রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি
, ২০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ক্যান্টিন
ওলীআল্লাহগণ উনাদের প্রতিটি কাজ হিকমতপূর্ণ। জাহিরীভাবে যতটা বোঝা যায়, হাক্বিকতে তার চেয়েও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার মহান মুজাদ্দিদ, গাউছুল আ’যম, ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হিজরী ১৪২৭ সনে (২০০৭ খৃঃ) মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতিমখানার অধিনে একটি ক্যান্টিন শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্যান্টিন শরীফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন কৌতুহল জাগেনি বরং সকলে এই ক্যান্টিন শরীফকে মাদরাসার ছাত্র, আমীল ও দরবার শরীফ উনার মধ্যে আগতদের সুবিধার জন্য চা-নাস্তা খাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত বলেই ধারণা করে নিয়েছিল। কিন্তু চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত এই ক্যান্টিন শরীফ যে একসময় সুপার শপে পরিণত হবে, এর অধীনে আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হবে এবং সেখান থেকে সারা বিশ্বে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক প্রচার প্রসারের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালিত হবে- তা ছিল সকলের চিন্তার উর্ধ্বে। চা-নাস্তা থেকে শুরু হওয়া এই ক্যান্টিনে খাবারের আইটেম ও ক্রেতাদের সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে বড় হতে হতে এখানে যুক্ত হয় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, মুদি-মনোহরি, কাঁচা বাজার-মাছ গোশত, স্টেশনারী, জরুরী ওষুধপত্র, চিকিৎসাসেবা, তৈজসপত্র, গৃহসামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক ও মোবাইল। এছাড়া এখানে যুক্ত হয়েছে সুন্নতি লেবাস বা জামা কাপড় ও টেইলারিংয়ের একটি ইউনিট (দর্জিখানা)। শুরুতেই বলা হয়েছে- ওলীআল্লাহগণ উনাদের প্রতিটি কাজ হিকমতপূর্ণ। ১৪৩৯ হিজরীতে যামানার মহান মুজাদ্দিদ হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ইযাজতক্রমে কুতুবুল আলম, বাহরুল ইলম, নকশায়ে হায়দার সাইয়্যিদুনা হযরত শাফিউল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি এই ক্যান্টিন শরীফ উনার পরিধি ও ক্রেতাদের সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যান্টিন শরীফকে ৩টি বিভাগে বিভক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে নামকরণ হয়েছিল- ১. সুন্নত প্রচার কেন্দ্র (সুন্নতি লেবাস ও সুন্নতি সামগ্রী), ২. ক্যান্টিন (খাওয়া-দাওয়ার অংশ) এবং ৩. স্টেশনারী (মুদি মনোহরি)। পরবর্তীতে পরিবর্তন হয়ে নামকরণ হয়- ১. আন্তর্জাাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্র, ২. বরকতময় পানাহার কেন্দ্র (খাওয়া দাওয়ার অংশ) এবং ৩. তাক্বওয়া হাছিল কেন্দ্র (মুদি-মনোহরি)। এখানে ৩টি বিভাগের পৃথক পৃথক কিছু বিশেষত্ব রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্র:
১৪২৭ হিজরী সনে ক্যান্টিন শরীফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যে কতোটা সূদূরপ্রসারী ছিল তা কিছুটা অনুধাবন করা যাচ্ছে ক্যান্টিন শরীফ উনার অধীনে আন্তর্জাতিক সুন্নত প্রচার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর। এখান থেকেই সারা দেশসহ, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। আমাদের যিনি ঈমান উনার মূল, যিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি শাহিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা পরিধান করেছেন (সুন্নতি লেবাস), যা ব্যবহার করেছেন (ব্যবহার্য দ্রব্য সামগ্রী, তৈজসপত্র ইত্যাদি), সুন্নতি প্রশাধনী ইত্যাদি দ্রব্য সামগ্রী এখানে পাওয়া যায়। এর মধ্যে সুন্নতি লেবাস (টুপি, কোর্তা, ইযার, সেলোয়ার, পাগড়ি, জ্ব্বুা, কেনায়া) তৈরি বা সেলাইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দর্জিখানা। এছাড়া সুন্নতি তৈজস পত্র (কাঠের প্লেট, কাঠের বাটি, কাঠের লবণদানি ইত্যাদি) তৈরির জন্য নিজস্ব প্রযুক্তিতে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এখানে প্রতিটি সুন্নতী সামগ্রীর ‘সুন্নতী’ হওয়ার পক্ষে পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে সুষ্পষ্ট দলীল রয়েছে।
