সুওয়াল-জাওয়াব
মুসাফির-মুক্বীমের নামায
, ১৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৯অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এখন আমাদের জানার বিষয় হচ্ছে, মুক্বীমগণ অবশিষ্ট দুই রাকাত কিভাবে সম্পন্ন করবেন? কেউ কেউ বলছেন যে, উক্ত দুই রাকাত আদায় করার সময় সূরা ফাতিহা শরীফ পড়তে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সূরা ফাতিহা শরীফ পড়া যাবে না অর্থাৎ সূরা ফাতিহা শরীফ ব্যতীতই নামায সম্পন্ন করতে হবে। কোনটি সঠিক? দলীল সহকারে জানিয়ে ইখতিলাফ নিরসন করবেন।
জাওয়াব: আমাদের হানাফী মাযহাবে মুক্বীম মুক্তাদীর জন্য ইমামের পিছনে সূরা-ক্বিরাআত পাঠ করা মাকরূহ তাহরীমী। তাই তাদেরকে সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ না করে, সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করতে যতটুকু সময় লাগে, ততটুকু সময় অথবা তিন তাসবীহ্ পরিমাণ সময় চুপ থেকে যথারীতি নামায শেষ করতে হবে। এক কথায়, মুসাফির ইমামের পিছনে মুক্বীম মুক্তাদী শেষ দু’রাকায়াত নামায ঠিক ঐভাবে আদায় করবে, যেভাবে মুদরিক মুক্তাদী ইমামের পিছনে আদায় করে থাকে।
অর্থাৎ মুসাফির ইমাম যখন দু’ রাকাত নামায পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে বাম দিকে সালাম ফিরোনো শুরু করবেন তখন মুক্বীম মুক্তাদীগণ অবশিষ্ট দু রাকাত আদায় বা পূর্ণ করার জন্য উঠে দাঁড়াবেন। অতঃপর সূরা ফাতিহা শরীফ অথবা তিন তাসবীহ পড়ার সময় পরিমাণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে যথারীতি রুকূ, সিজদা করে অবশিষ্ট দু’ রাকাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন। আর তাদের অবশিষ্ট নামায শেষ করা পর্যন্ত মুসাফির ইমাম মুছল্লায় বসে অপেক্ষা করবেন এবং একসাথে মুনাজাত করবেন।
উল্লেখ্য, মুসাফির ইমামের জন্য কর্তব্য হচ্ছে, নামায শুরু করার পূর্বেই উপস্থিত মুক্বীম মুছল্লী বা মুক্তাদীদেরকে নিজে মুসাফির হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেয়ার সাথে সাথে তারা কিভাবে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করবে তাও জানানো। অতঃপর তিনি সালাম ফিরানোর সাথে সাথে পূনরায় মুক্বীম মুছল্লীদেরকে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করার জন্য বলবেন। কেননা মাসবুক মুছল্লী থাকতে পারে। মুসাফির ইমাম সালাম ফিরানোর পর অবশিষ্ট দু’ রাকাত আদায় বা পূর্ণ করার সময় মুক্বীম মুছল্লী তাই পড়বে যা মুক্বীম ইমামের পিছনে উক্ত দু’ রাকাত আদায় করার সময় পড়ে থাকে। অর্থাৎ মুসাফির ইমামের পিছনে মুক্বীম মুছল্লী ক্বিরাআত তথা সূরা ফাতিহা শরীফ পড়বে না।
যেমন এ প্রসঙ্গে ফতওয়ার বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৪র্থ খ- ২৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَاِنْ صَلَّى الْمُسَافِرُ بِالْمُقِيْمِيْنَ رَكْعَتَيْنِ سَلَّمَ وَاَتَمَّ الْمُقِيْمُوْنَ صَلَاتَهُمْ ، كَذَا فِى الْهِدَايَةِ وَصَارُوْا مُنْفَرِدِيْنَ كَالْمَسْبُوقِ الَّا َانَّهُمْ لَا يَقْرَءُوْنَ فِى الْاَصَحِّ، هٰكَذَا فِىْ التَّبْيِيْنِ ، وَيُسْتَحَبُّ لِلْإِمَامِ أَنْ يَقُوْلَ : اَتِمُّوْا صَلَاتَكُمْ فَاِنَّا قَوْمُ سَفْرٍ، كَذَا فِى الْهِدَايَةِ .
