মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার পনির (যুবনাহ)
, ৪ঠা শাবান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৭ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১১ই ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
عن حَضْرَتْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ الله تَعَالَى عَنْهُ قَالَ أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِجُبْنَةٍ فِي تَبُوكَ فَدَعَا بِسِكِّيْنٍ فَسَمًّى وَقَطَعَ.
অর্থ: “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে তাবুক জিহাদের সময় কিছু পনির পেশ করা হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “বিসমিল্লাহ শরীফ” পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটলেন এবং কিছু গ্রহণ করলেন। (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুত ত্বয়ামাহ্ : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৮১৯)
পনির প্রস্তুত প্রণালী:
উপকরণ: গরুর খাঁটি দুধ ৮ কাপ বা ২ লিটার, লেবুর রস ১/৪ টেবিল চামচ, লবণ ১ চা চামচ (মিহি গুঁড়ো)।
প্রণালী:
১. একটি বড় পাত্রে মাঝারী আঁচে দুধ জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দেয়ার সময় দুধ যাতে পুড়ে যেতে না পারে সেজন্য ক্রমাগত নাড়তে হবে।
২. অতঃপর এতে লেবুর রস দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে থাকতে হবে। এর ফলে প্রায় সাথে সাথেই দুধ কিছুটা ছাড়া ছাড়া হয়ে যাবে (দুধে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে আরো কিছুটা লেবুর রস দিতে হবে এবং চুলার আঁচ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে নাড়তে হবে)।
৩. দুধ ছানা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে বড় ছাকনির উপর পাতলা সুতি কাপড়ে রেখে দুধ ঢেলে ঠা-া পানি দিয়ে ছানাগুলোকে ধুয়ে ফেলতে হবে যাতে লেবুর রস ধুয়ে চলে যায়।
৪. এরপর লবণ যোগ করতে হবে স্বাদমত। তবে খুব বেশি দেয়া যাবে না, কারণ পরে আবার লবণ দিতে হবে।
৫. লবণ দিয়ে ছানাকে মাখিয়ে ছানা সহ কাপড়টিকে খুব শক্ত করে পেঁচিয়ে চিপে নিতে হবে বা কাপড়সহ ছানা সমান কিছুর উপর রেখে চেপে চেপে বসিয়ে ছানার উপর ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে হবে যেন সব পানি ঝরে যায়। ভারী কিছু দিয়ে চাপা দেয়ার ফলে পনির শক্ত আকার ধারণ করবে। সব পানি ঝরে গেলে ৪/৫ ঘণ্টা পর পনিরের বোলটিকে বের করে ঠা-া কোনো স্থানে বা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
৬. সাধারণভাবে লবণের প্রলেপ পনিরে ফাঙ্গাস জমা থেকে রক্ষা করে। তাই কয়েক ঘণ্টা পর পনিরটি বেশ জমে গেলে ঝুড়ি থেকে বের করে নিয়ে এর গায়ে কাঠি দিয়ে কিছু ছিদ্র করে নিয়ে সম্পূর্ণ পনিরে ভালো করে লবণ মাখিয়ে আবার ঝুড়িতে ভরে একটি ঠা-া স্থানে রেখে দিতে হবে। লবণ বেশি খেতে চাইলে পরপর কয়েকদিন এভাবে লবণ মাখিয়ে ও উল্টে পাল্টে দিতে হবে। তৈরির ২/৩ দিন পর পরিবেশন করা যায়।
পনিরের উপকারিতা :
১. পনিরে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং রাইবোফ্লেবিন মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া পনির ফলিক এসিডের ঘাটতি দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে ফলিক এসিড গর্ভের শিশুর কিছু জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে, যেমন- ঠোঁট কাটা, তালু কাটা এবং হৃদপি- সংক্রান্ত জটিলতা ।
ফলিক এসিড গর্ভাবস্থায় মায়েদের প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি কমায়। গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা এবং বেড়ে ওঠা শিশুর কোষের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ফলিক এসিড গ্রহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পনিরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফলেট, যা শরীরের চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. পনিরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে শক্ত করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দাঁত এবং হাড়ের গঠন মজবুত করতে নিয়মিত পনির খাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে দৈনন্দিন চাহিদার ৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম পনির থেকেই পূরণ হতে পারে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে একদিকে যেমন হাড় দুর্বল হতে শুরু করে, সেই সঙ্গে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। তাই পনির গ্রহণের ফলে ক্যালসিয়াম ঘাটতি মেটাতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। পনিরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি ব্রেস্টে ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের পনিরের মধ্যে হলুদ রঙের পনির বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে উচ্চমানের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. পনিরে রয়েছে পটাশিয়াম শরীরে রক্তরসের ভারসাম্য বজায় রাখে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস পায়। বিশেষত হলুদ পনির শরীরের রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, পনিরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায় ।
৪. পনির খেলে বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পনিরে লাইনোলেইক অ্যাসিড নামে একটি উপাদানও রয়েছে, যা শরীরে জমে থাকা মেদকে দ্রুত গলিয়ে ফেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
একদল গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছে যে, টানা দুই সপ্তাহ শুধু পনির এবং মাখন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে খাদ্য হজম হওয়ার জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায়। এর ফলে একধরনের অ্যান্টি- ইনফ্ল্যামেটরি ফ্যাটি অ্যাসিডও বেশি উৎপন্ন হয়েছে, যা অধিক শক্তির উৎপাদন করেছে এবং ফলাফল হিসেবে কয়েক পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমেছে। এই পদ্ধতিতে ওজন কমানোকে বলে চিজ মেটাবলিজম।
৫. পনিরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস, যা হজমে সহায়ক এবং কোষের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আর এর ম্যাগনেসিয়ামজাত উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৬. পনিরে রয়েছে প্রোটিন যা পেশীর উন্নতিতে কাজে লাগে। ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে থাকে ১১ গ্রাম প্রোটিন।
৭. পনিরে লাইনোলিক এসিড ও স্পাইনগোলিপিডস নামে এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
৮. পনিরের মধ্যে প্রোটিন জাতীয় উপাদান রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা দিনে ৫৫ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় দুই টুকরা পনির খায়, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা ১২ শতাংশ হ্রাস পায়। ইন্সুলিনের উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে, ফলে ডায়বেটিস হলেও নিয়ন্ত্রনে থাকে।
৯. পরিমাণ মত পনির খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টরেলকে দূর করে। পনিরে প্রোবাইওটিক ব্যাকটেরিয়া আছে যা দেহে কোলেষ্টরেল বাড়তে দেয় না।
পনির সংরক্ষণ :
পনির বাইরে রাখলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ভালো থাকে। তবে ফ্রিজে রাখলে তা বাইরের তুলনায় বেশিদিন ভালো থাকবে। পনির কেনার সময় তা প্লাস্টিক র্যাপ দিয়ে মোড়া থাকলেও এভাবে রাখা উচিত নয়। অমসৃণ কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে সংরক্ষণ করাই উত্তম। কারণ আবদ্ধ করে রাখলে পনিরে অনাকাক্সিক্ষত ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।
পনিরের ব্যবহার: বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরীতে পনির ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও পনির কেটে কেটে খাওয়া যায়।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (১)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন মাথায় ব্যবহার করার সুন্নতী ‘কেনায়া’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধানের মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন কালোজিরা ও কালোজিরার তেল
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মধু
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লিবাস ‘জুব্বা’
১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী খাবার মাঠা (লাবান)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাদ্য ‘যব’
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঠান্ডা ও মিঠা পানি পান করা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার যব ও যবের রুটি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফল খাওয়া মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাঁটি মধুসহ সকল সুন্নতী সামগ্রী
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)