২. বরকতময় পানাহার কেন্দ্র:
পানাহার কেন্দ্রের মূল আকর্ষণ হচ্ছে সুন্নতি খাবার। ১৪শত বছর আগে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, শাহিদুন নবী, মুত্তালা’ আলাল গইব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেসকল পবিত্র খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেছেন সেসব খাবার এখানে প্রস্তুত করা হয়। উল্লেখযোগ্য কিছু সুন্নতি খাবার হচ্ছে- তালবীনা, নাবীয, হায়েস, হারীছা, সিরকা ইত্যাদি।
৩. তাক্বওয়া হাছিল কেন্দ্র:
নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পন্যের সমাহার। চাল-ডাল, মসলা, মাছ গোশত, শাক সবজি, সাবান, প্রশাধনীসহ পরিবারের প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতে যা কিছু প্রয়োজন অর্থাৎ সহজ কথায় এটি একটি সুপার শপ। এখানে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- কাফির মুশরিকদের মুখাপেক্ষি না হয়ে সম্পূর্নরূপে মুসলমানদেরটা গ্রহণ করা হয়। বিদেশী পন্যের বিপরীতে সম্পূর্ণ দেশী পন্য অগ্রাধিকার দেয়া হয়। প্রাণ-আরএফএল, স্কয়ার, ইউনিলিভার, কাদিয়ানী-বাহাই, ওহাবী-সালাফীদের পন্য রাখা হয়না। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সয়াবিন তেলের বিপরীতে স্বাস্থ্যকর খাঁটি সরিষার তেল, সানফ্লাওয়ার তেল, রাইসব্রান তেল ও সুলভ মূল্যে সুপার তেল, পাম তেল পাওয়া যায়। বাজারের মসলার ভেজাল এড়াতে উন্নতমানের হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা ইত্যাদি অনুসন্ধান করে কিনে নিজস্ব তত্বাবধায়নে ভাঙ্গানো হয়। চট্টগ্রাম থেকে বাছাই করে মুসলিম দেশ থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন মসলা আনা হয়। বাজারে যখন বিষাক্ত হোয়াইট পয়জন খ্যাত সাদা চিনির প্রাদুর্ভাব, তখন তাক্বওয়া হাছিল কেন্দ্রে রাখা হয় সুমিষ্ট ও স্বাস্থ্যকর দেশী লাল চিনি। খবরের কাগজে যখন বিদেশি গুড়া দুধে মাত্রাতিরিক্ত শিশার রিপোর্ট প্রকাশ পায় তার আগে থেকেই আমদানীকৃত গুড়াদুধ (দেশে প্যাকেটজাত) রাখা হয়না, পক্ষান্তরে দেশি মিল্কভিটা গুড়াদুধ রাখা হয়। এছাড়া এখানে যে মধু রাখা হয় তা সরাসরি সুন্দরবনের হরিণ গড় থেকে আনা খলীসা মধু। নিজস্ব খামার থেকে আনা হয় খাঁটি তরল দুধ। সম্পূর্ণ নিজস্ব জমিতে উৎপাদিত শাক, সবজি, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি পাওয়া যায়। সবসময় বিভিন্ন প্রকার খেজুর পাওয়া যায়।
মহিলা ক্যান্টিন:
সাইয়্যিদুনা হযরত উম্মুল উমাম আম্মাজী ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি মহিলাদের সুবিধার জন্য আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠা করেন মহিলা ক্যান্টিন। সুবহানাল্লাহ!
স্বাভাবিকভাবেই মহিলাদের কিছু বিশেষ পণ্য থাকে যা পর্দা রক্ষা করেই কিনতে বা বেঁচতে হয়, সেসব পণ্যের জন্য মহিলাদের এখন আর তেমন কোন বেগ পেতেই হয়না । এই উদ্যোগ ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে। পর্দা রক্ষা করে যে মহিলাগণ অনেক কিছুই করতে পারেন তারও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। এখন মহিলাগণ উনাদের চাহিদামত যে কোন কিছুই এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি তুলে ধরতে হলে পুরুষ ও মহিলা ক্যান্টিনের বিষয় আলোচনা না হলে বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই এখানে সেই আলোচনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)