অর্থ: কোনো মুসাফির যদি মুক্বীম মুছল্লীদের ইমামতি করেন তাহলে মুসাফির ইমাম দু’ রাকাত নামায পড়ে সালাম ফিরাবেন। আর মুক্বীম মুছল্লীরা তাদের (অবশিষ্ট) দু’রাকাত পূর্ণ করবেন। অনুরূপ হিদায়া কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। তারা অর্থাৎ মুক্বীম মুছল্লীরা মাসবূক মুছল্লীর ন্যায় একা একা হয়ে যাবে। কিন্তু বিশুদ্ধ মতে তারা ক্বিরায়াত পড়বে না। ইহা তাবয়ীন কিতাবে বর্ণিত আছে। আর (মুসাফির) ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে, সালাম ফিরানোর পর বলে দেয়া যে, আপনারা নিজ নিজ নামায পূর্ণ করুন। কেননা আমরা মুসাফির দল। অনুরূপ হিদায়া কিাতবের মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে।
মোটকথা, হানাফী মাযহাবের সকল ইমামের ঐক্যমতে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সর্বপ্রকার নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণ ক্বিরাআত পড়বে না। এমনকি সূরা ফাতিহা শরীফও পড়বে না। বরং ইমামের পিছনে মুক্তাদীর চুপ থাকা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। তাই, যে কোন প্রকার নামাযেই মুক্তাদীর ক্বিরাআত বা সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করা মাকরূহ্ তাহরীমী ও হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে।
যেমন “মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَلَايَقْرَأُ الْـمُؤْتَـمَّ بَلْ يَسْتَمِعُ حَالَ جَهْرِ الْاِمَامِ وَيَنْصِتُ حَالَ اِسْرَارِه لِقَوْلِه تَعَالٰى وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَه وَاَنْصِتُوْا وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْفِيْكَ قِرَاءَةُ الْاِمَامِ جَهْرًا وَخَافَتْ ..... قُلْنَا اِنْ قَرَأَ الْـمَاْمُوْمُ الْفَاتـِحَةَ اَوْ غَيْرَه كُرِهَ ذٰلِكَ تَـحْرِيْـمًا.
অর্থ: “ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণ ক্বিরাআত পড়বে না। বরং ইমামের প্রকাশ্যে ক্বিরাআত পড়া অবস্থায় মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে এবং ইমামের চুপে ক্বিরাআত পড়া অবস্থায় মুক্তাদীগণ চুপ থাকবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করা হবে তখন তোমরা মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে এবং চুপ করে থাকবে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইমামের ক্বিরাআতই তোমার জন্য যথেষ্ট, চাই প্রকাশ্য হোক অথবা চুপে চুপে হোক। আর যদি মুক্তাদী পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ অথবা অন্য কোন সূরা পড়ে তাহলে মাকরূহ তাহরীমী হবে। ”
“রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَلَا الْفَاتِـحَةُ فِى السِّرِّيَّةِ اِتِّفَاقًا ........ اَىْ بَيْنَ اَئِمَّتِنَا الثَّلَاثَةِ.
অর্থ: “মুক্তাদীগণ ইমামের পিছনে কোন নামাযে কোন ক্বিরাআত এমনকি সূরা ফাতিহা শরীফও পড়তে পারবে না। চাই প্রকাশ্য নামাযেই হোক অথবা অপ্রকাশ্য (চুপে চুপে) নামাযেই হোক। ” এমনকি আমাদের তিনজন ইমাম অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা একমত হয়ে এর উপরই ফতওয়া দিয়েছেন। ”
“মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৪০ পৃষ্ঠার ২নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
اگر مقتدی قرات کرد نماز مکروہ تحریمی شود-
অর্থ: অতঃপর যদি কোন মুক্তাদী ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়ে তাহলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। ”
“মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৪০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
مقتدیرا قرأت حرامست.
অথ: “ইমামের পিছনে মুক্তাদীর জন্য ক্বিরাআত পড়া হারাম। ”
অনুরূপ “আনওয়ারে মাহমুদা” কিতাবের ৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
مقتدی کیلئے قرات پر ھنا حرام ھے-
অর্থ: “ইমামের পিছনে মুক্তাদীর ক্বিরাআত পড়া হারাম। ”
অতএব, মাদরাসা বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকের উক্ত মাসয়ালাটি অসম্পূর্ণ হয়েছে। মাসয়ালাটি পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণনা করা উচিত ছিল। তখন আর কেউ বিভ্রান্তিতে পড়তো না।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)