ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৪)
, ৬ই রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৮ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২০ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইলমে তাছাউফ

কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
উল্লেখ্য যে, “বেলায়েতে মূসাউয়ী” (হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার বেলায়েত) থেকে “বেলায়েতে খাছ্ছাহ” তথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেলায়েতের আওতাভুক্ত করা, সালিকে মাজ্জুব থেকে মাজ্জুবে সালিকের গ-িভুক্ত করা এবং অতি সাধারণ মুরীদকে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ্ দিয়ে তার অন্তর থেকে বদ খাছলতগুলো দূর করে সৎ গুণাবলী প্রবেশ করিয়ে কামিলে মুকাম্মিলে পরিণত করা ওলীআল্লাহগণ উনাদের পক্ষে অসম্ভব নয়।
কুতুবুল আকতাব, হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখ্তিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতিদিন চল্লিশজন লোককে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ্ দিয়ে আবদালের দরজায় পৌঁছে দিতে পারতেন। সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কত শত-সহস্র কাফির, ফাসিক-ফুজ্জার লোককে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ্ দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী করে দিয়েছেন তা বলাবাহুল্য।
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক দৃষ্টিতে কত অসংখ্য লোক মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব বান্দাতে পরিণত হয়েছেন তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। এমনিভাবে অনেক আউলিয়ায়ে কিরাম আছেন, যাদের নাম মুবারক উল্লেখ করলে বিরাট আকারের কিতাব রচিত হবে। এক কথায় মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বা একান্ত মনোনীত এবং মদদপ্রাপ্ত মাহবুব মক্ববুল বান্দা যারা রয়েছেন অর্থাৎ কামিল শায়েখ উনারা খোদায়ী ক্ষমতা বলে বলিয়ান। কাজেই এ সমস্ত বিষয় উনাদের নিকট কোন বিষয়ই না। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
اولياء را هست قدرت از اله تير جسته باز گردانند زراه.
অর্থাৎ “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে এমন ক্ষমতা দান করেছেন যে, ইচ্ছা করলে উনারা নিক্ষিপ্ত তীরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই ফিরিয়ে আনতে পারেন। ” সুবহানাল্লাহ!
সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত ছাহেবযাদা হযরত মুহম্মদ ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে “বেলায়েতে মূসাউয়ী” থেকে “বেলায়েতে খাছ্ছাহ” -এর আওতাভুক্ত করা কোন কঠিন কাজ ছিলো না।
জানা আবশ্যক যে, “বেলায়েতে খাছ্ছাহ” হচ্ছে “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ বেলায়েত। ” যা মাজ্জুবে সালিকের জন্য নির্ধারিত। আর সালিকে মাজ্জুবগণ ঐ বেলায়েত হতে কোন প্রকার হিস্সা বা অংশ হাছিল করতে পারে না। অবশ্য কোন মহান শায়েখ যদি দয়া-ইহসান করে কোন মুরীদকে বিশেষভাবে তরবীয়ত বা লালন-পালনের মধ্য দিয়ে এমন কোন পূর্ণ জয্বা দান করেন তবে সেটা ভিন্ন কথা।
উল্লেখ করা যেতে পারে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ তরবীয়তের ফলে জয্বার ফয়েজ প্রাপ্ত হন এবং বেলায়েতে খাছ্ছাহ’র মর্তবায় উপনীত হন। খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অবশিষ্ট তিনজন খলীফাগণের অবস্থা হয়েছিলো ভিন্নরূপ। উনাদের জয্বা (মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক আকর্ষণ) উনাদের সুলূকের আগেই হয়েছিলো। আর স্বয়ং আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও এ অবস্থা ছিলো। (মায়ারিফে লাদুন্নিয়া)
কাজেই তরীক্বতের পথে আত্মিক উন্নতির ক্ষেত্রে স্বীয় শায়েখের সাথে মুরীদের সম্পর্ককে গভীর করা, পৃথিবীর সব কিছুর উপর উনার মুহব্বত মুবারককে প্রাধান্য দেয়া যেমন আবশ্যক তেমনিভাবে মুরীদের নিজ হাল বা অবস্থাকে প্রতিনিয়ত মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে জানানো একান্ত জরুরী। আর এটাই হচ্ছে আউলিয়ায়ে কিরামগণের অনুসৃত পথ এবং আত্মিক উন্নতি লাভের অন্যতম সোপান।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট মুরীদ, মোল্লা আহমদ বার্কী তার হাল বা অবস্থা সম্পর্কে স্বীয় শায়েখকে অবহিত করে লিখেন- “ইতোপূর্বে যেরূপ উৎসাহ উদ্দীপনা, আশা আকাঙ্খা ছিলো, বর্তমানে তা নিজের মধ্যে পাচ্ছি না এবং এটাকে নিজের অবনতি বলে ধারণা করছি। ”
তার জাওয়াবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, “বৎস! অবগত হও, ইতোপূর্বে তোমার যে অবস্থা ছিলো তা লম্ফ-ঝম্ফধারী এবং গান-বাদ্যকারীদের অবস্থার অনুরূপ। এখন দেহের যে অবস্থা এসেছে তাতে দেহের কোন অংশ নেই। কল্ব্, রূহ বা অন্তঃকরণ ও আত্মার সহিত তার সম্পর্ক অধিক। অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থা প্রথম অবস্থা হতে উচ্চতর। সুতরাং আকাঙ্খা ও মনের প্রফুল্লতা এখন অনুভব না হওয়াটাই অনুভব হওয়া অপেক্ষা বহুগুণ উর্ধ্বে। কেননা নিসবত বা সম্বন্ধ যতই অজ্ঞতা ও অস্থিরতার দিকে ধাবিত হয় এবং দেহ হতে যত দূরেই নিক্ষিপ্ত হয়, ততই শ্রেষ্ঠত্ব ও কাঙ্খিত বস্তু প্রাপ্তির নিকটবর্তী হয়ে থাকে। তথায় (মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট) অক্ষমতা ও অজ্ঞতা ব্যতীত অন্য কিছুর অবকাশ নেই। সেখানে অজ্ঞতাকেই “পরিচয়” প্রাপ্তি বলা হয় এবং অক্ষমতাকেই “অনুভূতি” নাম প্রদান করা হয়। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)