ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৫)
, ১৮ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মূলতঃ আবহমানকাল হতে যারা খাছ ও খাঁটি ওলীআল্লাহ হয়েছেন, উনারা সকলেই স্ব-স্ব শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ ও নিষেধের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল ছিলেন। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইজাযত না পাওয়া পর্যন্ত শায়েখ উনার খানকা শরীফ হতে উনারা প্রস্থান করতেন না। এমনকি এক্ষেত্রে যদিও শরীয়তের কোন গুরুত্বপূর্ণ আমল ব্যহত হতো তথাপিও সেই সকল ব্যক্তিগণ উনারা উনাদের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত মুবারককেই প্রাধান্য দিয়ে তথায় অবস্থান করতেন।
এ প্রসঙ্গে আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, ক্বাইয়ূমে আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি মশহূর ওয়াক্বিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আগমন সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হিজরী সনের একাদশ শতাব্দীর প্রথমে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারকের অনুরূপ। দুই অত্যাচারী শাসকের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি আর্বিভূত হবেন এবং উনার শাফায়াতে অসংখ্য লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ!
মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি জাহিরী ইলিমের সকল শাখায় বুৎপত্তি হাছিল করেন। সর্বপ্রথম স্বীয় বুযূর্গ পিতা এবং অতি উচু স্তরের ওলীআল্লাহ হযরত শায়েখ আব্দুল আহাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছেই তিনি তাছাওউফের তা’লীম নেন এবং অতি অল্প সময়েই কামালত হাছিল করেন। তিনি একে একে ১৭টি সিলসিলা হতে খিলাফত লাভ করেন। কিন্তু এরপরও উনার বিদগ্ধচিত্ত যেন প্রশান্তি লাভ করতে পারছিল না। তিনি আরো অধিকতর নৈকট্য বিশেষতঃ নকশবন্দীয়া ত্বরীকার নিসবত মুবারক লাভের জন্য অতীব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সে সময়ে ভারত উপমহাদেশে নকশবন্দীয়া ত্বরীকার প্রচার-প্রসার তেমন ছিল না। নকশবন্দীয়া ত্বরীকার কোন বুযূর্গের সন্ধানও তখন মিলত না। নকশবন্দীয়া ত্বরীকার ইমাম ছিলেন মুজাদ্দিদে যামান হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নক্শ্বন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জানালেন, হযরত খাজা আমাকাঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে নিয়ামত হাছিল করতঃ হিন্দুস্থানে গিয়ে হিদায়েতের কাজে আত্মনিয়োগ করতে। নির্দেশ মুবারক মুতাবিক হযরত বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খাজা আমাকাঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছ থেকে নিয়ামত হাছিল করলেন। অতঃপর হযরত খাজা আমাকাঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হিন্দুস্থানে গিয়ে নকশবন্দীয়া ত্বরীকা প্রচার-প্রসারের কথা বললেন। এই প্রধান দায়িত্ব পালনে তিনি আযীযী ইনকেছারী পেশ করলেন। হযরত খাজা আমাকাঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, সেখানে আপনার নিকট এমন এক ব্যক্তিত্ব্যের প্রকাশ ঘটবে যার উছীলায় এই ত্বরীকাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিবেন।
হযরত আমাকাঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই দোআ মুবারক নিয়ে হযরত বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি যথা সময়ে দিল্লীতে হাজির হলেন। এদিকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন পবিত্র হজ্জ সম্পাদনের জন্য সিরহিন্দ শরীফ থেকে রওয়ানা হয়ে দিল্লীতে পৌঁছলেন। দিল্লীতে উনার একজন পীর ভাই হযরত হাসান কাশ্মীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত হলে তিনি জানালেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে যে নকশবন্দীয়া ত্বরীকার নিয়ামত হাছিলের জন্য একজনকে খুঁজতেছিলাম। সেই নকশবন্দীয়া ত্বরীকার একজন বুযূর্গ ব্যক্তি পাওয়া গেছে। এখন তিনি এই দিল্লী শহরেই আছেন। উনার নাম হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার এক ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মঞ্জিলে মকছূদে পৌঁছিয়ে দেয়। একথা শুনে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আমিতো এখন হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি।” এখানে দেরী করলে তো আমার হজ্জের সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে। হযরত হাসান কাশ্মীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনি তাহলে কেবল একটু দেখা করেই আসেন। এতে সম্মত হয়ে তিনি হযরত বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারকে হাজির হলেন। উনাকে দেখামাত্রই হযরত বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বুঝতে পারলেন, ইনিই সেই ব্যক্তিত্ব যার উদ্দেশ্যে তিনি দিল্লীতে এসেছেন। কিন্তু তিনি মুখে শুধু এতটুকুই জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি উদ্দেশ্যে দিল্লীতে এসেছেন? উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার বললেন, আপনি তো হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছেন। তবে আপাততঃ এখানেই কিছুদিন অবস্থান করুন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমনিতেই হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কামালিয়াতের প্রশংসা শুনে উনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন, কাজেই উনার এ প্রস্তাব তিনি একান্ত আনন্দের সাথে গ্রহণ করলেন এবং উনার ছোহবত মুবারকে থেকে নকশবন্দীয়া ত্বরীকার ফায়িজ-তাওয়াজ্জুুহ ও বরকত হাছিল করতে লাগলেন এবং মাত্র আড়াই মাসেই তিনি কামালিয়াত হাছিল করতঃ বিশেষভাবে খিলাফত প্রাপ্ত হন এবং উনার বিখ্যাত তাজদীদের কাজে ব্যাপৃত হন।
উল্লেখ্য স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ মুবারক পালনের কারণেই উনার পক্ষে হজ্জ পালন বা কা’বা শরীফ তাওয়াফ করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রথমতঃ হজ্জের সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিলো। দ্বিতীয়তঃ উনার টাকা পয়সাও খরচ হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য উনার পক্ষে সে বৎসর হজ্জ করা সম্ভব হয়নি, পরবর্তীতে উনার আর হজ্জ ফরয হয়নি। যার কারণে উনার জীবনে পবিত্র মক্কা শরীফে গিয়ে হজ্জ সম্পাদন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু যেহেতু তিনি হজ্জ করার ক্ষেত্রে নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মতকে স্বীয় মতের উপর প্রাধান্য দিয়েছিলেন যার ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে এত বড় মর্যাদা দান করলেন যে, পরবর্তীতে স্বয়ং পবিত্র কা’বা শরীফকে সিরহিন্দ শরীফে পাঠালেন উনার যিয়ারত লাভের জন্য। অর্থাৎ তিনি কা’বা শরীফ যিয়ারতের পরিবর্তে কা’বা শরীফকেই উনার যিয়ারত করিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে মুহীব থেকে মাহবূব করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)