মাইয়্যিতকে কাফনের কাপড় পরিধান করানোর মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
, ২৯ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০২ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
মহিলাদের জন্য পাঁচ কাপড়। যথা: ১) কোর্তা, ২) ইযার, ৩) ছেরবন্দ, ৪) চাদর, ৫) ছিনাবন্দ দেওয়া মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
ইযার মাথা হতে পা পর্যন্ত। কোর্তার কল্লি বা আস্তিন থাকবেনা। শুধু মাঝখান দিয়ে কিছু ফেড়ে মাথা ঢুকিয়ে দিতে হবে। ছেরবন্দ ১ থেকে ২ গিরা প্রস্থ তিন হাত লম্বা, ছিনাবন্দ প্রস্থে কানের নিচ হতে হাঁটুর উপর পর্যন্ত দেওয়া উত্তম এবং লম্বায় এতটুকু হতে হবে যেন বাঁধা যায়, কাফনের কাপড় প্রয়োজনে অর্থাৎ মাইয়্যিত মোটা বা লম্বা বা হালকা পাতলা বা খাটো হলে কম বেশী হতে পারে।
উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য দুই কাপড়, ইযার ও চাদর হলে এবং মহিলাদের জন্য তিন কাপড়, ইযার, চাদর ও ছেরবন্দ হলেও দুরস্ত হবে। কিন্তু মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ হবে।
মাইয়্যিতকে কাফন পরিধান করানোর মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
মাইয়্যিতকে কাফন পরিধান করানোর পূর্বে তাতে তিন, পাঁচ বা সাতবার লোবান বা আগরবাতির ধুনি দেওয়া উচিত। প্রথম লেফাফা বা চাদর বিছিয়ে পরে তার উপর ইযার বা তহবন্দ বিছাবে, তারপর পিরহান বা কোর্তার অর্ধেকটা বিছাবে আর বাকি অর্ধেকটা মাথার পিছনের দিকে গুটিয়ে রাখবে তারপর মুর্দাকে আস্তে আস্তে চিৎ করে শোয়াবে এবং শরীরে বিশেষ করে সিজদার জায়গাসমূহে অর্থাৎ কপাল, নাক, হাত, হাঁটু ও পায়ে কর্পূর লাগাবে।
তারপর কোর্তার বাকি অর্ধাংশ উপর হতে টেনে বুকের উপর রাখবে। তারপর ইযার বাম দিক হতে টেনে শরীরের উপর রেখে পরে ডান দিক হতে টেনে এমনভাবে রাখবে যেন ডান দিকটা বাম দিকের উপরে থাকে। এরূপভাবে লেফাফাও ইযারের উপর ফেলবে। অতঃপর পায়ের দিকে ও মাথার দিকে এবং মাঝখানে ফিতা দিয়ে বেঁধে দিবে যেন কাফন ছুটে না যায়। এই হলো পুরুষের জন্য কাফন পরানোর নিয়ম।
মহিলা মাইয়্যিতাকে কাফন পরিধান করানোর মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
মহিলাদের জন্য এইরূপ লেফাফা, ইযার এবং কোর্তার অর্ধাংশ বিছিয়ে মাইয়্যিতাকে আস্তে আস্তে চিৎভাবে শায়িত করে কোর্তার বাকী অর্ধাংশ মাথার উপর দিয়ে, মাথা প্রবেশ করিয়ে, বক্ষের উপর রাখবে। তারপর পূর্ব নিয়মে সুগন্ধি লাগিয়ে মাথার চুলকে দু’ভাগে ভাগ করে ডান দিকের ভাগ, ডান কাঁধের উপর দিয়ে ডান বুকের উপর এবং কোর্তার অধাংশ বিছিয়ে মুর্দাকে আস্তে আস্তে চিৎভাবে শায়িত করে কোর্তার বাকী অর্ধাংশ মাথার উপর দিয়ে, বাম বুকের উপর রাখবে।
তারপর টুপি বা উড়নাকে পিঠের নিচে একমাথা গুছিয়ে অপর মাথা মৃতের মাথার উপর দিয়ে টেনে কপাল ও নাক, মুখ ঢেকে ছিনার উপরে চুল ঢেকে দিবে। অতঃপর পূর্ব নিয়মে ইযার ও লেফাফাকে টেনে দিবে। পরিশেষে ছিনাবন্দ সকল কাফনের উপরে ছিনা হতে উরু পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়ে দুই দিকে ও মাঝখানে ফিতা দিয়ে বেঁধে দিবে। ছিনাবন্ধ, কোর্তার উপরে ছেরবন্দের পরও পেঁচিয়ে দেওয়া দুরস্ত আছে। লাশের উপর সর্বদা একখানা কাপড় রাখবে। মহিলাদের লাশের গোসলের ক্ষেত্রে অবশ্যই পর্দা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
