মাইয়্যিতকে কাফনের কাপড় পরিধান করানোর মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
, ১৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পুরুষ মাইয়্যিতকে কাফন পরিধান করানোর মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
মাইয়্যিতকে কাফন পরিধান করানোর পূর্বে তাতে তিন, পাঁচ বা সাতবার লোবান বা আগরবাতির ধুনি দেওয়া উচিত। প্রথম লেফাফা বা চাদর বিছিয়ে পরে তার উপর ইযার বা তহবন্দ বিছাবে, তারপর পিরহান বা কোর্তার অর্ধেকটা বিছাবে আর বাকি অর্ধেকটা মাথার পিছনের দিকে গুটিয়ে রাখবে তারপর মুর্দাকে আস্তে আস্তে চিৎ করে শোয়াবে এবং শরীরে বিশেষ করে সিজদার জায়গাসমূহে অর্থাৎ কপাল, নাক, হাত, হাঁটু ও পায়ে কর্পূর লাগাবে।
তারপর কোর্তার বাকি অর্ধাংশ উপর হতে টেনে বুকের উপর রাখবে। তারপর ইযার বাম দিক হতে টেনে শরীরের উপর রেখে পরে ডান দিক হতে টেনে এমনভাবে রাখবে যেন ডান দিকটা বাম দিকের উপরে থাকে। এরূপভাবে লেফাফা ও ইয়ারের উপর ফেলবে। অতঃপর পায়ের দিকে ও মাথার দিকে এবং মাঝখানে ফিতা দিয়ে বেঁধে দিবে যেন কাফন ছুটে না যায়। এই হলো পুরুষের জন্য কাফন পরানোর নিয়ম।
মহিলা মাইয়্যিতাকে কাফন পরিধান করানোর মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
মহিলাদের কাফনের কাপড়ও সাদা-সূতি হওয়া সুন্নত। মহিলা মাইয়্যিতকে ৫ কাপড় দিতে হবে । মাইয়্যিত যদি আকার-আকৃতি সম্পন্ন হয়ে মৃত অবস্থায়ও জন্মগ্রহণ করে তবুও মেয়েদের ক্ষেত্রে ৫ কাপড়ই দিতে হবে।
মহিলাদের কাফনের ৫ কাপড় হলো-
(১) লেফাফা বা চাদর, যা মাথা হতে এক বিঘত লম্বা এবং পা হতে এক বিঘত লম্বা হবে।
(২) ইজার বা লুঙ্গি, যা মাথা হতে পা পর্যন্ত লম্বা হবে
(৩) সীনাবন্দ বা ওড়না, যা সীনা হতে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হবে।
(৪) কামিছ বা কোর্তা, যা পা পর্যন্ত লম্বা হবে। যার কলি বা আস্তিন থাকবে না, শুধু মাঝখান দিয়ে মাথা প্রবেশ করানোর জন্য কামিছের গলা কেটে সামনের দিকে কিছুটা ফেড়ে মাথা প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে।
(৫) ছেরবন্দ বা চুল বন্দনী, যা তিন হাত লম্বা এবং এক বিঘত হতে এক হাত পর্যন্ত প্রস্থ হবে। কাফনের কাপড় প্রস্থে এতটুকু হতে হবে যেন মুর্দার শরীরে কাপড়টি বাম পাশ দিয়ে ঢেকে; তার উপরে পাশ দিয়ে ঢেকে রাখা যায়। কাফনের কাপড় প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থাৎ মাইয়্যিত মোটা, হালকা-পাতলা, বা লম্বা-খাটো অনুযায়ী কম বেশী হতে পারে।
মহিলাদের কাফনের কাপড় বিছানো ও পরানোর নিয়ম হলো-
প্রথমে লেফাফা অর্থাৎ চাদর বিছাবে, অতঃপর ইজার বা লুঙ্গি একই নিয়মে লেফাফার উপর বিছাবে। তারপর ইযারের উপরে সিনাবন্দ বিছাবে। এরপর কামিছের নিচের অংশ বিছাবে এবং কামিছের উপরের অংশ মাথার দিকে কাপড় গুটিয়ে ঘাড়ের নিচ বরাবর রাখবে। পরে মাইয়্যিতকে পরিস্কার শুকনা কাপড় দিয়ে ভালভাবে মুছে ছতরের স্থান ভালভাবে ঢেকে কাফনের উপর চিৎ করে শোয়াবে। কামিছের গুটানো অংশের ফাড়া স্থান দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে পা পর্যন্ত টেনে দিবে। পর্দাবৃত কাপড়টি সাবধানে সরিয়ে নিবে যাতে ছতর খুলে না যায়। হস্তদ্বয় মাইয়্যিতের দুই পাশে সোজাভাবে রাখবে। এরপরে সিজদা করার সময় যে অঙ্গসমূহ (কপাল, নাক, হাত, হাঁটু ) যমীনে স্পর্শ হয় উক্ত স্থানে কর্পূর দিবে অথবা কর্পূর নিয়ে ক্বামীসের ভিতর দিয়ে শরীরে ছিটিয়ে দিবে।
