রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি (২৪)
, ১৫ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৫ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সময়টা চলছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের। সারা বিশ্বজুড়ে কাফির-মুশরিকদের একটাই লক্ষ্য কি করে মুসলমান উনাদের ঈমান আনার পর আবার কাফির বানানো যায়। সারা বিশ্বজুড়ে বিধর্মীরা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সুশীতল তলে যেভাবে আশ্রয় নিচ্ছে এ বিষয়টিকেও বাধাগ্রস্ত করা যায়। কাফির- মুশরিকরা নানা অপকর্ম ঘটিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরছে মুসলমানগণ হচ্ছে সন্ত্রাসী। নাউযুবিল্লাহ! পাশাপাশি ইউনেস্কোর সহায়তায় নানা মুসলিম দেশে চলছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী, পবিত্র ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন বিরোধী কর্মকা- অর্থাৎ সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যাতে মুসলমানগণ সহজেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ে জড়িয়ে ঈমান হারিয়ে ফেলে।
এক ধরনের নর্তন কুর্দনকে সুফী নৃত্যের নামে তুরস্কে প্রচার প্রসারের নেপথ্যে রয়েছে ইহুদী সংঘের এই ইউনেস্কো। বাংলাদেশে কাফির লালন এবং তার অসামাজিক কার্যক্রমকে একজন আধ্যাত্মিক মানুষ ও তার ঈশ্বর পাবার উপায় হিসেবে জনমত তৈরির নেপথ্যেও আছে এই ইউনেস্কো। এই ইহুদী সংঘের সরাসরি মদদ ছাড়াও তাদের সমর্থনে প্রতিটি মুসলিম দেশে অনেক কর্পোরেট সংস্থাও নানান কার্যক্রম হাতে নিয়ে থাকে যাতে সেই মুসলিম দেশের ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রথম আলো পত্রিকার ট্রান্সকম গ্রুপ ও ব্র্যাক এ দেশে এরকম অনেক ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ের নেপথ্যে রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মান উনার খিলাফ করে কার্টুন আকার দুঃসাহস দেখিয়েছিল এই প্রথম আলো পত্রিকা। নাউযুবিল্লাহ! বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরে যাওয়াতে প্রথম নিষেধাজ্ঞা আনে ব্র্যাক গ্রুপ।
বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে আয়োজন করে খুব বড় করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অনুষ্ঠান। এতে মাদরাসার ছাত্রদেরকেও বাধ্য করা হয় গান গাওয়ার জন্য। এই কর্মসূচি সফল করতে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ দেশব্যাপী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দলগত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান করা হয়। এতে ৬৪টি জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদরাসার ছাত্র ও ছাত্রী অংশগ্রহণ করে। নাউযুবিল্লাহ!
এ ছাড়া ভারতীয় কোম্পানি রবি আজিয়াটার উদ্যোগে এদেশে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ পতাকা তৈরি করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অনুষ্ঠান করে। নাউযুবিল্লাহ! বিশ্বের সবচেযয়ে বড় জাতীয় পতাকা নির্মাণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এই আয়োজন করেছিল রবি নামে ভারতীয় কোম্পানী। অথচ তার এক বছর পূর্বে পাকিস্তানে ২৪ হাজার ২০০ মানুষ নিয়ে সবচেয়ে বড় জাতীয় পতাকা তৈরি হয়েছিল। অথচ এ সকল অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে আসলে কোন জাতীয়তাবোধ, দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয় না, হয় নারী-পুরুষে একাকার হয়ে হারাম কাজ পালন। এগুলো মানুষের চেতনার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে। কর্পোরেট সংস্থাগুলো এক ধরনের বিজ্ঞাপনের নামে আয়োজন করে এই অনুষ্ঠান আর ক্ষমতাশীল দলগুলো রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করে এই বিষয়গুলোকে। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের খাওয়ান-পরান, লালন-পালন করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রহমতুল্লিল আলামীন হিসেবে আমাদের রহমত মুবারক দ্বারা বেষ্টন করে আছেন, উনারাই হচ্ছেন সকল প্রশংসার মূল এবং প্রশংসা পাওয়ার একমাত্র হকদার। অথচ উনাদের ছানা-ছিফত প্রকাশের লক্ষ্যে কোথাও কোন আয়োজন নেই, অনুষ্ঠান নেই। সকল দেশপ্রেম, ন্যায়-নীতি অর্জন হবে কেবলমাত্র উনাদের অনুসরণের মাধ্যমে, উনাদের ছানা-ছিফত প্রকাশের মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ! তাই ১৫ শতকের সুমহান মুজাদ্দিদ, হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এই হারাম বিষয়গুলোর প্রতিবাদের লক্ষ্যে এবং সারা দেশ ও বিশ্বসহ রহমত প্রাপ্তির এক বিরল উপলক্ষ্য তৈরির জন্য আয়োজন করেন- “কোটি কন্ঠে মিলাদ শরীফ পাঠ” উনার কার্যক্রম। কাফির মুশরিকরা যেখানে আমাদের চেতনাকে নষ্ট করতে চায় সেখানে হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মুসলমান উনাদের চেতনাকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে আয়োজন করেন এই বিশেষ অনুষ্ঠান। সুবহানাল্লাহ!
