ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৭)
সালিক বা মুরীদ তার গুরুত্বপূর্ণ সকল কাজ যথাযথ ভাবে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পরামর্শ অনুযায়ী করবে
, ০৭ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
وامرهم شورى بينهم.
অর্থাৎ উনাদের (মু’মিনদের) সকল কাজ-কর্ম পারস্পরিক পরামর্শক্রমে সম্পন্ন হয়।” (পবিত্র সূরা শুরা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়ার জমিনে উনার মনোনীত খলীফা বা প্রতিনিধি পাঠানোর পূর্বে এ বিষয়টি নিয়ে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে পরামর্শ করতঃ মানব জাতিকে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য জানিয়ে দিয়েছেন। সাথে সাথে পরামর্শের কাইফিয়ত (ধরণ) কিরূপ হওয়া উচিত তারও শিক্ষা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
واذ قال ربك للملائكة انى جاعل فى الارض خليفة قالوا اتجعل فيها من يفسد فيها ويسفك الدماء ونحن نسبح بحمدك ونقدس لك قال انى اعلم مالاتعلمون
অর্থ: “আর আপনার পালনকর্তা যখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললেন, আমি যমীনে আমার (খলীফা) প্রতিনিধি পাঠাতে চাই, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, আয় বারে ইলাহী! আপনি পৃথিবীতে এমন সম্প্রদায়কে পাঠাতে চান, যারা যমীনে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপ্রবাহিত করবে? অথচ আমরাই তো প্রতিনিয়ত আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার প্রশংসা মুবারক বর্ণনা করার জন্য আমরাই তো রয়েছি। তখন মহান আল্লাহ পাক বললেন, নিঃসন্দেহে আমি যা জানি আপনারা তা জানেন না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৩০)
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وشاورهم فى الامر فاذا عزمت فتوكل على الله ان يحب المتوكلين
অর্থ: তাদের সাথে পরামর্শ করুন। আর যখন কোন কাজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সুসম্পন্ন হয়, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করুন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাওয়াক্কুল কারীগণকে পছন্দ করেন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৯)
আলোচ্য আয়াত শরীফ নাযিলের পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা’লীম মুবারক দানের জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে অধিক পরিমাণে পরামর্শ করতেন এবং বলতেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য এই পরামর্শের কোন প্রয়োজন নেই, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পরামর্শকে আমার উম্মতের জন্য রহমতস্বরূপ করেছেন। (এই কারণেই আমি মূলত পরামর্শ করি) (বায়হাক্বী শরীফ ও ইবনে আদী)
উল্লেখ্য যে, উক্ত আয়াত শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নাযিল হলেও সমস্ত ঈমানদারগণই আওতাভুক্ত। কেননা কোন আয়াত শরীফ নাযিলের ক্ষেত্রে নুযুল বা অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটের বিষয়টি হচ্ছে খাছ। আর তার হুকুম আম। তাই পরবর্তীতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল উলিল-আমরসহ সমস্ত ঈমানদারগণ এর অন্তর্ভুক্ত।
আর মুরীদকে সঠিক পথ নির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে উলিল-আমর অর্থাৎ স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হচ্ছেন সর্বোৎকৃষ্ট ও উত্তম। কাজেই প্রত্যেক মুরীদের একান্ত কর্তব্য হচ্ছে, তার সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে পরামর্শ করা এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত সর্বান্তকরণে মেনে নিয়ে কাঙ্খিত ফলাফলের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করতঃ উক্ত সিদ্ধান্তের উপর দৃঢ় থাকা। এতেই তাদের যাবতীয় কল্যাণ ও সঠিক পথের দিক নির্দেশনা বিদ্যমান।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عن الحسن رضى الله عنه قال ما تشاور قوم قط الا هدوا لارشد امرهم
অর্থ: হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কোন সম্প্রদায় পরামর্শক্রমে কাজ করে, তখন তাদেরকে অবশ্যই সঠিক পথ নির্দেশ দান করা হয়। (আদাবুল মুফরাদ, তাফসীরে আদ দুররুল মানসুর ও মায়ারেফুল কুরআন)
বায়হাক্বী শরীফে আরো বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোন কাজের ইচ্ছা করে এবং তাতে পরামর্শ গ্রহণ করে তখন মহান আল্লাহ পাক তাকে সঠিক বিষয়ের দিকে ধাবিত করেন। অর্থাৎ যে কাজের পরিণতি তার জন্য মঙ্গলজনক ও উত্তম হয়, সে কাজের দিকে তার মনের গতি ফিরিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)