মৃত ব্যক্তির কবরে তালক্বীন দেয়া খাছ সুন্নত মুবারক
, ২৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰي عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِّنُوْا مَوْتَاكُمْ شَهَادَةَ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন দিবে (এই কথা বলে যে, তুমি বলো)- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই”। (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, সুনানু ইবনু মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে আবি শায়বা, বাইহাক্বী শরীফ, বাগবী, আবূ নাইম, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববরানী ১০/৩৯৬, ত্ববরানী ১২/২৫৪, কানযুল উম্মাল, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মামবাউল ফাওয়ায়িদ ৩/৬৫)
কোন ব্যক্তির ইন্তেকালের পরে তার আত্মীয় স্বজন যারা জীবিত রয়েছে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা, ছওয়াব রেসানী করা, তার ক্ষমার বন্দবস্ত করা। আর কবরের তালক্বীন তারই একটি অন্যতম মাধ্যম।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰي عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا مَاتَ أَحَدٌ مِّنْ إِخْوَانِكُمْ فَسَوَّيْتُمُ التُّرَابَ عَلٰى قَبْرِهٖ فَلْيَقُمْ اَحَدُكُمْ عَلٰى رَأْسِ قَبْرِهٖ ثُمَّ لِيَقُلْ يَا فُلَانُ بْنَ فُلَانَةَ فَإِنَّهٗ يَسْمَعُهٗ وَلَا يُجِيْبُ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا فُلَانُ بْنَ فُلَانَةَ فَإِنَّهٗ يَسْتَوِيْ قَاعِدًا ثُمَّ يَقُوْلُ يَا فُلَانُ بْنَ فُلَانَةَ فَإِنّهٗ يَقُوْلُ أَرْشِدْنَا رَحِمَكَ اللهُ وَلٰكِنْ لَا تَشْعُرُوْنَ فَلْيَقُلْ اُذْكُرْ مَا خَرَجْتَ عَلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا شَهَادَةَ أَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَّكَ رَضِيْتَ بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا وَبِالْقُرْآنِ إمَامًا فَإِنَّ مُنْكَرًا وَنَكِيْرًا يَأْخُذُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا بِيَدِ صَاحِبِهٖ وَيَقُوْلُ انْطَلِقْ بِنَا مَا يُقْعِدُنَا عِنْدَ مَنْ لُقِّنَ حُجَّتَهٗ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنْ لَمْ يَعْرِفْ أُمَّهٗ قَالَ فَلْيَنْسِبْهُ إَلٰى أُمِّهٖ حَوَّاءَ عَلَيْها السَلَّامُ يَا فُلَانُ بْنَ حَوَّاءَ عَلَيْهَا السَّلَامُ.
অর্থ: হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমাদের কোন মুসলমান ভাই ইন্তিকাল করবে, তখন তাকে কবরে রেখে তার উপর ভালভাবে মাটি দিয়ে অর্থাৎ দাফন করে তার মাথার নিকট দাঁড়িয়ে বলবে- “হে অমুকের (মায়ের নাম) সন্তান অমুক” তখন মৃত ব্যক্তি এটা শুনবে কিন্তু কোন জবাব দিবে না। তারপর বলবে- “হে অমুকের সন্তান অমুক” এটা শুনে মৃত ব্যক্তি উঠে বসবে। অতঃপর আবার বলবে- “হে অমুকের সন্তান অমুক” এটা শুনে মৃত ব্যক্তি বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে দয়া ও ইহসান করুন, বলুন! কি বলতে চাচ্ছেন? যদিও তার কথা শুনা যাবে না। তখন তোমরা বলবে- যে বিষয়ের উপর দায়িম ক্বায়িম থেকে তুমি দুনিয়া থেকে এসেছো সে বিষয়ে তুমি এই সময় স্বরণ করো। অর্থাৎ (তুমি সাক্ষ্য দাও যে,) মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই। আর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহাসম্মানিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর নিশ্চয়ই তুমি মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে রব হিসেবে, পবিত্র ইসলাম উনাকে দ্বীন হিসেবে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহাসম্মানিত নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে পথ প্রদর্শক হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছো।” এ সময় মুনকার এবং নাকীর ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনারা একে অপরের হাত ধরে বলেন - এখান হতে চলুন, এর নিকট বসে কি করব? এই ব্যক্তিকে তো আখিরাতের দলীল শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর এক ব্যক্তি উঠে জিজাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি তার মাতার নাম জানা না থাকে তখন উপায় কি? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে হযরত মা হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক উল্লেখ করে বলবে, হে হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার পুত্র অমুক। (ত্ববরানী শরীফ, আছনাল মাত্বালিব ফী শরহে রওদ্বিত ত্বালিব ১/৩২৯, কাশফুল ক্বিনা’ আ’ন মাতানিল ইক্বনা’ ৪/৪০৩)
