মাটি ও মানুষ বাঁচাতে এবং কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার সমৃদ্ধি আনতে কেঁচো সারের দিকে যথাযথ দৃষ্টি দিতে হবে ইনশাআল্লাহ
, ০৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৮ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মন্তব্য কলাম
মাটি বিশেষজ্ঞরা বলেন, উর্বর মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন। এতে মাটিতে পানির ধারণক্ষমতা যেমন থাকে, এতে বাতাস চলাচলেরও সুযোগ থাকে। কিন্তু বর্তমানে সমস্যাটা দাঁড়িয়েছে, আমাদের দেশের বেশির ভাগ এলাকার মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশ।
নদীবিধৌত বাংলাদেশে বন্যার একটা উপকারী দিক ছিল বন্যা বয়ে নিয়ে আসত পলিমাটি। বন্যা প্লাবিত অঞ্চলে বন্যা নেমে গেলে পলি জমা উর্বর মাটিতে চাষ হতো সোনার ফসল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাটিকেও দূষিত করে ফেলেছি চরমভাবে। মাটির বুক থেকে অধিক ফসল ফলিয়ে নিতে যথেচ্ছ রাসায়নিকের প্রয়োগ, মাত্রাতিরিক্ত কর্ষণ, মাটির উপরিভাগ কেটে নিয়ে ইট তৈরি... বিভিন্নভাবে আমরা মাটিকে নির্যাতন করে এর উর্বরা শক্তিকে বিনষ্ট করে দিচ্ছি। বর্তমানের সাময়িক লাভে ধ্বংস করে দিয়ে যাচ্ছি ভবিষ্যৎকে।
মাটির গুণাগুণ ফিরিয়ে আনতে জৈবসারের কোনো বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়ন ভাবনায় জৈবকৃষির যেমন গুরুত্ব রয়েছে। সেই গুরুত্বের সঙ্গে সমান গুরুত্ব বহন করে কেঁচোও। উন্নত বিশ্বে এ সত্য অনুধাবন করেছেন অনেকেই। নেদারল্যান্ডসের জৈবকৃষি নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান রয়্যাল আইকোলকাম্প মাটিতে কেঁচো সারের ব্যবহারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ‘ভার্মি-রিমেডিয়েশন’ বেশ আলোচিত একটি টার্ম। গ্যাসোলিন, ডিজেল, পেট্রোলিয়াম কিংবা ভারী ধাতু লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, মার্কারিসম্পন্ন মাটিতে চাষযোগ্য উর্বরতা ফিরিয়ে আনতে কেঁচো ব্যবহার করার পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ভার্মি রিমেডিয়েশন।
কেঁচো কম্পোস্টে অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে প্রায় ৭ থেকে ১০ শতাংশ পুষ্টিমান বেশি থাকে।
একটি আদর্শ ভার্মি কম্পোস্টে শতকরা ১.৫৭ ভাগ নাইট্রোজেন, ১.২৬ ভাগ ফসফরাস, ২.৬০ ভাগ পটাশ, ০.৭৪ ভাগ সালফার, ০.৬৬ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম, ০.০৬ ভাগ বোরন, ১৮ ভাগ জৈব কার্বন, ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পানি ও সামান্য পরিমাণ হরমোন রয়েছে।
ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এক মাসের বাসি গোবরে কেঁচো সার ভালো হয়।
জৈবসার-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ কেঁচো কম্পোস্ট সার। ভার্মি কম্পোস্ট সারে গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের ১০টিই বিদ্যমান।
কেঁচো ভূমির অন্ত্র এবং পৃথিবীর বুকে উর্বর মাটি তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে, যার ওপর ফসল উৎপাদন করি। যে কেঁচোকে আমরা প্রাকৃতিক লাঙল হিসেবে চিনে আসছি, সেটা শুধু লাঙল নয়, মাটির জৈব উপাদান বৃদ্ধির কারখানাও। কেঁচো খাদ্য গ্রহণের পর যে পাচ্য পদার্থ মল হিসেবে নির্গত করে তাকে বলে কাস্ট। দেখা গেছে, এ কাস্টের ভিতর থাকে অসংখ্য জীবাণু। সাধারণ মাটির তুলনায় কাস্টের মধ্যে জীবাণু সংখ্যা প্রায় হাজারগুণ বেশি। এদের মাঝে উপকারী ব্যাকটেরিয়াও রয়েছে হাজার হাজার। ফলে মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি উপাদান জৈবিক উপায়ে বৃদ্ধি পায়।
কেঁচো কমপোস্ট সার তৈরির কার্যক্রমটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের নানা জায়গায় তৈরি হয়েছে জৈবগ্রাম।
পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার যারা ব্যবহার করছেন, তারা ইতিমধ্যে নানা সুফল পেয়েছেন। ফলন তাদের ভালো হচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে, সার বাবদ খরচও কমেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে জমির উর্বরতা বাড়াতে সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। কিন্তু রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীলতা দীর্ঘ মেয়াদে জমির উর্বরতা কমিয়ে ফেলে। নীরাশয়সহ প্রকৃতির দূষণ ঘটায়। সে ক্ষেত্রে কেঁচো সার কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় ভালো বিকল্প হতে পারে।
