মুসলমানদের ক্ষমতা হারানোর কারণ: জ্ঞান চর্চা থেকে দূরে সরে আসা (১)
, ১০ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আপনাদের মতামত
স্বর্ণযুগে মুসলমানরা সারা বিশ্বজুড়ে শাসন করেছিলেন, এই ইতিহাস আমরা পাঠ করি। কিন্তু এর পেছনে ছিলো মুসলমানদের জ্ঞান চর্চার বিস্তর ইতিহাস। মুসলমানরা সেই সময় জ্ঞান চর্চাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরয।” হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “জ্ঞান হচ্ছে সমস্ত কল্যাণের মূল, আর অজ্ঞতা হচ্ছে সমস্ত অকল্যাণের মূল।” এ কারণে ছাহাবীগণ সব সময় নিজেদের জ্ঞান চর্চায় আবদ্ধ রাখতেন। জ্ঞান চর্চাকে মুসলমানরা কতটা গুরুত্ব দিতেন, এটা বুঝা যায়, বদর যুদ্ধের বন্দি মুক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বদর যুদ্ধে যুদ্ধবন্দীদের যারা অক্ষরজ্ঞান সমৃদ্ধ ছিলো, তারা মুসলমানদের মধ্যে যাদের অজ্ঞরজ্ঞান ছিলো না, তাদের অক্ষর জ্ঞান দেয়ার মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারতো। অর্থাৎ জ্ঞানও মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তা মুসলমানরা দেখিয়ে দিয়েছেন। ঐ সময় ছাহাবীগণ জ্ঞান চর্চার জন্য সবকিছুকে তুচ্ছ করতেন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবনী মুবারকে দেখা যায়, তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর সবকিছু বাদ দিয়ে আখেরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন এবং হাদীছ শরীফ মুখস্ত করতেন। তিনি এ কাজ করতে গিয়ে রুটি-রুজি রোজগারে সময় ব্যয় করতেন না। এতে অনেক সময় তিনি ক্ষুধার যন্ত্রনায় কাতর হয়ে অচেতন হয়ে পড়তেন। অনেকে উনাকে দেখে ভাবতো, উনাকে জ্বীনে ধরেছে। কিন্তু বাস্তবে উনার খেয়াল ছিলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে পবিত্র জ্ঞান হাছিল করা। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন সর্বাধিক হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছাহাবী। সুবহানাল্লাহ!
ইংরেজীতে একটা কথা আছে, নলেজ ইজ পাওয়ার। জ্ঞান হচ্ছে শক্তি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে জ্ঞান হাছিল করে তার বাস্তব প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন। যার কারণে সারা পৃথিবী খুব কম সময়ের মধ্যে মুসলমানদের করায়ত্বে চলে আসে। অনেক শক্তিশালী সাম্রাজ্যের পতন হয়ে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয়। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবনীতে পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই, তিনি স্বর্ণখজিত কাপ্তানের কাপড় উনার নাক মোছার জন্য ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ কেউ যখন জ্ঞান চর্চা করে এবং সেই জ্ঞান বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারে, তখন তার কাছে ক্ষমতা, সম্পদ আসতে বাধ্য।
পৃথিবীতে যে কোন কিছু লাভ করতে হলে ৩টি জিনিস ব্যয় করতে হয়। ১. জ্ঞান, ২. সময় এবং ৩. অর্থ। এর একটি বিনিময় করে আবার অপরটি পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে উপরে অবস্থান করে জ্ঞান, অতঃপর সময় এবং শেষে অর্থ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ভুল বুঝে দৃষ্টি যখন তৃতীয় বিষয়ে (অর্থ) চলে যায়, তখন প্রথম বিষয়ের (জ্ঞান) সন্ধান সে পায় না।
এজন্য মুসলমানদের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম বলেছেন, “জ্ঞান অর্থ সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা, জ্ঞান তোমাকে পাহারা দেয়, কিন্তু অর্থকে উল্টো পাহারা দিতে হয়। জ্ঞান হল শাসক, আর অর্থ হল শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায়।”
বর্তমানকালে মুসলমানদের মধ্যে জ্ঞান চর্চার বিষয়টি নেই বললেই চলে। মুসলসানরা শুধু সম্পদের পেছনে দৌড়ায়। এবং যতটুকু জ্ঞান চর্চা করে সেটাও সম্পদ পাওয়ার জন্য। পাশ করে সার্টিফিকেট পাবে, আর সেই সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী পাবে, চাকুরী পেলে টাকা পাবে, ব্যস এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ সবকিছু। অনেক উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্ত লোককে দেখেছি, তার পয়সা কামানোর জন্য যতটুকু জ্ঞান দরকার, সেটুকুই জানে। তার বাইরে তেমন পড়ালেখাই নেই। কামাই-রোজগারের বাইরে ছোট একটা বইও পড়ার ধৈর্য্য হয় না তাদের।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুসলমানদের দমিয়ে রাখতেই ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ বুলি
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
এ সকল মুখোশধারীদের আসল পরিচয় অনেকেরই অজানা!
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১০ ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়া একটি ভয়াবহ চক্রান্ত
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তাহলেই রাজধানী হবে সমস্যামুক্ত
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুলুমতন্ত্র থেকে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করুন
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
উপজাতিদের যেভাবে উস্কানি দিচ্ছে এনজিওগুলো
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাও একসময় মুসলমান ছিলো
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাবার খাবেন কোথায়?
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের রক্তাক্ত ইতিহাস, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান
১৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
জায়নবাদী ইহুদী পরিকল্পনার গোপন দস্তাবেজ
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মীরা কখনোই চায়নি, এখনও চায় না মুসলমানদের উন্নতি
১৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)