অতঃপর মুর্দার মাথার চুল দুই ভাগ করে ছেরবন্দ দিয়ে মাথা ভালভাবে ঢাকতে হবে। ছেরবন্দের দুই পাশের দুই অংশ দিয়ে চুল ভালভাবে পেঁচিয়ে চুল ঢেকে দিবে এবং দুইপাশের চুল সিনার উপরে রাখবে। চুল যেন কোনভাবেই নাভির নিচে না নামে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এরপর সিনাবন্দ দিয়ে ঢাকতে হবে। এরপর ইজার বা লুঙ্গি বাম দিক থেকে উঠাবে।
অতঃপর ডান দিক থেকে উঠিয়ে মাইয়্যিতকে জড়িয়ে দিবে। একই নিয়মে লেফাফা বা চাদর দু’দিক থেকে টেনে মুড়িয়ে দিয়ে গায়ে জড়িয়ে দিবে। পরে কাপড়ের টুকরা দ্বারা কোমরে, মাথার উপরে ও পায়ের নিচে হালকা করে বাঁধন দিবে। কবরে রাখার পর বাঁধনগুলো খুলে দিবে।
উল্লেখ্য যে, মহিলা মাইয়্যিতকে জানাযার খাটে তোলার পূর্বে আগে একটি কাপড় বিছিয়ে নিবে এবং লাশ রাখার পরে খাটের উপরে একটি বড় চাদর বা কাপড় টান করে দিবে যাতে কোনভাবেই মাইয়্যিতকে দেখা না যায় এবং শরয়ী পর্দার হুকুম যেন কোনভাবেই লঙ্ঘিত না হয়। বর্তমান বাজারে লাশ বহনের জন্য যে বক্স পাওয়া যায়, মহিলা মাইয়্যিতকে সেই বক্সে বহন করাই অধিক উত্তম। কেননা, শরয়ী পর্দা যথাযথভাবে পালিত হয় আর বহন করতেও সুবিধা হয় ।
জরুরী কতিপয় মাসয়ালা
মাসয়ালা:-১ সন্তান জীবিতাবস্থায় ভূমিষ্ট হয়ে মারা গেলে নাম রাখতে হবে। যথানিয়মে গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফন করতে হবে।
মাসয়ালা:-২ মাইয়্যিত যদি মৃত জন্মগ্রহণ করে এবং যদি আকার-আকৃতি হয় সেক্ষেত্রে পাঁচ কাপড় এবং পুরুষের ক্ষেত্রে তিন কাপড়ই দিতে হবে। যথানিয়মে গোসলও দিতে হবে। তবে মৃত হলে শুধু জানাযা পড়াতে হবে না। অন্য সবকিছুই যথানিয়মে করতে হবে। নামও রাখতে হবে। এমনকি বয়স্কদের যেভাবে কবর দিতে হয় শিশুদেরকেও অনুরূপভাবেই কবর দিতে হবে। স্মর্তব্য, অনেকে বলে থাকে, মৃত হলে গোসল ও কাফনের দরকার নেই, শুধু একটি কাপড়ে মুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে ফেললেই হবে। এ ধারণা আদৌ-সঠিক নয়।
মাসয়ালা:-৩ অকালে সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে, অর্থাৎ সন্তানের যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ না পায়, ছূরত প্রকাশ না পায় তবে গোসল ও নিয়মিত কাফন পরাতে হবে না, শুধু একখানা কাপড় দিয়ে দাফন করতে হবে। উল্লেখ্য, এই ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাফন-দাফন ও জানাযা দিতে হবে না।
মাসয়ালা:-৪ জন্মগ্রহণের বেলায় সন্তান জীবিত কিংবা মৃত; এটা নিয়ে যদি সন্দেহ তৈরী হয় সেক্ষেত্রে সেই সন্তানকে জীবিত জন্মগ্রহণ করে মারা গেছে হিসেবেই ধরে নিতে হবে। মাথা বের হওয়ার সময় তৎক্ষণাৎ যদি মারা যায় তবে ঐ সন্তানকে জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ট হয়েছে বলেই মনে করতে হবে।
মাসয়ালা- মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে পুরুষরা তাকে গোসল করানোর ব্যবস্থা করবে। তবে যদি স্বামী মারা যায় আর তার গোসল করানোর জন্য যদি স্ত্রী ব্যতীত আর কেউ না থাকে অথবা কোন ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয় তাহলে স্ত্রী গোসল করাতে পারবে। পক্ষান্তরে, স্ত্রী মারা গেলে স্বামী কোন অবস্থাতেই তার স্ত্রীকে গোসল করাতে পারবে না। এমনকি স্পর্শও করতে পারবে না।
মাসয়ালা- হিজড়াদের হুকুম মহিলাদের ন্যায়। তাদের গোসল, কাফন ইত্যাদি মহিলাদের মতই দিতে হবে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)