যাকাতের নামে আলাদা নিম্নমানের কাপড় তৈরী ও সরবরাহ বন্ধ এবং লোকদেখানো যাকাত দেয়ার প্রবণতা প্রতিহত করতে হবে।
যাকাতের কাপড় নিতে গত ৩৫ বছরে নিহত ২৫৪ জন। পবিত্র যাকাতের কাপড়ের নামে সিন্ডিকেট এবং নাম কামানো পবিত্র যাকাতকে অবমাননা করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ!
, ২৭ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ৬ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
‘গরিব-অসহায় মানুষ পবিত্র ঈদ উনার আগে নতুন কাপড় পেলে খুবই খুশি হয়। তাই যাকাতদাতারা বেশি মানুষকে খুশি করার জন্য বেশি বেশি কাপড় কিনে। যাকাতদাতারা এখন মূলত নাম কামাইয়ের জন্য যাকাত দেয়। এতে করে যাকাত গ্রহীতারা কত নিম্নমানের কাপড় পেল অথবা এ নিম্নমানের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে কতজন মারা গেল সেদিকে তাদের আদৌ ভ্রƒক্ষেপ নেই। নাঊযুবিল্লাহ!
যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মানুষ মরার ট্র্যাজেডি এ দেশে নতুন নয়। প্রতিবছরই যাকাতের কাপড় দেয়ার নামে গরীব মারার উৎসব পালন করে কথিত সম্পদশালীরা। চলমান এই যাকাতের কাপড় দেওয়ার পদ্ধতি রীতিমতো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বিভিন্ন জরিপে প্রকাশ, যাকাত নিতে গত ৩৫ বছরে নিহত হয়েছে ২৫৪ জন। আহতের সংখ্যা অসংখ্য। সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হয়েছে ২০০২ সালে গাইবান্ধায়। এতে ৪২ জন নিহত হয়। ২০০৩ সালে ভিড়ের চাপে নারী ও শিশুসহ ৯ জন মারা যায়। ২০০৬ সালে ৩ জন, ২০১১ সালে ৭ জন, ২০১২ সালে ৩ জন, ২০১৪ সালে ২ জন মারা যায়। প্রায় প্রতি বছর এরকম যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে মৃত্যুর খবর আছে আরো অনেক। কিন্তু এর অবসানে সরকারের কোনো তৎপরতা এযাবত লক্ষ করা যাচ্ছে না।
নিম্নমানের সুতা ও দুর্বল রং আর অদক্ষ কারিগরের তৈরি এসব কাপড়ের মান এতটাই খারাপ যে, এক ধোয়ার পর আর পরা যায় না তথা পরার উপযুক্ত থাকে না এসব কাপড়। জালের মতো ফাঁকা হয়ে যায় সুতাগুলো। রঙিন কাপড় থেকে রং আর মাড় উঠে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। দেখলে মনে হয় ঘর মোছার ন্যাকড়া। মূলত, পবিত্র যাকাত নিয়েও মুনাফাখোররা অতি মুনাফাখোরী করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর একটি অসৎ চক্র শুধু পবিত্র যাকাত উনার নামে অতি নিম্নমানের কাপড় বিক্রি করে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
পোশাক খাত রমযান শরীফ মাস আসলেই একটি বিশেষ সিষ্টেমের মধ্যে বন্দি হয়ে যায়। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো উন্নত ও দামী কাপড়গুলো বিদেশে রফতানি করে কিংবা বড় বড় শপিং মলগুলোতে সরবরাহ করে। আর অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রায় হাজারের উপরে একটি কাপড় ব্যবসায়ী মহল রয়েছে যারা এসব কারখানায় উৎপাদিত ওয়েস্ট কিংবা রফতানি বাছাইয়ে বাদ পড়েছে এমন নিম্নমানের কাপড়গুলো কিনে নেয় চুক্তির ভিত্তিতে। আর সেই কাপড়গুলোই পবিত্র রমযান শরীফ মাসে যাকাতের কাপড় হিসেবে বাজারে সরবরাহ করে থাকে। অর্থাৎ এখানে একটি সিন্ডিকেট মহলই এই যাকাতের কাপড়ের প্রচলন ঘটিয়েছে।
মনে রাখা উচিত- পবিত্র যাকাত মানে কাউকে অনুগ্রহ- দান করা বুঝায় না। বরং পবিত্র যাকাত গ্রহণ করার মাধ্যমে গ্রহীতা সম্পদের অধিকারী মানুষটিকে অনুগ্রহ করে। এজন্য যার পবিত্র যাকাত পাওয়ার হক্ব আছে তাকে পবিত্র যাকাত উনার টাকার হক্বটা পৌঁছিয়ে দেয়াই মুসলমানদের কর্তব্য। কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকে সঠিক যাকাতব্যবস্থা আমাদের দেশে-সমাজে সরকারিভাবে প্রচলিত না থাকায়- এ সম্পর্কে রয়েছে নানা ভুল ধারণা। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষ পবিত্র যাকাত প্রদানের নামে লোক-দেখানো কিছু কাজ করে গরিব মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। আর এতে করে পবিত্র যাকাত সম্পর্কেই তেরি হয়েছে ভুল ধারণা। এছাড়াও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্পর্কে জানার প্রতি উন্নাসিকতাও এজন্য দায়ী।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- “তাদের (বিত্তবানদের) সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের রয়েছে অধিকার।” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র বা উৎকৃষ্ট ব্যতীত কোনো কিছুই কবুল করেন না। (বুখারী শরীফ)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শরীয়ত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের ফতওয়া হলো- যেটা সবচেয়ে ভালো, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই দান করতে হবে। আর যেটা খারাপ, নিম্নমানের ও নিম্নমূল্যের সেটা দান করা যাবে না। অর্থাৎ পবিত্র যাকাত তথা দান-ছদকার বস্তু যেমন হালাল হওয়া শর্ত, তেমনি তা উৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে মূল্যবান হওয়াও শর্ত। অন্যথায় তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আদৌ কবুলযোগ্য নয়।
কাজেই যাকাত-ফিতরা, দান-ছদক্বা, সবকিছু করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে। গাইরুল্লাহর জন্য কোনো আমল করা যাবে না। মানুষ দানশীল বলবে, দানবীর বলবে, দাতা বলবে, মানুষ জানবে, চিনবে, সমাজে নামধাম হবে, প্রচার-প্রসার ঘটবে, পরিচিতি হবে, যশ-খ্যাতি অর্জিত হবে, সমাজের অধিপতি হওয়া যাবে, নেতা-নেত্রী হওয়া যাবে, মসজিদের সেক্রেটারী, সভাপতি হওয়া যাবে, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, মন্ত্রী-মিনিস্টার হওয়া যাবে ইত্যাদি সবই হলো গাইরুল্লাহ। এই গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্য থাকার কারণে দেখা যায়, বেশি লোককে পবিত্র যাকাত দেয়ার জন্য তারা কম দামের খদ্দরের পাতলা লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি দিয়ে থাকে যা সাধারণভাবে পড়ার উপযুক্ত নয়। কারণ সে লুঙ্গি ও শাড়ি পবিত্র যাকাত দানকারী ও দানকারিণী পরিধান করতে কখনোই রাজি হবে না বা পছন্দ করবে না।
যদি তাই হয়, যেটা পবিত্র যাকাত দানকারী ও দানকারিণী নিজেরা গ্রহণ করতে রাজি নয়; সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি কী করে গ্রহণ করবেন? মূলত সে দান আদৌ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুলযোগ্য হবে না।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
১০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বিস্তারের বিকল্প নেই।
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)