মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাত মুবারক পালনের বেমেছাল দৃষ্টান্ত মুবারক (৩)
, ২৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
আরো বর্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ سِيْـرِيْنَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كُنْتُ مَعَ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ بِعَرَفَاتٍ فَلَمَّا كَانَ حِيـْنَ رَاحَ رُحْتُ مَعَهٗ حَتّٰى اَتَى الْاِمَامَ فَصَلَّى مَعَهُ الْاُوْلـٰى وَالْعَصْرَ ثُـمَّ وَقَفَ مَعَهٗ وَاَنَا وَاَصْحَابٌ لِـىْ حَتَّى اَفَاضَ الْاِمَامُ فَاَفَضْنَا مَعَهٗ حَتَّى اِنْتَهَيْنَا اِلَـى الْمَضِيْقِ دُوْنَ الْمَاْزِمَيْـنِ فَاَنَاخَ وَاَنَـخْـنَا وَنَـحْنُ نَـحْسَبُ اَنَّهٗ يُرِيْدُ اَنْ يُّصَلِّـىَ فَقَالَ غُلَامُهُ الَّذِىْ يُـمْسِكُ رَاحِلَتَهٗ اِنَّهٗ لَيْسَ يُرِيْدُ الصَّلـٰـوةَ وَلٰكِنَّهٗ ذَكَرَ اَنَّ النَّـبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا اِنْتَهٰى اِلـٰى هٰذَا الْمَكَانِ قَضٰى حَاجَتَهٗ فَهُوَ يـُحِبُّ اَنْ يَّقْضِىَ حَاجَتَهٗ
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার উনার সাথে আরাফার ময়দানে ছিলাম। যখন তিনি (আরাফার উদ্দেশ্যে) গমন করলেন, তখন আমিও উনার সাথে গমন করলাম। অতপর যখন ইমাম সাহেব আসলেন, তখন উনার সাথে তিনি পবিত্র যুহর ও আছরের নামায (একসাথে কছর করে যুহরের সময়েই) আদায় করলেন। অতঃপর হযরত ইবনে উমার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে আমি এবং আমার কতিপয় সাথী পবিত্র আরাফার ময়দানে অবস্থান নিলাম। ইমাম সাহেব যখন পবিত্র আরাফার ময়দান ত্যাগ করে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা করলেন, তখন আমরাও উনার সাথে রওনা করলাম। ‘মা’যিমাইন’ নামক স্থানের পূর্বে এক গিরীপথে পৌঁছে তিনি উট থামালেন এবং সেখানে নামলেন। আমরাও উট থামালাম। আমরা ভাবলাম তিনি হয়ত পবিত্র নামায আদায় করবেন। কিন্তু উনার বাহনের রশি ধারণকারী খাদিম বললেন; তিনি এখানে কোন নামায আদায়ের ইচ্ছা করেন নি; বরং তিনি স্মরণ করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই স্থান মুবারকে এসে উনার হাযত মুবারক পূরণ করেছেন। তাই তিনিও পছন্দ করলেন, এই স্থান মুবারকে উনার হাযত পূরণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
উনার সম্পর্কে আরো বর্ণিত রয়েছেন,
وَرُوِىَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْـهُ يُدِيْـرُ نَاقَـتَهٗ فِىْ مَكَانٍ فَسُئِلَ عَنْهُ فَقَالَ لَا اَدْرِىْ اِلَّا اَنِّىْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـعَلَهٗ فَـفَعَلْتُهٗ
অর্থ: “হযরত ইবনে উমার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছেন যে, একবার তিনি একস্থানে উনার উটকে ঘুরাচ্ছিলেন। উনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো (আপনি এটা কি করছেন? কোনো কারণ ছাড়া উটকে কেন ঘুরাচ্ছেন?) তিনি উত্তরে বলেন, আমি কিছুই জানিনা। তবে হ্যা; নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই জায়গায় এমনটি করতে অর্থাৎ উনার উট মুবারক ঘুরাতে দেখেছিলাম, তাই আমিও উনার অনুসরণে এমনটি করছি।” সুবহানাল্লাহ! (শিফা শরীফ ২/৩৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৪২৭)
খাদিমু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাত মুবারক উনার প্রতি মুহব্বত মুবারক
