ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১০)
, ১৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আবার তিন দিন পর সেই ফেরিওয়ালা উনি আসলেন। এসে সেখানে হাক দিলেন, যে কারো খাদ্য পানীয় দরকার রয়েছে কিনা? মোল্লা সাহেব আবার পূর্বের মত বের হয়ে এসে বললো, যে আমার দরকার রয়েছে। তো উনি বললেন যে, আপনি তো গতবার দিয়েছিলেন যাকাত। এবার কি দিবেন? আপনার জীবনে যত নামায আদায় করেছেন, সব আমাকে দিয়ে দেন। মোল্লা সাহেব এবারও রাজী হয়ে গেল। ঠিক আছে, এবার আমার জীবনের যত নামায রয়েছে সমস্ত নামাযের ফযীলত আমি দিয়ে দিলাম। তো উনি বললেন, যে ঠিক আছে। খাদ্য পানীয় দিলেন, সে তৃপ্ত সহকারে খেলো, পান করলো। সেই ফেরিওয়ালা তাকে খাওয়াইয়ে একইভাবে আবার কিছু দূর গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। মোল্লা সাহেব কোশেশ করেও উনাকে ধরতে পারলো না।
তিনি আবারো তিন দিন পরে খাদ্য-পানীয় নিয়ে আসলেন। সেই মোল্লা সাহেব আবার কাহিল, ক্লান্ত-শ্রান্ত। এবার যখন খাদ্য-পানীয় নিয়ে আসলেন, মোল্লা সাহেব খাওয়ার জন্য তো ব্যাকুল হয়ে গেল, খুব ক্ষুধার্ত। উনি বললেন, আপনি তাহলে কি দিবেন, আপনার তো সব দেয়া হয়ে গেছে। হজ্জ দিয়েছেন, রোযা দিয়েছেন, যাকাত দিয়েছেন, নামায দিয়েছেন। এখন কি দিবেন? তাহলে এক কাজ করুন। এখন আপনি যা দিয়েছেন তা কাগজে লিখে দিন আমাকে। তাতেই আমি আপনাকে খাদ্য-পানীয় দিবো। যে কাগজ কলম কোথায় পাওয়া যাবে? যিনি ফেরিওয়ালা উনি নিয়ে এসেছেন। নিয়ে, এটাতে লিখে দিন। যে আমি অমুক মোল্লা সাহেব আমার জীবনের যত নেক আমল আমি করেছি। আমার হজ্জ, রোযা, যাকাত, নামায সব আমি খাদ্য এবং রুটির বিনিময়ে অর্থাৎ রুটি পানীয়র বিনিময়ে দিয়ে দিলাম। সেটা সেই মোল্লা সাহেব লিখে দিল, “যে আমার যিন্দেগীর সমস্ত নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত যত ইবাদত-বন্দেগী ছিল সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী লিখে আমি দিয়ে দিলাম রুটির বিনিময়ে।” সেই ফেরিওয়ালা যিনি ছিলেন উনি খাদ্য পানি খাওয়ালেন, খাওয়ায়ে উনি সেই কাগজটা ভাল করে হাতে নিয়ে, ঘটি-বাটি যা ছিল সব নিয়ে উনি রওয়ানা দিলেন। মোল্লা সাহেব পিছন পিছন আসতে লাগলেন। উনি দৌড় দিলেন। কিছু দূর যেয়ে দেখা গেল সেই যিনি ফেরিওয়ালা উনি একটু পিছলিয়ে পড়ে গেলেন। মোল্লা সাহেব মনে করলেন, এবার ধরে ফেলবে। কিন্তু উনি উনার ঘটি বাটি নিয়ে যখন রওয়ানা হলেন, মোল্লা সাহেব সেই একই স্থানে গিয়ে পিছলিয়ে পড়ে। সে আর উঠতে পারলো না। ফেরিওয়ালা যিনি ছিলেন, উনি গায়েব হয়ে গেলেন। মোল্লা সাহেব এবারের মতও ধরতে পারলেন না।
সেই মোল্লা সাহেব খুব চিন্তিত হলেন, যে কি করা যেতে পারে? উনি গিয়ে সেই পাহাড়ের কিনারের সমুদ্রের পারে বসে রইলেন। যে কোন জাহাজ আসে কি না। অনেকক্ষণ পর দেখতে লাগলেন যে মনে হচ্ছে দূর থেকে একটা জাহাজ আসতেছে। দূর থেকে একটা জাহাজ দেখা যাচ্ছে। সেটা দেখে মোল্লা সাহেব তার যা কাপড় চোপড় ছিল সেটা নাড়া চাড়া করতে লাগলেন। জাহাজটা মানুষ দেখে কাছে আসলো, নোঙ্গর করলো। মোল্লা সাহেবকে তুলে নিল। মোল্লা সাহেব পরিচয় দিল। জাহাজবাসী যারা ছিল তারা তা’যীম তাকরীম করে মোল্লা সাহেবকে যথাস্থানে পৌঁছে দিল। ৭ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। ৭ বছর পর সেই মোল্লা সাহেব বাড়িতে ফিরলো। লোকজনের দেখা সাক্ষাত করলো। বড় আলিম, আলিম উলামারা সাক্ষাত করলো। তো মোল্লা সাহেব মনে করলো ৭ বৎসর হয়ে গেল, এখানে যিনি ছিলেন, ছুফী দরবেশ, উনার সাথে সাক্ষাত হয়নি। আচ্ছা একটু সাক্ষাত করে আসি। যখন সাক্ষাত করতে আসলো তখন হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে শত শত হাজার হাজার লোকের ভীড় ছিল। ভীড়ের মধ্যে সে সাক্ষাত করলো। হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি মোল্লা সাহেবকে দেখে নিজের থেকে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান করে ডেকে এনে পাশে বসালেন।
কিতাবে লিখে, তার বসা দেখে মনে হলো সে যেন বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহির সমমর্যাদা বা তার চাইতে বোধ হয় বেশি। বসে তার সে অহমিকা সাত বছর হজ্জ করেছে, রওযা শরীফ যিয়ারত করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে লাগলো। রাস্তায় বিপদ হয়েছিল, খাদ্য-পানীয় এর কষ্ট হয়েছিল খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক কুদরতীভাবে খাইয়েছেন, পরিয়েছেন, জীবন বাঁচিয়েছেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী, কটাক্ষকারী, অবমাননাকারীদেরকে শরঈ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৭)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ৩ শ্রেণী
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মালিকুত তামাম, ক্বাসিমুন নিআম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ফাতহ মুবারক উনার বরকত ও ফযীলত (৩)
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন (৭)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৬)
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিধর্মী-কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখা জায়েজ নেই
০৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
০৮ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)