ইলমে তাছাউফ
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
, ০৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইলমে তাছাউফ
যে ব্যক্তি কোনো কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হতে চায়, তার জন্য বাইয়াত হওয়ার পূর্বে শর্ত হলো তাহক্বীক্ব করে অর্থাৎ যাচাই-বাছাই করে বাইয়াত হওয়া।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ سِيْرِيْنَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اِنَّ هٰذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَاْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ
অর্থ : হযরত ইবনে সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই পবিত্র ইলমই হচ্ছে পবিত্র দ্বীন। অতএব, তোমরা কার নিকট থেকে পবিত্র ইলম গ্রহণ বা শিক্ষা করছো, উনাকে দেখে নাও। অর্থাৎ উনার আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত কিনা, তা যাচাই-বাছাই করে নাও। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
যে বিষয়গুলো তাহক্বীক্ব করতে হবে তার থেকে জরুরী কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলো-
(১) যার কাছে বাইয়াত হবে তিনি কোনো হক্কানী ওলীআল্লাহ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে খিলাফতপ্রাপ্ত কিনা।
(২) আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুরূপ কিনা।
(৩) আমলের দিক থেকে সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ পাবন্দ কিনা।
(৪) পবিত্র ইলমে দ্বীন এতটুকু অর্জন করেছেন কিনা, যার দ্বারা নিজেকে এবং অধীনস্থ মুরীদদেরকে হারাম-নাজায়িয, বিদয়াত-বেশরা, কুফরী-শিরকী, বেদ্বীনি ও বদ দ্বীনি থেকে ফিরিয়ে হক্ব মতে পথে দায়িম-কায়িম রাখতে পারেন।
আর মুরীদ হওয়ার পরে কোনো প্রকার চু-চেরা, কিল ও কাল অর্থাৎ কোনো বিষয়ে কি, কেন বলতে পারবে না। বিনা প্রশ্নে সব বিষয় মেনে নিতে হবে। তবে হ্যাঁ, কোনো বিষয় বুঝে না আসলে আদবের সাথে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবে।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, একবার এক ব্যক্তি বিশিষ্ট ওলী হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার জন্য আসলো। এসে বললো, হুযূর! আমাকে বাইয়াত করে মুরীদ করে নিন।
খালিক্ব¡ মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তাকে বললেন, বাবা! বাইয়াত হওয়ার বিষয়টি অনেক কঠিন। তুমি কি ছূফী উনাদের চাকচিক্যময় কথা শুনে বাইয়াত হতে এসেছো? যদি এ উদ্দেশ্যে এসে থাক তাহলে ফেরত চলে যাও। আর তা না হয়ে যদি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রিযামন্দি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে এসে থাকো এবং এজন্য তোমার জান বাজি রাখতে পার তাহলে তুমি বাইয়াত হতে পার। সে ব্যক্তি বললো, হুযূর! আমি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রিযামন্দি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে এসেছি। লোকটির কথা শুনে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী প্রথমেই তাকে পরীক্ষা করার জন্য কালিমা শরীফ পাঠ করতে বললেন। সে ব্যক্তি কালিমা শরীফ পাঠ করলো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”
তিনি বলেন : না, তুমি এভাবে পাঠ করো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ اَبُوْ بَكْرٍ شِبْلِىْ رَسُوْلُ اللهِ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আবূ বকর শিবলী রসূলুল্লাহ”
এটা শুনে সে ব্যক্তি ভয় পেয়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে সে চলে গেলো। কিছু দূর যাওয়ার পর সে মনে মনে ফিকির করতে লাগলো, হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তো মশহূর ওলী, বিখ্যাত আলিম, উনার মতো ব্যক্তিত্ব তো কালিমা শরীফ পরিবর্তন করে তা’লীম দেয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই এমন তা’লীম দেয়ার পিছনে কোনো না কোনো রহস্য নিহিত রয়েছে। তাই সে পুনরায় আসলো এবং বললো, হুযূর! আমাকে বাইয়াত করান।
তিনি আবারো তাকে কালিমা শরীফ পাঠ করতে বললেন, সে ব্যক্তি পূর্বের মতোই পাঠ করলো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
তিনি বললেন, না। তুমি পাঠ করো-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ اَبُوْ بَكْرٍ شِبْلِىْ رَسُوْلُ اللهِ
সে ব্যক্তি তাই পাঠ করলো। যখন পাঠ করলো তখন তিনি বললেন : হে ব্যক্তি! তুমি ইস্তিগফার তওবা করো।
কারণ পবিত্র কালিমা শরীফ তো এমন নয়, আমি পবিত্র কালিমা শরীফ উনার এমন ব্যতিক্রম তালিম দিয়ে তোমাকে পরীক্ষা করে দেখলাম তুমি আমার আদেশ নিষেধ মুবারক পালনের প্রতি কতটুকু দৃঢ়চিত্ত। তোমার হুসনে যন সুধারনা কতটুকু গভীর সেটা দেখা। কারন স্বীয় শায়েখ কিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সুদৃঢ় হুসনে যন তথা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষন করা ব্যাতীত কোন সালিক বা মুরীদের পক্ষে কষ্মিনকালেও ইছলাহ হাসিল করা সম্ভব নয়। যখন তুমি স্বীয় শায়েখ কিবলা আলাইহিস সালাম উনার আদেশ নিষেধ মুবারক বিনা চু-চেরা, বিনা প্রশ্নে, বিনা সন্দেহে মেনে নিয়ে আমলে বাস্তবায়নের কোশেশ করতে পারবে তখনই কেবল মুরীদ হওয়া এবং বাইয়াত হওয়া সার্থক হবে। সুবহানাল্লাহ!
মূলত কামিল শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মক্বাম।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلشَّيْخُ فِىْ اَهْلِهٖ كَالنَّبِىِّ فِىْ اُمَّتِهٖ وَفِىْ رِوَايَةٍ اَلشَّيْخُ لِقَوْمِهٖ كَالنَّبِىِّ فِىْ اُمَّتِهٖ
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের উম্মতের নিকট যেরূপ সম্মানিত ও অনুসরণীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার মুরীদের নিকট তদ্রƒপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়। (মাকতুবাত শরীফ, দায়লামী শরীফ, জামিউল জাওয়ামে, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ, তানযীহুশ শরীয়াহ, আল মীযান, আল জামিউছ ছগীর, আদ দুরারুল মুনতাশিরাহ ইত্যাদি)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সরাসরি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে যাহির-বাতিন ইছলাহ লাভ করেছেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক-রিযামন্দি মুবারক হাছিল করেছেন।
পরবর্তী উম্মত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মক্বাম হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ও উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে যাহির-বাতিন ইছলাহ লাভ করে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত, মা’রিফাত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করবে।
অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক-রিযামন্দি মুবারক কিভাবে হাছিল করা যায় সে বিষয়টি সম্পর্কে হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই পূর্ণ ওয়াকিফহাল। যে কারণে পবিত্র ইলমে তরীক্বত উনার কিতাব ‘দেওয়ানে হাফিয’-এ বর্ণিত রয়েছে-
بمئے سجادہ رنگین کن گرت پیر مغاں گوید +کہ سالک بے خبر نبود زراہ ورسم منزلھا.
অর্থ : তোমার জ্ঞানবৃদ্ধ শায়েখ ক্বিবলা যদি বলেন, তুমি তোমার জায়নামায শরাব দ্বারা রঙিন করে নাও, তবে তা করে নিও। কারণ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে হাছিল করার পথ ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে হযরত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই সম্যক অবগত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: ইলমে তাছাউফ উনার দৃষ্টিতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলমে তাছাউফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)