অত্র মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মূল বিষয় হলো, মৃত ব্যক্তির কবরে তালক্বীন করা জায়েয ও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক এবং “যখন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কবরে তালক্বীন দেয়া হয় তখন মুনকার ও নাকীর হযরত ফেরেশতাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনারা পরস্পর পরস্পরের হাতে ধরে বলেন যে, তাকে প্রশ্ন করে কি হবে, তাকে তো সব শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। চলুন আমরা চলে যাই। অর্থাৎ তালক্বীনের কারণে মৃত ব্যক্তি সুওয়াল-জাওয়াব থেকে নিস্কৃতি বা নাযাত লাভ করে।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরে তালক্বীন দেয়া মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হয়েছে।
তালক্বীন দেয়ার তারতীব:
মাইয়্যেতকে দাফন করার পর উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ থেকে
একজন প্রশ্ন করবে- مَنْ رَبُّكَ. (মার রব্বুকা) তোমার মহান রব কে?
অন্যান্য সকলেই বলবে- رَبِيَ اللهُ. (রব্বিইয়াল্লাহ) আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।
এরপর বলবে- وَمَنْ نَبِيُّكَ.(ওয়া মান নাবিয়্যুকা) তোমার সম্মানিত নবী কে?
অন্যান্য সকলেই বলবে- نَبِيِّىْ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (নাবিয়্যী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সম্মানিত নবী হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
অতঃপর বলবে- وَمَا دِيْنُكَ. (ওয়ামা দ্বীনুকা) তোমার সম্মানিত দ্বীন কি? সকলেই বলবে- دِيْنِىَ الْاِسْلَامُ. (দ্বীনিয়্যাল ইসলাম) আমার সম্মানিত দ্বীন হচ্ছেন পবিত্র ইসলাম।
এভাবে তিন বার বলবে অতঃপর ছাওয়াব রেসানী করে দোয়া মুনাজাত করবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির কবরে আযান দিয়ে থাকে; মৃত ব্যক্তির কবরে আযান দেয়া জায়িয নেই বরং কবরে আযান দেয়া বিদ্য়াত ও গোমরাহীর অন্তর্ভুক্ত। যা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ। কবরে আযান দেয়াকে জায়িয মনে করা, কুফরী। বরং, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরে “তালক্বীন” দিতে হবে। যা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের নির্দেশ মুবারক অর্থাৎ মুস্তাহাব-সুন্নত মুবারক। যা মৃত ব্যক্তির জন্য নাজাতের অন্যতম উছীলা। সুবহানাল্লাহ!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী ফল “আঙ্গুর”
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বেমেছাল উপকারিতা সমৃদ্ধ মহাসম্মানিত সুন্নতী খাবার “কিছ্ছা”
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত মুহব্বত মুবারক হাছিল করতে হলে অবশ্যই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা করতে হবে
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘ডুমুর’
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র নামায উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারকসমূহ
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘তালবীনা
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মসজিদে প্রবেশ করার-বের হওয়ার ও অবস্থান করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মেশ্ক মিশ্রিত সুন্নতী ইসমিদ সুরমা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ক্বমীছ বা জামা নিছফে সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়া সম্মানিত সুন্নত মুবারক
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)