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ اَبِـىْ طَلْحَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهٗ سَـمِعَ حَضْرَتْ اَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ يَقُوْلُ اِنَّ خَيَّاطًا دَعَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَهٗ قَالَ حَضْرَتْ اَنَسٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ فَذَهَبْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلـٰى ذٰلِكَ الطَّعَامِ فَقَرَّبَ اِلَيْهِ خُبْزًا مِّنْ شَعِـيْـرٍ وَمَرَقًا فِيْهِ دُبَّاءٌ وَقَدِيدٌ قَالَ حَضْرَتْ اَنَسٌ رَضِىَ اللهُ تعالـٰى عَنْهُ فَرَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَتَبَّعُ الدُّبَّاءَ مِنْ حَوْلِ الْقَصْعَةِ فَلَمْ اَزَلْ اُحِبُّ الدُّبَّاءَ بَعْدَ ذٰلِكَ الْيَوْمِ
অর্থ: “হযরত ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ ত্বলহা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে বলতে শুনেছেন, একজন দরজী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এক প্রকারের খাদ্য প্রস্তুত করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দাওয়াত মুবারক করলেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, সেই দাওয়াতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমিও গিয়েছিলাম। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে যবের রুটি ও শুরুয়া পেশ করা হল- যার মধ্যে কদু এবং শুকনো গোস্ত ছিল। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ালার আশপাশ হতে কদু মুবারক খুজে খুজে বের করে খেতে দেখলাম। সুবহানাল্লাহ! আর সেই দিন হতে আমিও সর্বদা কদুকে পছন্দ করি।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক ২/৫৪৬, ছহীহ ইবনে হিব্বান ১০/৪০৩, শরহুস সুন্নাহ ১১/৩০৩, আল মাশইয়াখাতুল বাগদাদিয়্যাহ্ ১/২৯৩ ইত্যাদি)
কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,
لَوْ كَانَ حُبُّكَ صَادِقًا لَاَطَعْتَهٗ ... اِنَّ الْمُحِبَّ لِمَنْ يُّحِبُّ مُطِيْعُ
অর্থ: “যদি তোমার মুহব্বত সত্য হয়, তাহলে অবশ্যই তুমি (যাঁকে মুহব্বত করো) উনাকে অনুসরণ করবে। নিশ্চয়ই আশিক্ব সর্বদা মা’শূক্ব উনার অনুগত থাকে।” (শরহুয যারকানী আলাল মাওয়াহিব ৯/১১৮)
আর প্রকৃত মুহব্বত সম্পর্কে বলা হয়,
اَلْـمـَحَبَّةُ الْـمُوَافَقَةُ فِىْ جَمِيْعِ الْاَحْوَالِ
অর্থ: “সামঞ্জস্যপূর্ণ মুহব্বত অর্থাৎ প্রকৃত মুহব্বত সর্বাবস্থায় বিদ্যমান থাকে।” (কালিমাতুল ইখলাছ লি ইবনে রজব ৩২ পৃ.)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই সর্বাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
সর্বোচ্চ
মুহব্বত করেছেন, উনার মুহব্বত মুবারক উনার বিষয়কেও সর্বোচ্চ মুহব্বত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর উনাদের সেই মুহব্বত মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাত মুবারক উনার অনুসরণের মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ! তাইতো উনারা যমীনে থাকতেই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের রেযামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করেছেন এবং সর্বোচ্চ সুসংবাদ মুবারক লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
(চলবে...)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৪)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লেবাছ সুন্নতী কোর্তা
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘কিস্সা’
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন বিভিন্ন প্রকারের সুন্নতী খাবার ‘খেজুর’
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)