মুসলমানদের স্বর্ণালী ইতিহাস
, ১০ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আদমশুমারি ও জরিপ:
খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জাতীয় অর্থের সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য সর্বপ্রথম লোকগণনা বা আদমশুমারি ও জরিপের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মূলত সব বিষয়ে সুষম বণ্টনকার্য সম্পন্ন করার জন্য একটি আদমশুমারির প্রয়োজন হয় এবং পৃথিবীর ইতিহাসে দেশীয় রাজস্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে এটাই সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ আদমশুমারি। আদমশুমারির মূল উদ্দেশ্য ছিলো:
১. কোথায় কি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, কোথায় খাদ্য কম বা বেশি আছে, কি পরিমাণ খাদ্য দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
২. মোট চাষাবাদের জমির পরিমাণ কতটুকু, বর্তমানে চাষাবাদ কতটুকু করা হচ্ছে, বাকিগুলো জমিতে চাষাবাদ না হওয়ার কারণ, কি পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব এবং এখন কি পরিমাণ দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৩. মোট জনসংখ্যা কত, কোন কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় কি পরিমাণ মানুষ বেশি/কম আছে বা জন বসতি বেশি/কম আছে, কেন বেশি/কম, সুষম বণ্টন করতে কি কি দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৪. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় মসজিদ-মাদরাসা-মক্তব কি পরিমাণ বা বেশি বা কম আছে, কতগুলো কোথায় লাগবে, ইমাম-মুয়াজ্জিন-মুয়াল্লিম বেশি, না কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৫. রাস্তা-ঘাট-পুল-খাল বা নদী-নালা কোথায় কি পরিমাণ বেশি/কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৬. শিক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন মজলিসে শূরার ভবন, ক্বাযীর ভবন প্রভৃতি কি পরিমাণ বা বেশি/কম আছে তা নির্ণয় করা।
৭. খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ কোথায় কি পরিমাণ বা বেশি/কম আছে তা নির্ণয় করা।
৮. খিলাফতের আওতায় কি পরিমাণ বিধর্মী আছে, কোন কোন ধর্ম কি পরিমাণ লোক পালন করে তা নির্ণয় করা।
৯. যাকাত-উশর, কর বা জিযিয়া কর কোথায় কি পরিমাণ আদায় হয় বা হয় না তা নির্ণয় করা।
১০. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় শিক্ষার হার তথা আলিম, ত্বলিবে ইলিম, মূর্খ বা অশিক্ষিত কি পরিমাণ আছে তা নির্ণয় করা।
এ রকম শত শত বিষয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আদমশুমারি ও জরিপ করেন খলীফাতুল মুসলিমীন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি। খিলাফতের রাজধানী বা প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রশাসনিক কাজে পবিত্র মদীনা শরীফ ব্যবহার করতেন। অন্যান্য বিষয় প্রদেশ, জেলা, মহকুমায় প্রায় সমহারে রাখতেন। এক প্রদেশ, জেলায়, মহকুমায় সবাই ভিড় লাগাতে পারতেন না। প্রয়োজনও হতো না। কেননা সব জায়গায় সমান হারে সব কিছু রেখেছিলেন তিনি। যা সত্যি পৃথিবীর ইতিহাসে একক এবং অদ্বিতীয়।
জনহিতকর কাজ:
জনহিতকর কার্যাবলী ছিল খলীফাতুল মুসলিমীন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসন ব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। উনার শাসনামলে অসংখ্য মসজিদ, জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র তথা মাদরাসা-মক্তব, লঙ্গরখানা, হাম্মামখানা, খাল, রাস্তা, সেতু, দুর্গ, হাসপাতাল প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক ও প্রশাসনিক ভবন বিভিন্ন জেলায় জেলায় এমনকি মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠে। সব জায়গায় প্রায় সমহারে সব বিষয়গুলি রাখতেন। কিছু দূর দূর রাস্তার পথচারীর জন্য পানি এবং বিশ্রাম নেয়ার মতো ব্যবস্থা রেখেছিলেন পুরো খিলাফতী এলাকা জুড়ে। জনগণের পানির অসুবিধা দূর করার জন্য তিনি টাইগ্রীস নদী হতে বছরা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাইল খাল খনন করেন। এছাড়া সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য খাল ছিল আমীরুল মু’মিনীন খাল। লোহিত সাগর থেকে নীলনদের সংযোগ রক্ষাকারী এ খাল ব্যবসা-বাণিজ্যের পথকে সুগম করেছিলো। তিনি কূফা, বছরা ও ফুসতাত নামে তিনটি নতুন শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই তিনটি শহর পরবর্তীকালে বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ: সে সময় ফুসতাত শহরে ৩৬টি মসজিদ, ৮০০ সড়ক এবং ১১৭০টি গোসলখানা (হাম্মামখানা) নির্মাণ করেছিলেন।
-মুহম্মদ আবদুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৫)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)