচল করেছে এই কয়লাচালিত ন্যারোগেজ স্টিম লোকোমোটিভ। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ন্যারোগেজ ইঞ্জিনের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
রেলের ইতিহাস বহন করা আরেকটি ইঞ্জিন হলো কয়লাচালিত ব্রডগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এসজিসি-জেড ২৪০। এটি ৫৩ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। ১৯২১ সালে তৈরি হয়েছিল। এ ইঞ্জিন দিয়ে পাকশী রুটে ট্রেন চলাচল করত। ১৯৩৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী ছিল এ ইঞ্জিন। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রেলের ইঞ্জিনেও আসতে থাকে পরিবর্তন। কয়লাচালিত ইঞ্জিনের পরিবর্তে আসতে থাকে ডিজেলচালিত মিটারগেজ ইঞ্জিন।
সৈয়দপুর রেল কারখানার চত্বরে ডিজেলচালিত একটি মিটারগেজ লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এমএইচজেড-৮ (৩৩৩২) রাখা আছে। এটি ৩৮ ফুট লম্বা। এ ইঞ্জিনটি ১৯৮২ সালে তৈরি হয়েছিল। ইঞ্জিনটি দিয়ে পার্বতীপুর-সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে ট্রেন চলাচল করত বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এ ইঞ্জিন চলাচল করেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ১৮৬২ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেলসেবা চালুর পরবর্তী শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ইঞ্জিনগুলো বাংলাদেশের রেলওয়েতে সেবা দিয়ে এসেছে। ১৯৫৩ সালে কানাডার তৈরি ‘ইএমডি বি-১২’ মডেলের ২০০০ শ্রেণির মিটার গেজ লোকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ডিজেল লোকোর সূচনা হয় এবং রেলে ডিজেল ইঞ্জিনের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়তে থাকে। তবে আধুনিকতার দাপটে ধীরে ধীরে কমতে থাকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার। সর্বশেষ বাংলাদেশে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয় ১৯৮৪ সালে।
সূত্রমতে, বর্তমানে ডিজেল লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হয় বাংলাদেশের রেল পরিবহন ব্যবস্থায়। ডিজেল লোকোর মধ্যে ডিজেল ইলেকট্রিক ও ডিজেল হাইড্রোলিক দুই ধরনের ইঞ্জিন রয়েছে দেশে। গেজ অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্রডগেজ, মিটারগেজ ইঞ্জিনের ব্যবহার রয়েছে। আর ন্যারোগেজ রেলপথের ব্যবহার বর্তমানে না থাকায় সচল নেই কোনো ন্যারোগেজ ইঞ্জিন।
এছাড়া ২০২০ সাল পর্যন্ত মিটারগেজ ও ব্রডগেজ মিলিয়ে বাংলাদেশে আমদানি করা হয় মোট ৪৬৫টি ডিজেল ইঞ্জিন। এদের অধিকাংশ ডিজেল ইলেকট্রিক, তবে ৮০টি লোকোমোটিভ ডিজেল হাইড্রোলিক। ৪৬৫টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৩৩৮টি মিটারগেজ ও ১২৭টি ব্রডগেজ। সব ডিজেল-হাইড্রোলিক লোকোমোটিভ হাঙ্গেরির গ্যাঞ্জ-ম্যাভেজ কোম্পানি তৈরি করেছে। ডিজেল-ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করেছে তার মধ্যে জিএমডি, অ্যালকো, এম এল ডব্লিউ, হুন্দাই রোটেম ও বানারাস লোকোমোটিভ ওয়ার্কস উল্লেখযোগ্য।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ডিভিশনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট (ডিএস) সাদেকুর রহমান বলেন, সর্বশেষ বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৮৪ সালে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয়। এরপর বাংলাদেশে আর কোনো স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয়নি। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ আমলের এসব ইঞ্জিন পরিবর্তন হয়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে আধুনিক সব ইঞ্জিন। যেহেতু এই কারখানাটিতে এক সময় স্টিম লোকোমোটিভ মেরামত করা হত, আমরা সেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে এই লোকোমোটিভ এখানে রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, এটি দেখার জন্য অনেকেই দেশের বাইরে থেকে কারখানায় আসেন এবং কারখানার অন্যান্য বিষয়, লোকোমোটিভ দেখে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান। সাধারণ মানুষ যদি আগ্রহী হন, তারা বিভিন্ন সময়ে এখানে এসে এই লোকোমোটিভগুলোসহ আমাদের রেলওয়ে জাদুঘরে ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত মালামাল ও রক্ষিত যন্ত্রপাতি পরিদর্শন করতে পারেন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগের’ সন্ধান!
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির গর্ভে বিজ্ঞানীদের নজর
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে সমস্ত মারাত্মক ক্ষতি করে?
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের বসবাস বা দ্বীন ইসলাম প্রচার নিষিদ্ধ করে রেখেছে যে সমস্ত বিধর্মী রাষ্ট্র
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
২০২২ সালে সৌরজগতের বাইরে মিলেছে ২০০ গ্রহের সন্ধান
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম দেশ সিয়েরা লিওনে যেভাবে দ্বীন ইসলাম ও দ্বীনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আবাসন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপিয়ানরা
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হেঁটে যে রাস্তা আজও শেষ করতে পারেনি কেউ
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
লাওসে মুসলমানদের জীবনধারা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাতারের মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় শত শত চিহ্ন
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (২)
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রহস্যময় পুরুষ ইলিশ! কেন তেমন দেখা মেলে না (১)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)