কাফনের মধ্যে খালি আঙ্গুলে কালিমা শরীফ, পবিত্র বিসমিল্লাহ শরীফ লিখা, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ মুবারক বা সাইয়্যিদুনা হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার সংশ্লিষ্ট কোন কিছু বরকত মুবারক লাভের জন্য দেওয়া জায়িয আছে।
জরুরী কতিপয় মাসয়ালা
মাসয়ালা:-১ সন্তান জীবিতাবস্থায় ভূমিষ্ট হয়ে মারা গেলে নাম রাখতে হবে। যথানিয়মে গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফন করতে হবে। যে শিশুর মৃত অবস্থায় জন্ম হয়েছে তারও নাম রাখতে হবে ও গোসল দিতে হবে। কিন্তু নিয়মিত কাফন, জানাযা দেওয়া আবশ্যক নয়। একখানা কাপড়ে লেপটিয়ে মাটি দিয়ে রাখলেই হবে। অকালে সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে, যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ না পায় তবে গোসল ও নিয়মিত কাফন দিতে হবে না, শুধু একখানা কাপড়ে লেপটিয়ে মাটি দিয়ে রাখতে হবে। নিয়মিত কাফন ও জানাযা আবশ্যক নয়।
মাসয়ালা:-২ জন্মগ্রহণের বেলায় সন্তানের মাথা বের হওয়ার সময় যদিও জীবিত বলে মনে হয় কিন্তু তৎক্ষণাৎ মারা যায় তবে ঐ সন্তানকে মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ট হয়েছে বলে মনে করতে হবে। অবশ্য যদি বুক পর্যন্ত বের হয়ে মারা যায়, তবে বয়স্কা মেয়েলোকের মত পাঁচ কাপড় দেওয়া মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ও উত্তম-যদিও তিন কাপড় দিলে চলে ।
মাসয়ালা:-৩ ছোট ছেলেকে- মেয়ে লোকেও গোসল ও কাফন পরাতে পারে কিন্তু তার জন্যও তিন কাপড় দেওয়া মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। কোথাও যদি কোন মৃত লোকের কোন অঙ্গ যথা মাথা, হাত, পা অথবা মাথা ছাড়া শরীরের অর্ধেক পাওয়া যায় তবে তা শুধু একখানা কাপড়ে পেঁচিয়ে দিয়ে দিলেই চলবে। যদি মাথাসহ অর্ধেক অথবা মাথা ছাড়া বেশি অর্ধেক অঙ্গ পাওয়া হয়, তবে নিয়ম মতো কাফন দিতে হবে।
মাসয়ালা:-৪ কোথাও কবর খুঁড়ে যদি লাশ পাওয়া যায়, সেই লাশ যদি না পচে থাকে এবং তার উপর কাফন না থাকে তবে নিয়ম মতো কাফন দিয়ে মাটি দিতে হবে। যদি লাশ পচে থাকে, তবে শুধু উপরে একখানা কাপড় দিয়ে ঢেকে মাটি দিয়ে দিলে চলবে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার পরিচয় ও প্রকারভেদ (২)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘চাদর’
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবারের পাত্র কাঠের বাটি বা পেয়ালা
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী চামড়ার বালিশ
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুন্নত মুবারক পালনে কোন হীনম্মন্যতা নয়, বরং সব পরিবেশেই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা ও মুহাব্বত মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল ‘আঙুর’
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সকল ধরণের সুন্নতী খাবার বরকতময় রোগমুক্ত শিফা দানকারী সুন্নতী খাদ্য “ভাত”
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী “টুপি
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)