ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩০)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ১৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২২ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২০ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
উল্লেখ্য, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই ব্যতীত কেউ কোনদিন মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব হতে পারেনি। যার পরীক্ষা-নিরীক্ষা যতবেশী, তিনি ততবেশী মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি ছিলেন তদানিন্তন সময়ের শ্রেষ্ঠ আলেম। তারপরেও হযরত শায়েখ উনার আদেশ যথাযথ তামিল করতে তার স্বভাব বিরোধী এবং শরীয়ত বহির্ভূত হারাম কার্যকলাপ সম্পাদন করতে রাজী হয়েছিলেন। তবে সেক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নিজের মেয়ে ও ছেলেদ্বয়কে স্বীয় শায়খের নিকট পেশ করেছিলেন। সম্মানিত শায়েখ যখন দেখলেন তার জাহিরী ইলিমে কোন ফখর নেই। উনার আদেশ-নিষেধের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ও একান্ত নিবেদিত তখন তিনি সে নেয়ামতের খাজিনা, ইলমে লাদুন্নী প্রদান করে নেয়ামতকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিলেন।
কাজেই, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম তথা কামিল শায়িখগণের আমল বা কার্যকলাপগুলো জাহিরীভাবে অসামঞ্জস্যশীল মনে হলেও তা বাতেনী রহস্যে ভরা। সেক্ষেত্রে বাহ্যিক দিকের প্রতি লক্ষ্য করে কোনরূপ বিরূপ মন্তব্য পেশ করা নিতান্তই বোকামীর নামান্তর। যার জন্য পরবর্তীতে মাশুল দিতে হয় চরমভাবে, উপরন্ত লজ্জার সীমা থাকেনা।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, একবার সুদূর এলাকা থেকে দু’জন ছূফী লোক তাজুল আরেফীন হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে আগমন করলেন। উনারা উনার দরবার শরীফে পৌঁছে জানতে পারলেন যে, তিনি কি এক বিশেষ প্রয়োজনে বাদশাহর দরবারে গিয়েছেন। এ খবর শুনে ছূফী দু’জনের মন উনার প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠলো। উনারা ভাবলেন, একজন ওলীআল্লাহর পক্ষে বাদশাহর দরবারে যাতায়াত করা তো শোভনীয় নয়। এই যদি উনার অবস্থা হয়, তাহলে উনার সাথে সাক্ষাত করে কি হবে? এই চিন্তা করে দুই ছূফী সেই ওলীআল্লাহর দরবার শরীফ থেকে বের হয়ে স্বদেশ অভিমুখে প্রত্যাবর্তন করলেন।
বর্ণিত রয়েছে যে, উনাদের একজনের খেরকার (জামা) একটি জেব (পকেট) ছেঁড়া ছিল, তা সেলাই করে নেয়ার উদ্দেশ্যে উনারা দু’জনই পথিমধ্যে বাজারে এক দর্জির দোকানে গেলেন। ওই দোকানে উপস্থিত থাকাকালে দর্জির একখানা কাচি হারিয়ে গেল। কাচিটি না পেয়ে দর্জি উনাদেরকে চোর সাব্যস্ত করে দু’জনকেই বাদশাহর দরবারে নিয়ে হাজির করলো। ঘটনাক্রমে তাজুল আরেফীন হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখনও বাদশাহর দরবারেই ছিলেন। বাদশাহ বিচারে দু’জন ছূফীরই হাত কর্তনের নির্দেশ দিলেন। তখন হযরত আবদুল্লাহ খাফীফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে নিরপরাধ বলে সুপারিশ করে বাদশাহর দ-াদেশ থেকে মুক্ত করলেন।
অতঃপর তিনি ছূফী দু’জনকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা আমার সম্পর্কে যে ধারণা করেছিলেন তা নিতান্তই অমূলক। আপনাদের এ বিপদ থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই আমাকে আজ বাদশাহর দরবারে আগমণ করতে হয়েছে। মূলতঃ এ জাতীয় প্রয়োজনে আমাকে মাঝে মাঝে বাদশাহ এবং আমীর উমরাদের কাছে আসতে হয়। উনার কথা শুনে ছূফীদ্বয় উনাদের মনোভাবের জন্যে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। অতঃপর উনার কাছে ইলমে মা’রিফাতের দীক্ষা গ্রহণ করে দু’জনই বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ রূপে পরিগণিত হলেন। উল্লিখিত ঘটনার দ্বারা পরিষ্কার বুঝা গেল যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মকবুল বান্দাদের উপর কুধারণা রাখাও বিপদের কারণ।
উল্লেখ্য যে, হযরত মোল্লা জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী, বিখ্যাত আলেম। যার লিখিত কিতাব মাদরাসায় পড়ানো হয়। তিনি প্রথম জীবনে যখন ইলমে ফিক্বাহ শেষ করলেন, (উনি যেহেতু কিতাবে পড়েছেন যে,
الْعِلْمُ عِلْمَانِ: عِلْمٌ فِي الْقَلْبِ فَذَلٖكَ الْعِلْمُ النَّافِعُ، وَعِلْمٌ عَلَى اللِّسَانِ فَذَلٖكَ حُجَّةُ اللّٰهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى ابْنِ آدَمَ " (الدارمى، مشكوة)
ইলিম দু’প্রকার, একটা হচ্ছে- ইলমে ফিক্বাহ, আর একটা হচ্ছে- ইলমে তাছাওউফ। অর্থাৎ ক্বালবী ইলিম যেটা, সেটা ইলমে তাছাওউফ। যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া সম্ভব নয়। আরেকটি হচ্ছে জবানী ইলিম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ, যেটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি দলীলস্বরূপ। (মেশকাত শরীফ, দারেমী শরীফ)
কাজেই ইলমে তাছাওউফ অর্জনের উদ্দেশ্যে তখন তিনি একজন কামিল শায়েখ খুঁজতে লাগলেন। কারণ ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করাও ফরয। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (১)
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পিতা-মাতা জীবিত থাকতেই মুর্শিদ বা শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়া উচিত
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)