কোটিকন্ঠে মিলাদ শরীফ উনার প্রথম অনুষ্ঠান পালিত হয় ১৪৩৭ সালের পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ। দেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অগনিত মানুষ সমবেত হয়ে পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ উনার পতাকা বহন করে ফাল ইয়াফ রাহু শরীফ পালন করেন সুবহানাল্লাহ। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মানুষ বাস-ট্রাক-গাড়ী-রিকশা করে এসে সেখানে ভিড় জমান। ট্রাকের উপর দাঁড়িয়ে উচ্চকন্ঠে মিলাদ শরীফ পাঠ শুরু হলে দূর দুরান্ত থেকে আগত সকল মানুষ পবিত্র মিলাদ শরীফ উনার সাথে পাঠ শুরু করলে এক জান্নাতি পরিবেশ সেখানে রচিত হয় । সুবহানাল্লাহ! পবিত্র মিলাদ শরীফ পাঠ শেষে সম্মানিত রাজারবাগ দরবার শরীফ উনার পক্ষ থেকে মুবারক তবারুকের ব্যবস্থা করা হয়। একইভাবে ১৪৩৮ সালেও দেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেই কোটি কন্ঠে মিলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান পালিত হয়। কিন্তু ১৪৩৯ সালে ঘটে এক অভাবনীয় ঘটনা।
১৪৩৯ সালের ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফে কোটি কন্ঠে মিলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় দরবার শরীফ উনার সামনের রাস্তায়। এ বছর খৃস্টানদের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের তথাকথিত ধর্মযাজক পোপ ফেন্সিস বাংলাদেশে আসা উপলক্ষে সরকার ঢাকার অনেক স্থানে সভা সমিতি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এমনকি পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ উপলক্ষেও কোন র্যালী, মিছিল, সভাসমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আনে। নাউযুবিল্লাহ। এ সংবাদ শুনে যামানার সুমহান মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং রিট করার নির্দেশ মুবারক দান করেন। অথচ এই রিট দাখিলের জন্য মাত্র হাতে সময়ছিল একদিন অর্থাৎ তার পরের দিন পালিত হবে সেই সুমহান সম্মানিত ১২ই শরীফ। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার অসীম রহমত এবং যামানার সুমহান মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইইস সালাম উনার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সঙ্গে নিসবত মুবারক থাকার কারণে সহজেই সকল কিছু পবিত্র সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করার পক্ষে চলে আসে। সুবহানাল্লাহ!
সে বছর বিভিন্ন রুটে ১২টি করে গাড়ী করে সর্ব মোট অনেক গাড়ী শহর প্রদক্ষিনে বের হয় এবং সাথে থাকে অনেক মোটর বাইক। তাছাড়া ঘোড়া চালিত যানবাহনও পবিত্র ফাল ইয়াফরাহু শরীফ পালন উপলক্ষ্যে শহর প্রদক্ষিণ করে।
শহরের বিভিন্ন স্থানে গাড়ীসমূহ থেমে পবিত্র মিলাদ শরীফ পাঠ করে আবার যাত্রা শুরু করে এভাবে সকাল ১১টার মধ্যে প্রদক্ষিণ শেষে সকলেই জমায়েত হন পবিত্র দরবার শরীফ উনার সামনে। অতঃপর মুহু মুহু তাকবীর ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। এখানে সকলে জমায়েত হবার পর পুনরায় মিলাদ শরীফ পাঠ করা হয় এবং সকল মানুষকে সম্মানিত তাবারুক বন্টন করা হয়। সে বছর ১২ হাজার তবারুকের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যামানার সুমহান মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন যেদিন ১২০০ (বারশত) কোটি তাবারুকের ব্যবস্থা করা যাবে তখনি কেবল ভাবা যেতে পারে কিছু করার চেষ্টা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! কোটি কন্ঠে মিলাদ শরীফ এমন এক মহান অনুষ্ঠান যার মাধ্যমে দেশের সকল মানুষ সহ বিশ্বের সকল মানুষের বিশেষ রহমত প্রাপ্তির এক বিরাট উপলক্ষ্য তৈরি হয়েছে আর সে পথ রচনা করে দিয়েছেন পনেরো শতকের সম্মানিত মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম। উনার চিন্তা-উপলব্ধি সাধারণ মানুষের ধারণ করার অনেক অনেক উর্দ্ধে। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা মুহম্মদ আল হিলাল
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)