যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৬)
, ০২রা জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৮ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২০ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত হযরত ইমাম ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
مِنَ السُّنَّةِ أَنْ تُهْدَمَ الْكَنَائِسُ الَّتِي فِي الْأَمْصَارِ الْقَدِيمَةِ وَالْحَدِيثَةِ
অর্থ: “নতুন শহরসমূহে এবং পুরাতন শহরসূহে যে সমস্ত গির্জা, মন্দির, প্যাগোডা রয়েছে, সেগুলি ভেঙ্গে ফেলা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। ” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আব্দুর রায্যাক্ব ১০/৩১৯)
উমাইয়া শাসক ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনকালে মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপতি বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কুতাইবা ইবনে মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিহাদ ও সন্ধির মাধ্যমে মুশরিকদের নিকট থেকে সমরকন্দ বিজয় করেন। উক্ত শহরে একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ এবং মিম্বার তৈরির পর তিনি শহরে প্রবেশ করেন।
فَصَلَّى فِي الْمَسْجِدِ وَخَطَبَ وَتَغَدَّى وَأُتِيَ بِالْأَصْنَامِ الَّتِي لَهُمْ فَسُلِبَتْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَأُلْقِيَتْ بَعْضُهَا فَوْقَ بعضٍ حَتَّى صَارَتْ كَالْقَصْرِ العظيم ثم أمر بتحريقها فتصارخوا وتباكوا وَقَالَ الْمَجُوسُ إِنَّ فِيهَا أَصْنَامًا قَدِيمَةً مَنْ أحرقها هلك وجاء الملك غورك فَنَهَى عَنْ ذَلِكَ وَقَالَ لِحضرت قُتَيْبَةَ رحمة الله عليه إِنِّي لَكَ ناصح فقام حضرت قتيبة رحمة الله عليه وأخذ في يده شعلة نار وقال أنا أحرقها بيدي فَكِيدُونِي جَمِيعا ثُمَّ لا تنظرون ثم قام إليها وهو يكبر الله عز وجل وَأَلْقَى فِيهَا النَّارَ فَاحْتَرَقَتْ
‘তারপর তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ ছলাত আদায় করেন, খুতবা দেন ও খাদ্য গ্রহণ করেন। অতঃপর সমরকন্দের মুশরিকদের মূর্তিগুলো উনার সামনে উপস্থিত করা হলো এবং সেগুলোকে স্তুপ করে রাখা হলো। মূর্তির সংখ্যা এত বেশি ছিলো যে, স্তুপটি একটি বিরাট প্রাসাদের রূপ ধারণ করলো। তারপর তিনি এগুলোকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ মুবারক দেন। তখন তারা ক্রন্দন ও বিলাপ করতে লাগলো। এক অগ্নিপূজারী বললো, ‘এগুলোর মধ্যে একটি পুরানো মূর্তি রয়েছে। যে ব্যক্তি এই মূর্তিটিকে পুড়াবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে। ’ সমরকন্দের বাদশাহ্ গাওরাক এগিয়ে আসলো এবং এই কাজ করতে নিষেধ করলো। আর হযরত কুতাইবা ইবনে মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সে বললো, ‘আমি আপনার শুভাকাক্সক্ষী, আপনি এরূপ কাজ করবেন না। ’ তখন হযরত কুতাইবা ইবনে মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দাঁড়ালেন ও অগ্নিশিখা হাতে নিলেন এবং বললেন, ‘আমার নিজের হাতে মূর্তিটিকে পুড়াবো, তোমরা সকলে মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো, তোমাদেরকে বেশি সময় দেওয়া হবে না। ’ তারপর তিনি মূর্তিটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং “আল্লাহু আকবার” বললেন ও মূর্তিটির উপর অগ্নিশিখা ফেলে দিলেন। তারপর মূর্তিটি পুড়ে গেল। ” সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্ ৯/৮৬)
বর্তমান যামানার তথাকথিত নামধারী আলেম-ওলামা, মালানা, মুফতী অর্থাৎ ওলামায়ে সূ’রা কথায় কথায় বলে থাকে- এই আমল বিদয়াত, ঐ আমল বিদয়াত; কারণ এগুলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি করেননি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা করেননি এবং হযরত তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা করেননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা তো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের পর সমস্ত মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলেছিলেন এবং হযরত তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও সমস্ত মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেছিলেন ও পুড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং উনারা এই আমল মুবারক উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। সুবহানাল্লাহ! অথচ ওলামায়ে সূ’রা এখন মুশরিকদের মূর্তি হেফাযতের লক্ষ্যে মন্দিরে যেয়ে মূর্তি পাহারা দিচ্ছে এবং হিন্দুদের পূজার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করছে। ওলামায়ে সূ’দের এই আমল দ্বারা তারা কি এটাই সমস্ত বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিচ্ছে না যে, আসলে তারা মুসলমান নয়; বরং প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে মূর্তিপূজারী ও মুশরিক?
এই সকল মূর্তিপূজারী ও মুশরিক ওলামায়ে সূ’দের ব্যাপারেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ ثَوْبَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالمُشْرِكِينَ وَحَتَّى يَعْبُدُوا الأَوْثَانَ
অর্থ: “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের কিছু কওম বা দল মুশরিকদের সাথে শামিল হয়ে মূর্তিপূজা না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। ” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আবী দাউদ ত্বয়ালুসী ২/৩৩২) (চলবে)
-মুহাদ্দিস মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)