মৃত ব্যক্তির কবরে তালক্বীন দেয়ার গুরুত্ব-ফযীলত মুবারক এবং খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক-১
, ০৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
মৃত ব্যক্তির কবরে আযান দেয়া জায়িয নেই বরং কবরে আযান দেয়া বিদ্য়াত ও গোমরাহীর অন্তর্ভুক্ত। যা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের প্রকাশ্য খিলাফ। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরে “তালক্বীন” দিতে হবে। যা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের নির্দেশ মুবারক অর্থাৎ মুস্তাহাব-সুন্নত মুবারক।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰي عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِّنُوْا مَوْتَاكُمْ شَهَادَةَ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন দিবে (এই কথা বলে যে, তুমি বলো)- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই”। (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, সুনানু ইবনু মাজাহ শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে আবি শায়বা, বাইহাক্বী শরীফ, বাগবী, আবূ নাইম, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববরানী ১০/৩৯৬, ত্ববরানী ১২/২৫৪, কানযুল উম্মাল, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মামবাউল ফাওয়ায়িদ ৩/৬৫)
উপরোক্ত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে-لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَاإِلٰهَ إِلَّا اللهُ তোমরা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” কালাম মুবারক বলে মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন দাও” এ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ মৃতপ্রায় বা মুমূর্ষ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রজোয্য এবং ইন্তিকাল করার পরে মৃত ব্যক্তির জন্যও প্রজোয্য। মূলত এ বর্ণনার দ্বারাই কবরে তালক্বীন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা মৃত্যুবরণ করার পূর্বে, মৃতপ্রায় বা মুমূর্ষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং ইন্তিকাল করার পরে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তালক্বীন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। যাতে মৃতপ্রায় বা মুমূর্ষ ব্যক্তিকে সেই কঠিন মূহূর্তে শয়তান ধোকা দিয়ে ঈমানহারা করে দিতে না পারে। মৃতপ্রায় ব্যক্তি যেন পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে মৃত্যুর সময়ও ঈমানের স্বীকৃতি দিয়ে ইন্তিকাল করতে পারে। আবার ইন্তিকাল করার পরে মৃত ব্যক্তিকে কবরে রেখে তালক্বীন করার মাধ্যমে তার কবরে সুওয়াল জাওয়াব যেন সহজ হয় এবং কবরে শান্তি লাভ করতে পারে। কারণ মৃত ব্যক্তি তার ইন্তিকালের পর থেকেই জীবিতদের কাছে দোয়া প্রত্যাশা করে।
এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰي عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَيِّتُ فِي الْقَبْرِ كَالْغَرِيْقِ الْمُتَغَوِّثِ يَنْتَظِرُ دَعْوَةً تَلْحَقُهٗ مِنْ أَبٍ أَوْ أُمٍّ أَوْ أَخٍ أَوْ صَدِيْقٍ، فَإِذَا لَحِقَتْهُ كَانَتْ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا، وَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيُدْخِلُ عَلٰى اَهْلِ الْقُبُوْرِ مِنْ دُعَاءِ اَهْلِ الْأَرْضِ أَمْثَالَ الْجِبَالِ وَإِنَّ هَدِيَّةَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ الْاِسْتِغْفَارُ لَهُمْ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মৃত ব্যক্তি আশ্রয়প্রার্থী ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়। সে তার পিতা, মাতা, ভাই ও বন্ধুদের কাছে দোয়ার প্রত্যাশা করতে থাকে। যখন জীবিতদের দোয়া মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে তখন সেটা তার কাছে দুনিয়া ও তার মধ্যস্থিত সমস্ত কিছুর চেয়েও বেশী পছন্দনীয় হয়। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কবরবাসীদের নিকট দুনিয়াবাসীদের দোয়াসমূহ পাহাড়ের ন্যায় বহুগুণ বৃদ্ধি করে পৌঁছে দেন। আর নিশ্চয়ই জীবিতদের পক্ষ থেকে মৃতদের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া হলো মৃত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। (শুয়াবুল ঈমান ১০/৩০১, মেশকাতুল মাসাবীহ, দায়লামী শরীফ, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে হাক্কী)
কাজেই কোন ব্যক্তির ইন্তেকালের পরে তার আত্মীয় স্বজন যারা জীবিত রয়েছে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা, ছওয়াব রেসানী করা, তার ক্ষমার বন্দবস্ত করা। আর কবরের তালক্বীন তারই একটি অন্যতম মাধ্যম।
-হাফিযুল হাদীছ মুহম্মদ ফজলুল হক্ব
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার পরিচয় ও প্রকারভেদ (২)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘চাদর’
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)