জৈবসার হিসেবে কেঁচো সার আদর্শ। সন্দেহ নেই নিরাপদ খাদ্যের প্রশ্নে সারা পৃথিবীতে ইকোলজিক্যাল অ্যাগ্রিকালচার জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ তৈরি করতে আমাদেরও জৈবকৃষির তথা জৈব সার বা কেঁচো সারের দিকে এগোতে হবে। পাশাপাশি কৃষক সমাজের পুরোটাকেই বিশেষ সচেতন ও অনুপ্রানিত করতে হবে যে মাটিতে জৈবসার প্রয়োগ করলে ফসল ফলাতে রাসায়নিক সারের চেয়ে বেশি সুফল পাওয়া সম্ভব।
বর্তমানে ৩০ হাজার কোটি থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার কেমিক্যাল সার ও কীটনাশকের বাজার আছে আমাদের। সরকার যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেয় তাহলে এ মুহুর্তেই কম হলেও ১০ হাজার কোটি টাকার জৈবসারের বাজার তৈরি করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ।
তাই সরকারকে সজীব মাটি, সুস্থ মানুষ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে কেঁচো সারের বিষয়ে সর্বাত্মক প্রচারণা, সক্রিয় প্রচেষ্টা, সর্বোচ্চ প্রনোদনা এবং পূর্ণ পৃষ্ঠপোকতা করতে হবে ইনশাআল্লাহ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কর্মক্ষম জনশক্তি তথা কর্মক্ষমতার স্বর্ণযুগে বাংলাদেশ বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭৫ জনই কর্মক্ষম
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কেন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও পাহাড়িদের কোনভাবেই ‘আদিবাসী’ বলার সুযোগ নেই? (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুয়ার নেশায় বুদ হচ্ছে শিশু-কিশোররা-শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সাইটই পরিচালিত হয় দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন
২২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করা জায়নবাদী তথা বর্বর ইহুদীরা কাপুরুষতার প্রমাণ দিয়ে অতীত ইতিহাস থেকে একের পর এক গুপ্তহত্যা করে আসছে ইহুদীদের গুপ্তহত্যার অনেক নিন্দা, ধিক্কার এবং প্রচারণা ও প্রতিহতের প্রচেষ্টা দরকার (পর্ব-১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু যুবকরাই নয় এখন এনার্জি ড্রিংকসে বুদ হচ্ছে শিশুরাও কর ফাঁকি দিতে অনেক এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয় জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অবিলম্বে এনার্জি ড্রিংকস বন্ধ করতে হবে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে পড়েই দুনিয়াদার মালানারা বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফ বাদ দিয়েছে। পর্নোগ্রাফি, মাদক থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে চাইলে বেহেশত-দোযখের ওয়াজ শরীফও বেশি বেশি করতে হবে।
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ডানে সেলফি বামে সেলফি, সেলফি সেলফি সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, খুন আর আত্মহত্যা মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূরিকরণ করা।
১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ইনশাআল্লাহ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের প্রথম ধনী দেশ। এক উত্তারাঞ্চলের খনিজ উত্তোলন করলেই গোটা দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বরদাশতযোগ্য নয়।
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলায় কৃষিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক; বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বিলুপ্তির পথে ১৯২ জাতের উপকারী পোকা। সরকারের উচিত অবিলম্বে কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষিকে বিষমুক্ত করা।
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি?
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক “অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নতুন আশঙ্কা এবং বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমেছে”- এ তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নচেৎ সাধারণ অসুখেই প্রাণনাশ হতে পারে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)