যমযমের পানি পান করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক ও বেমেছাল উপকারিতা
, ২১ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
যমযমের পানি ক্ষুধার্তের খাদ্য ও রোগের শেফা:
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَا زَمْزَمَ فَقَالَ إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَشِفَاءُ سُقْمٍ.
অর্থ: “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই যমযমের পানি বরকতপূর্ণ। তা তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগ নিরাময়ের ঔষধ।” (মু’জামুছ ছগীর লিত ত্ববারানী ১ম খ- ১৮৬ পৃষ্ঠা: মহাসম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২৯৫)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমযমের পানি সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন, “উহা বরকতময় পানি। উহা খাদ্যের কাজ করে।” (মুসলিম শরীফ)
শরীর সুস্থ রাখার জন্য পানি পান করা খুবই জরুরী। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করা প্রয়োজন। ঋতু/মৌসুম, বয়স, ওজন, ব্যক্তিভেদে এবং শারীরিক শ্রমের ওপর একেকজনের একেক পরিমাণ পানি পান করার প্রয়োজন পড়ে। তাই শীতকালের চেয়ে গরমকালে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায় আবহাওয়ার কারণেই। আর যারা কায়িক পরিশ্রম বেশি করে, তাদের বেশি পানি পান করতে হয়। যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘামে, তাদের জন্য একটু বেশি পানি পান করা জরুরী। তবে মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা পরিমাণে বেশি পানি পান করে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের দিনে ৮-১০ গ্লাস বা ২-৩ লিটার পানি পান করা দরকার। অন্যদিকে পুরুষদের প্রায় ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
অনেকে মনে করে থাকে, শিশুদের কম পানি পান করলেও চলবে। এটি ঠিক নয়। ১-১০ কেজি ওজনের শিশুকে প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১০০ সিসি তরল পান করাতে হবে। ১১-২০ কেজি ওজনের জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১ লিটার ও ২০ কেজির বেশি ওজনের শিশুর জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১.৫ লিটার তরল পান করাতে হবে। এক্ষেত্রে পানি পান করানোই ভালো।
সাধারণভাবে যখনই পানির তৃষ্ণা তৈরি হবে, তখনই পানি পান করে শরীরের ঘাটতি মেটানো উচিত। পানি পান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের মস্তিস্কে হাইপোথ্যালামাস অংশে রয়েছে থাই সেন্টার বা পিপাসাকেন্দ্র। এই কেন্দ্র জানিয়ে দেয় যে, কখন পানি পান করা দরকার। একজন মানুষের এই অংশটি কার্যকরী থাকলে পানির অভাব বা বাড়তি কখনোই হবে না।
যমযমের পানি মুবারক পান করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক:
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَرِبَ مِنْ زَمْزَمَ وَهُوَ قَائِمٌ .
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত দাঁড়ানো শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় যমযমের পানি পান মুবারক করতেন। (মুসলিম শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ سَقَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ زَمْزَمَ فَشَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যমযমের পানি মুবারক পান করিয়েছি। আর তিনি তা মহাসম্মানিত দাঁড়ানো অবস্থা মুবারকে পান করেছেন। (মুসলিম শরীফ)
পর্যাপ্ত পানি পানের সুফল:
পানি সমস্ত রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো ওষুধ। তবে সেই পানি হতে হবে বিশুদ্ধ। কেননা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পরও সে পানি যদি দূষিত হয় তাহলে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হতে হয়।
পর্যাপ্ত পানি পানের উপকারিতা নিম্নরূপ-
১. শরীরের কোষগুলোকে সবল ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
২. শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
৩. কিডনি, হৃৎপি- ও মস্তিষ্ক ভালো থাকে।
৪. মাথার যন্ত্রণা, অম্বল, শরীরের ব্যথা এবং ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
৫. খাবার হজমে সহজ হয়।
৬. সবচেয়ে সহজে শরীরের ওজন কমানো যায়।
৭. শরীর থেকে সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন দূর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৮. পেশী ও হাড় সুস্থ থাকে।
১০. শরীরে শক্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৯. ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সহায়ক ও ত্বকের শুষ্কতা রোধে উপকারী।
অপর্যাপ্ত পানি পানের সমস্যা :
১. শরীরের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায় ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
৩. ইউরিন ইনফেকশন এবং কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কিডনি অকেজো হয়ে পড়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিত।
শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে শরীর নিজে থেকে কিছু সংকেত দিয়ে জানিয়ে দেয়। জেনে নিন সেসব আলামত সমূহ:-
১) শরীরে পানির অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ঠোঁট ফাটতে শুরু করে। হঠাৎ করে ত্বক রুক্ষ বোধ করতে শুরু করলে এবং ত্বকে ব্রণ ও চুলকানির সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে পানির ঘাটতি রয়েছে।
২) পানির অভাবে ছোট ইস্তেঞ্জার রং হলুদ হয়ে যায়। শরীরে পানির ঘাটতির কারণে ইস্তেঞ্জার পরিমাণ কমে যায় এবং ইস্তেঞ্জা করার সময় জ্বালা বোধ হয়।
৩) পানির অভাবে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি মুখে দুর্গন্ধও হয়। পানি মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে লালা উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। যা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
৪) ডিহাইড্রেশন অবস্থায় বারবার পিপাসা অনুভব হয়। বার বার পানি খেলেও শরীরে পানি জমা থাকতে পারে না। সাধারণ পানির পরিবর্তে লেবু-পানি বা ইলেকট্রল দ্রবণযুক্ত পানি পান করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় খুব বেশি ক্ষুধা পায়।
৫) পানির অভাবে শরীরে অনেক সময় নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে কোনও কারণ ছাড়াই হঠাৎ মনে আতঙ্ক জাগে বা মাথাব্যথাও হতে পারে। এ ছাড়া সারাক্ষণ আলস্য ও ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও হতে পারে শরীরে পানির ঘাটতির কারণে।
৬) পানির অভাবে রক্ত স্বল্পতাও দেখা দেয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছে দিতে হৃদ্যন্ত্রকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে হৃদ্যন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। হঠাৎ করে হৃদ্স্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
শুকনা গোশ্ত খাওয়া খাছ সুন্নত মুবারক
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন এলকোহলমুক্ত বিশুদ্ধ সুগন্ধি সুন্নতী আতর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুন্নতী খাবার সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মানুষ মেথির উপকারিতা জানলে প্রয়োজনে স্বর্ণ দিয়ে ওজন করে ক্রয় করতো
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী ফল “আঙ্গুর”
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বেমেছাল উপকারিতা সমৃদ্ধ মহাসম্মানিত সুন্নতী খাবার “কিছ্ছা”
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত মুহব্বত মুবারক হাছিল করতে হলে অবশ্যই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করতে হবে
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র নামায উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারকসমূহ
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)