১. চিত্র: মোগলদের ইফতার ২. চিত্র: চকবাজারের ইফতার
মার্কেট ইফতারে মোগলদের দস্তরখানা
, ১৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ৪ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পাঁচ মিশালী
এই উপমহাদেশের ইতিহাসে কিংবদন্তী হয়ে আছে মোগল খাবার। কেবল স্বাদেই নয়, ঘ্রাণেও অনন্য ছিল তাদের খাবার। জানা যায়, শাসক শাহজাহানের বাবুর্চিখানায় একশ রকমের বিরিয়ানি রান্না হতো। তবে ইফতারের সময়ে ঠিক কোন ধরনের বিরিয়ানি খাওয়া হত তার স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়নি কোনো গবেষণায়।
শুধু মসলাদার খাবার নয়, এপার এবং ওপার বাংলার রন্ধনশৈলীর বিবিধ মিষ্টি তৈরিতেও মোগলদের অবদান রয়েছে। বর্তমান সময়ে ইফতারিতে জিলাপি ছাড়া চলেই না। ইফতারে ছোলা মুড়ির সঙ্গে জিলাপি মাখা হবে নাকি আলাদা রাখা হবে তা নিয়ে অনলাইন অফলাইনে চলে অমø-মধুর বিতর্কও। অর্থাৎ ইফতারের অন্যতম প্রধান আইটেম এটি। সেই জিলাপির প্রবর্তনও হয়েছিল মোগল আমলেই।
সৌদি আরব, সিরিয়া ও লেবাননের ‘হারিসা’ মোগলদের রান্নাঘরে ঢুকে আমূল বদলে গিয়েছিলো। প্রাচ্যের মসলা মিশে ‘হারিসা’ হয়ে উঠেছিল বিখ্যাত মোগলাই হালিম! মোগলদের হাত ধরেই ভারতবর্ষে আসে পোলাও, বিরিয়ানি, কোফতা, সিঙাড়া, হালিম, সমুচা ইত্যাদি।
এই উপমহাদেশে রোযার মাসকে উৎসবের পরশ দিয়েছিলো মোগলরাই। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনাকে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে ইফতারের খাবার-দাবারে দস্তরখানাকে স্বাদে-গন্ধে, বৈচিত্রে ভরিয়ে তুলেছিল মোগলরাই। সেই পরম্পরায় দিল্লি থেকে লখনৌ ও হায়দ্রাবাদের নবাবদের দরবার ঘুরে এসে ঠেকেছে বাংলায়।
মির্জা নাথান এবং হাকিম হাবিবুর রহমানের বর্ণনায় বাংলায় ইফতারের সময়ে নবাবি খানাপিনার কথা জানা যায়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল তরমুজের শরবত, তন্দুরি ও নান রুটি, বহু রকমের কাবাব, বিরিয়ানি, কোর্মা, কোফতা আর হালিম। সেই সঙ্গে জিলাপি, নিমকপারা ও সমুচার মতো কিছু খাবার।
শবে বরাতের পর থেকেই রোযার ইফতার এবং সাহরির জন্য দিন গোনা শুরু হয়ে যেত মোগলদের যামানায়। রমাদ্বান শরীফ মাস শুরু হওয়ার প্রাক সন্ধ্যায় শেষ মোগল শাসক বাহাদুর শাহ জাফর হাতি নিয়ে বের হতেন চাঁদ দেখতে।
আকাশে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদ দেখা গেলে কামান থেকে তোপ ছুড়ে কিংবা শূন্যে গুলি করে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের আগমনী বার্তা জানান দেয়া হত। বাংলায় মুর্শিদাবাদের নবাবরাও তোপ-কামান দেগে রমাদ্বান শরীফ মাস শুরুর ঘোষণা করতেন। সেই সঙ্গে রোযায় বাহারি ইফতারের আয়োজন হতো মোগল হেঁসেলে।
তন্দুরি ও নান রুটি ছিল অনেক রকমের। বিভিন্ন ধরনের বাদাম দিয়ে তৈরি করা সুস্বাদু ও সুগন্ধী তাফতান। মোগলদের রান্নাঘর অনুকরণ করেই বাংলায় এসেছিলো বিখ্যাত শিরমাল। এখনো পুরান ঢাকার জনপ্রিয় খাবার এটি। সুজি দিয়ে তৈরি হয় শিরমাল। অনেকেই ইফতার ও সাহরিতে শিরমাল খেতে পছন্দ করেন।
যদিও শোনা যায় শিরমালের জন্ম ইরানে, মোগলরাই এ অঞ্চলে তা নিয়ে এসেছিলো। এতে কেশরও ব্যবহার করা হয়। মোগলরা কাবাব দিয়ে শিরমাল খেতো।
কাবাবের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় ছিলো পারসান্দের শিক কাবাব। ভালো ও নরম গোশতের খান ১০-১২ টুকরো দিয়ে কাঠ কয়লার আগুনে পুড়িয়ে এই কাবার তৈরি করা হতো। পরবর্তী সময়ে এই কাবাবকে সুলতানি কাবাবও বলা হত। এ ছাড়া ইফতারে খাওয়া হতো শামি কাবাব, টিক্কা কাবাব, হান্ডি কাবাব, তাশ কাবাবও। এখনো পুরান ঢাকার চকবাজারে গেলে দেখা মিলবে মোগল রেসিপির নানান কাবাবের পসরা।
