মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাত মুবারক পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক (৪)
, ২৪ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
খাবার খাওয়ার সময় পড়ে যাওয়া অংশ তুলে পরিস্কার করে খাওয়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ বিষয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আদেশ মুবারকও করেছেন। যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ اَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الْأَذٰى وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ.
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। যখন তোমাদের কারো খাবার থেকে কোনো অংশ পড়ে যায়, তখন সে যেন তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য রেখে না দেয়।” (মুস্তাখরাজে আবী আওয়ানা ৯/১৩১, হিলইয়াতুল আউলিয়া ১০/৩৬৯)
অপর বর্ণনায় রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ اِذَا اَكَلَ طَعَامًا لَعِقَ اَصَابِعَهُ الثَّلَاثَ وَقَالَ اِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ اَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الأَذٰى وَلْيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন,) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন খাবার মুবারক খেতেন তখন উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক) উনার তিনখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুশ শক্ব মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আংগুল মুবারক) চেটে খেতেন এবং বলতেন যে, যখন তোমাদের কারো খাবার থেকে কোনো অংশ পড়ে যায়, তখন তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেবে এবং সেটা শয়তানের জন্য রেখে দিবে না।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৬/২৬৬, শুয়াবুল ঈমান ৮/৪২, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/৩৩৯, আল আদাব লিল বায়হাক্বী ১/১৬৮ ইত্যাদি)
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক পালনের ব্যাপারে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সর্বদাই সচেষ্ট এবং সুদৃঢ় ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! নি¤েœ এই প্রসঙ্গে কয়েকখানা ওয়াক্বেয়া মুবারক উল্লেখ করা হলো:
“পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ বিজয় প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে জেরুজালেম অর্থাৎ পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ইহুদী-নাছারাদের হাত থেকে মুক্ত হয়। তখন মুসলিম সেনাপতি ছিলেন বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল যাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি। পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ বিজয়ের পর তিনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট এই বলে চিঠি লিখেন যে, পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ইহুদী-নাছারাদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, তবে তাদের আরজী- তারা পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার চাবি মুবারক সরাসরি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক-এ হস্তান্তর করবে। সুতরাং অনুগ্রহ পূর্বক আপনি যদি জেরুজালেমে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখতেন।
চিঠি পেয়ে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার খাদেমকে নিয়ে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। তিনি যখন জেরুজালেমের নিকটবর্তী হলেন, তখন হযরত আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অগ্রবর্তী হয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি-শ্রান্তি ও ধুলাবালির কারণে উনার সম্মানিত লেবাস মুবারক কিছুটা ব্যতিক্রম দেখাচ্ছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সেটা ধুয়ে পরিস্কার করে নিচ্ছিলেন। হযরত আবূ উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আদবের সাথে পেশ করেছিলেন, লেবাস মুবারক পরিবর্তন করে নিলে কি ভাল হতো না? জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
نَحْنُ قَوْمٌ اَعَزَّنَا اللهُ بِالْاِسْلَامِ
‘আমরা এমন ক্বওম, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দ্বারা আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন।’ সুবহানাল্লাহ! কাজেই আমাকে এরূপ অবস্থায়ই যেতে দিন। মশহূর ইতিহাস রয়েছে, সফরকালে উটের উপর কিছুক্ষণ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সওয়ারী হতেন, আবার কিছুক্ষণ খাদেমকে চড়াতেন। যখন তিনি জেরুজালেম পৌঁছলেন, তখন তিনি ছিলেন উটের লাগাম ধরা অবস্থায় যমীনে, আর উনার খাদেম ছিলেন উটের উপর সাওয়ার অবস্থায়। ইহুদীরা তাওরাত শরীফ, নাছারারা ইঞ্জীল শরীফ খুলে বর্ণনার সাথে সব মিলাচ্ছিল। যখন দেখলো- তাওরাত শরীফ ও ইঞ্জীল শরীফ উনাদের বর্ণনার সাথে সব মিলে যাচ্ছে, উনার লেবাস মুবারক উনার মাঝে ১৩ থেকে ১৪টি পট্টি ছিল, ১টি ছিল চামড়ার পট্টি সেটাও যখন মিলে গেল, তখন তারা নিশ্চিত হলো, উনিই আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং উনার নিকট বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার চাবি হস্তান্তর করতে হবে। তাই করা হলো। চাবি হস্তান্তরের পর ইহুদী-নাছারারা আরজী করলো- আমরা ইসলামী কায়দায় আপনাদের জন্য কিছু মেহমানদারীর ব্যবস্থা করতে চাই, সম্মতি পেয়ে তারা সুন্নতী খাবার রুটি-গোশতের ব্যবস্থা করলো। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সুন্নতী কায়দায় দস্তরখানা বিছিয়ে নিলেন এবং রুটি নিয়ে গোশত দিয়ে খেলেন। খাওয়া শেষে দস্তরখানায় পড়ে থাকা রুটির টুকরাগুলো টুকে টুকে খাচ্ছিলেন। এটা দেখে এক ব্যক্তি চুপে চুপে উনাকে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! এখানে অনেক রাজা-বাদশা, আমীর-উমরা উপস্থিত, আপনি যদি তাদের সম্মুখে এভাবে রুটির টুকরাগুলো টুকে টুকে খান, তবে কেমন দেখা যায়? জবাবে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জালালী তবীয়তে বললেন,
اَاَتْرُكُ سُنَّةَ حَبِيْبِىْ لِاَجْلِ هٰذِهِ الْحُمَقَاءِ
‘আমি কি এ সমস্ত আহমকদের (রাজা-বাদশাদের) জন্য আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক ছেড়ে দিবো।’ সুবহানাল্লাহ!
খাওয়ার পর দস্তরখানা বা প্লেট পরিস্কার করে খাওয়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক। আর আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সর্বাবস্থায় সব কিছুর উপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (উসওয়াতুন হাসানাহ ১/৪-৫)
(চলবে...)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৪)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লেবাছ সুন্নতী কোর্তা
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)