মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২)
, ১৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২২ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বরকে উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, উনার সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট হয়ে যাবে, অথচ তোমরা তা অনুধাবন করতে পারবেনা। (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ, আয়াত শরীফ ২)
তাফসীরে কুরতবী ও মাযহারীসহ অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, উদ্ধৃত আয়াত শরীফখানা মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবুব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে নাযিল হলেও হক্কানী-পীর মাশায়েখগণও তার আওতাভুক্ত।
এর হুকুম পর্যায়ক্রমে কিয়ামত পর্যন্ত যারা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া, হক্কানী-রব্বানী আলিম বা মহান আল্লাহ্ পাক উনার খালিছ ওলী হবেন উনাদের ক্ষেত্রেও জারী থাকবে। যেমন এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
একদা পথ চলার সময় হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার আগে আগে হাটছিলেন। ইহা দেখে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সাবধান করে বললেন, আপনি এমন ব্যক্তির অগ্রে চলছেন, যিনি ইহকাল ও পরকালে আপনার থেকে শ্রেষ্ঠ। তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ্ পাক উনার জমিনে এমন কোন ব্যক্তির উপরে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়নি, যে ব্যক্তি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম। অতএব উনার সামনে সামনে চলা অনুচিৎ। (তাফসীরে রুহুল বয়ান)
সুতরাং পীর-মাশায়েখগণের প্রতি কোন প্রকার বেয়াদবীমূলক বা কষ্টদায়ক আচরণ করলে মুরীদের সমস্ত নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং কুফরী অবস্থায় মারা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
আর বাস্তবে আমরা তাই দেখতে পাই, অনেক মুরীদ পূর্ণতা লাভের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পীর ছাহেবের দরবারে দীর্ঘদিন অবস্থান করা সত্ত্বেও পূর্ণতায় উপনীত হতে না পেরে পরিশেষে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। মূলতঃ এ ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে- আদবের প্রতি গুরুত্বারোপ না করা।
তাই বিখ্যাত বুর্যুগ হযরত জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেক বুর্যুগ ব্যক্তি বলেছেন-
بے ادب محروم گشت از لطف رب
অর্থ: “বেয়াদব মহান আল্লাহ্ পাক উনার রহমত হতে বঞ্চিত।”
স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার নৈকট্য প্রাপ্তির শ্রেষ্ঠতম পথটি বিনয়-নম্রতা, আদব বা শিষ্টতার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। তাই বলা হয়েছে-
اَلتَّصَوُّفُ كُلُّهُ اَدَبٌ
অর্থ: “তাছাউফ এর সমস্তটাই আদবের সাথে সংশ্লিষ্ট।”
অতএব যে যতবেশী আদব বা শিষ্টতা, বিনয় ও নম্রতা রক্ষা করে চলতে পারে, সে ততবেশী মহান আল্লাহ্ পাক উনার মা’রিফত-মুহব্বত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতঃ অতি অল্প সময়ে মহান আল্লাহ্ পাক উনার নৈকট্য লাভ করতে পারে।
তবে মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ রহমত ও সাকীনা, ফযল ও করম ব্যতীত কোন ব্যক্তির পক্ষে নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি পূর্ণ আদব রক্ষা করা সম্ভব নয়। যার জন্য মুরীদকে সে খাছ রহমত-সাকীনা লাভ করণার্থে কঠোর সাধনা, যিকির-ফিকির, মুরাকাবা, মুশাহাদায় আত্মনিয়োগ করতঃ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হয়। তবেই নিয়ামত হাছিল করা সম্ভব হয়।
কাজেই বিনয়-নম্রতা, আদব বা শিষ্টতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতঃ নিজেকে স্বীয় শায়েখ উনার মতের কাছে বিলীন করে দিতে হবে।
নিজেকে স্বীয় শায়েখ উনার আদেশ পালনার্থে কতটুকু বিলীন করতে হবে? এ প্রসঙ্গে তাযকিরাতুল আউলিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে- একবার এক ওলীআল্লাহ্ একটি সংকীর্ণ সিঁড়ির কথা উল্লেখ করে মুরীদদেরকে আদেশ করলেন যে, সে সিঁড়ি দিয়ে উনার উটটিকে ছাদে উঠাতে হবে। এ আদেশের পর অনেকেই চু-চেরা করে বলতে লাগলো- এরূপ সিঁড়ি দিয়ে কি করে উট ছাদে উঠানো সম্ভব? কিন্তু একজন মুরীদকে দেখা গেল তিনি তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে কোশেশ করছেন উটটিকে ছাদে উঠানোর জন্য। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তার কোশেশ দেখে খুশি হয়ে বললেন, “সে পারুক অথবা না পারুক, সেই আমার হুকুম তামিল করেছে। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার সন্তুষ্টির বদৌলতে উক্ত মুরীদ খুব সহজেই কামালত হাছিল করেছিল। কাজেই স্বীয় শায়েখের হুকুমকে বিনা চু-চেরায় তামিল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কবি হাফিজ বলেন-
بمے سجادہ رنگیں کن گرت پیر مغاں گوید کہ سالک بے خبر نبود زراہ ورسم منزلھا-
তোমার জ্ঞানবৃদ্ধ শায়েখ যদি বলেন, তবে তুমি তোমার জায়নামাযকে শরাব দ্বারা রঙ্গীন করে নাও। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে হাছিল করার পথ ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে তিনি অভিজ্ঞ। অতএব মুরীদকে দ্বিধাহীনচিত্তে তার শায়েখের কথা মেনে নিতে হবে। (অসমাপ্ত)
আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (৭)
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৪)
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ উনার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব (১)
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল ‘আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মু’জিযা শরীফ
০১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী যে কারণে (৬)
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২)
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)