ঘটনা থেকে শিক্ষা:
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হয়ে যায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার হয়ে যান
, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করে, মহান আল্লাহ পাক তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হন। হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি এই পবিত্র আয়াত শরীফ যখন পেলাম, তখন মনে মনে চিন্তা করলাম, সত্যিই একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার উপরই ভরসা করা উচিত। হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটা ঘটনা বলা হয় যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করতেন। উনার আর্থিক অবস্থা তত স্বচ্ছল ছিলনা। একবার পবিত্র হজ্জের সময় যখন হলো তখন উনার সঙ্গী-সাথীরা বললো- হে হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি আপনি কি পবিত্র হজ্জে যাবেন? তিনি বললেন, দেখ আমি হজ্জে যাব কি করে? আমার তো হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। আমার ছেলে-মেয়ে রয়েছে, তাদের ভরণ-পোষণ দিতে হবে আমি হজ্জে থাকাকালীন অবস্থায়, আর আমার তো হজ্জে যাওয়ার যাতায়াত খরচ দরকার, কোথা থেকে পাব? তারা বললো, দেখেন আপনি যদি যেতে চান আমাদের সাথে যেতে পারেন। তিনি সকালে উনার ছেলে-মেয়েদের সাথে আলোচনা করলেন। উনার সন্তানাদীর কাছে অভিমত জানতে চাইলেন, যে আপনারা কি বলেন? আমি তো পবিত্র হজ্জে যেতে চাই। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনিতো সবকিছুর ফায়ছালাকারী। তখন উনার ছোট্ট একটা মেয়ে ছিল, খুব নেককার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী। সেই মেয়েটা বললো- ঠিক আছে, আপনি যদি পবিত্র হজ্জে যেতে চান তাহলে যান কোন অসুবিধা নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে হিফাযত করবেন। তখন সকলেই সম্মতি দিলেন। তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন পবিত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে। কিন্তু উনার ঘরে পরের বেলার খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল না। তিনি তো পবিত্র হজ্জে রওয়ানা হয়ে গেছেন। সেই ছোট্ট মেয়েটার কথা বলার কারণেই তিনি পবিত্র হজ্জে রওয়ানা হয়ে গেলেন। এদিকে খাওয়ার অভাব দেখা দিল। উনার অন্যান্য ছেলে-মেয়ে যারা ছিল, তারা বললো সেই ছোট্ট মেয়েটাকে, তোমার কারণেই আমাদের পিতা পবিত্র হজ্জে গিয়েছেন। আমাদের কামাই রোজগার করার আজকে কেউ নেই। সেই মেয়েটা বললো- দেখ, মহান আল্লাহ পাক তিনি তো রিযিকের মালিক, মহান আল্লাহ পাক তিনি ফায়ছালা করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করো। ইত্যবসরে দেখা গেল, সেই এলাকায় যে আমীর ছিল, সে আমীর শিকার করতে বের হয়েছে। শিকার করতে করতে সে তার কয়েকজন লোক নিয়ে রাস্তা ভুলে সেই হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাড়ীতে এসে পৌঁছল। যখন এসে পৌঁছল তার সভাসদ যারা ছিল, তাদের মধ্যে একজন উযীর ছিল, সে কিন্তু হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে চিনতো এবং তিনি বুযূর্গ এটা তারা জানতো। এসে বললো, আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। তখন উনার ঘর থেকে এক গ্লাস পানি দেয়া হলো। কিন্তু উনার ঘরে খাওয়ার কিছু ছিল না যে, মেহমানদারীর জন্য কিছু দেয়া যায়, উনারা কিছুই দিতে পারলেন না। ঐ উযীর সেটা বুঝতে পারলো। সে বুঝতে পেরে বললো- হে আমীর, এটা তো হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাড়ী। তিনি খুব বুযূর্গ আল্লাহওয়ালা লোক। উনার ঘরে কিন্তু খাওয়ার কিছু নেই, আমাদেরকে যে মেহমানদারী করবেন। তেমন কিছু নেই, তো আমাদের উচিত উনাকে কিছু সাহায্য করা। তখন সে আমীর বললো, তাহলে ঠিক আছে কি করা যায়? প্রত্যেকের কোমরে একটা কোমরবন্ধনী ছিল, একটা বেল্ট ছিল, সেটা তারা খুলে রাখল। বললো- ঠিক আছে, এটার যত মূল্য হয়, সেই মূল্য দিয়ে আমরা নিয়ে যাব। এটা তাদেরকে হাদিয়া দিব। ঠিক সেই আমীর তাই করলো। দেখা গেল অনেক টাকা হয়ে গেল। কয়েক হাজার টাকা হয়ে গেল সেগুলোর মূল্য। সেই টাকাগুলি উনাদেরকে দিয়ে আমীর চলে গেল। তাদের স্বচ্ছলতা এসে গেল। তখন সেই ছোট্ট মেয়েটা দোআ করল যে, মহান আল্লাহ পাক! আপনি তো আমাদের একটা বন্দোবস্ত করে দিলেন। তো আমার যিনি পিতা হজ্জে গেছেন, উনার প্রতি আপনি দৃষ্টি রাখবেন, সে দোআ করল। এদিকে তো হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আগেই হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। তিনি কিছু দূর যাওয়ার পরে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত, উনার কাফেলার মধ্যে যে প্রধান ব্যক্তি তার পেটে ব্যাথা হলো। অনেক ডাক্তার কবিরাজ ডাকা হলো, কিছুতেই কিছু হলো না। শেষ পর্যন্ত এক লোক বললো, এখানে কোন আল্লাহওয়ালা লোক আছে কি? কোন বুযূর্গ লোক আছে যার উছীলায় মহান আল্লাহ পাক তিনি শেফা দিতে পারেন? কারণ ওষুধপত্রে তো কোন কাজ হচ্ছে না। এখন আল্লাহওয়ালা লোকের দোআয় যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি হিফাযত করেন। তখন এক লোক বললো যে, এই তো হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি! তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী, বুযূর্গ বলে আমরা মনে করি। তিনি যদি আপনাকে কিছু দোআ করেন, ফুঁ দেন বা কিছু করেন, তাহলে হয়ত কামিয়াব হতে পারেন। সেই ব্যক্তি বললো যে, হুযূর আমাকে দয়া করে কিছু বন্দোবস্ত করেন। তিনি তার পেটের মধ্যে ফুঁ দিলেন, হাত বুলায়ে দিলেন, লোকটা সুস্থ হয়ে গেল সুবহানাল্লাহ!
যখন সুস্থ হয়ে গেল, সেই ব্যক্তি আমীর ছিল। সে বললো যে, হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন, আমার সাওয়ারী রয়েছে, একটা সাওয়ারীতে চড়েন এবং আপনার যাতায়াতে যত খরচ দরকার, সব খরচ আমি বহন করবো সুবহানাল্লাহ! উনার ফায়ছালা হয়ে গেল। উনার যখন ফায়ছালা হয়ে গেল। তিনি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন যে, আমারতো ফায়ছালা হয়ে গেল কিন্তু আমার বাড়ীর কি অবস্থা? ঠিক ঐ রাত্রে তিনি স্বপ্ন দেখেন। উনাকে বলা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে, হে হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি অস্থির হবেন না। আপনার যেমন ফায়ছালা হয়েছে আপনার বাড়ীরও ফায়ছালা হয়ে যাবে।
وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
অর্থ: “যে আমার উপর ভরসা করে আমি তার সমস্ত ফায়ছালা করে দেই। ” সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৫)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (২৭)
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তাওয়াক্কুল তথা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ভরসা করার ফযীলত
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
“সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সুদের ভয়াবহতা
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)