চাপাতিস, ফুলকাস, পরাটা, রুগনি রুটি, বিরি রুটি, বেসানি রুটি, খামিরি রুটি, নান, শিরমাল, গাভ দিদা, গাভ জাবান, কুলচা, বাকরখানী, গাউসি রুটি, বাদাম রুটি, পেস্তা রুটি, চালের রুটি, গাজর নান খাতাই, মিসরি রুটি, নান পাম্বা, নান গুলজার, নান কামাশ, নান টুঙ্কি, বাদাম নান খাতাই, পিস্তা নান খাতাই, খেজুর নান খাতাই এগুলো ছিল রুটির বিভিন্ন আইটেম।
পোলাওয়েরও ছিলো বাহারি পদ- ইয়াখনি পোলাও, মতি পোলাও, নূর মাহালি পোলাও, নুকতি পোলাও, কিসমিস পোলাও, নার্গিস পোলাও, জামুরদি পোলাও, লাল পোলাও, মুজাফ্ফর পোলাও, ফলসাই পোলাও, আবি পোলাও, সুনেহরি পোলাও, রুপালি পোলাও, মুরগি পোলাও, কোফতা পোলাও, বিরিয়ানি পোলাও, চুলাভ, আস্ত ছাগল পোলাও, বুট পুলাও, শোলা, খিচুরি, কাবুলি, তেহারি, মুতঞ্জন।
এছাড়া মিষ্টি আইটেমের মধ্যে ছিল - জর্দা মুজাফফর, সেবাই, মান ও সালওয়া, ফিরনি, ক্ষীর, বাদাম ক্ষীর, কুমড়ার ক্ষীর, গাজরের ক্ষীর, কাংনি ক্ষীর, ইয়াকুটি, নমিশ, দুধের ডালমা, বাদাম ডালমা, সামোছা, শাক, খাজলে।
মজার বিষয় হলো, মোগল খাবারের তালিকায় ছিল সবজিও। বেগুন ভর্তা, আলু। ছোলা ভর্তা, ছোলার ডাল ভর্তা, আলুর ডাল, বেগুনের ডাল, করলা ডাল, এসব ডাল- এসবও ছিল কোনো কোনো মোগল বাদশাহর খাবারের মেন্যুতে।
১৮৫৭ সালে অসাম্প্রদায়িক ও বহুত্ববাদী ব্রিটিশবিরোধী প্রথম সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয়দের পরাজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের শেষ সিলমোহর পড়ে। ওই যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ মোগল শাসক দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের মিয়ানমারের রেঙ্গুনে নির্বাসনের মধ্য দিয়ে ভারতে মোগল শাসনের অবসান হয়। দীর্ঘ তিন শতকের শাসনের অবসানের পরও মোগল কৃষ্টি-কালচার টিকে আছে বহাল তবিয়তে, বিশেষ করে বাঙালির খাদ্যাভাসে মোগল প্রভাব বরাবরই বাড়াবাড়ি রকমের বেশি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অরবড়ই এর ঔষধি গুণ
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিলুপ্তপ্রায় ঘোগ নামের প্রাণীটি
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মঙ্গলগ্রহের যে নতুন তথ্য দিলো নাসা
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আপনার কিডনি কি সুস্থ আছে?
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নিয়মিত বেল খাওয়ার উপকারিতা
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সমুদ্রের গহীনে দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বড় অমেরুদণ্ডী প্রাণী
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সিদ্ধ মিষ্টি আলু খেলে কী হয় শরীরে?
২২ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আকাশে বিরল গ্রহ-চাঁদের মিলন: দেখা যাবে ‘স্মাইলি ফেস’
২১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মস্তিষ্ক ভালো রাখতে বাদামের সঙ্গে খাবেন কোন খাবার
২১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
একটি এলাকার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে বটগাছ
২০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মিরপুর মাজার ও তাঁতিবাজার জামে মসজিদ
২০ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত ১০টি অঞ্চল
১৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)