মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (২)
, ০১ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
হুদায়বিয়ার সন্ধি নবায়নের প্রচেষ্টা:
কুরাইশরা হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করলে তাদেরকে ৩টি শর্ত দেয়া হয়। প্রথমত তারা সেই শর্তসমূহের ৩য় শর্তটি গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তারা এই শর্তের অর্থাৎ জিহাদের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি চিন্তা করে সন্ধিচুক্তি বহাল রাখার জন্য অতিসত্বর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ পাঠায়। এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন-
ثم خَرَجَ سيدنا حضرت أَبُو سُفْيَانَ عليه السلام حَتَّى قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَدَخَلَ عَلَى ابْنَتِهِ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلْـحَادِيَةِ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ حَبِـيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) فَلَمّا ذَهَبَ لِيَجْلِسَ عَلَى فِرَاشِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَوَتْهُ دُونَهُ فَقَالَ أَرَغِبْتِ بِـهٰذَا الْفِرَاشِ عَنّي أَوْ بِـىْ عَنْهُ قالت بَلْ هُوَ فِرَاشُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنْتَ امْرُؤٌ نَجسٌ مُشْرِكٌ قَالَ يَا بُنَيّةُ لَقَدْ أَصَابَك بِعِلْمِك شَرّ قَالَتْ هَدَانِي اللهُ لِلْإِسْلَامِ وَأَنْتَ يَا أَبَتِ سَيِّدُ قُرَيْشٍ وَكَبِيْـرُهَا كَيْفَ يَسْقُطُ عَنْك الدّخُول فِي الْإِسْلَامِ وَأَنْتَ تَعْبُدُ حَجَرًا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ قَالَ يَا عَجَبَاه وَهَذَا مِنْك أَيْضًا أَأَتْرُكُ مَا كَانَ يَعْبُدُ آبَائِي وَأَتّبِعُ دِينَ سيدنا مولانا مُحَمّدٍ صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ এসে উনার সম্মানিত বানাত উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট যান। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছানা মুবারক-এ যখন তিনি বসতে গেলেন, তখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি তা ভাঁজ করে গুটিয়ে নেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি জানি না যে, (আপনি কি মনে করে তা গুটিয়ে নিলেন-) আমি কি এই বিছানার উপযুক্ত নই? নাকি এই বিছানা মুবারক আমার উপযুক্ত নয়?’ (জওয়াবে) উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, ‘বরং আপনি মুশরিক ও নাপাক। (আমি এটা পছন্দ করি না যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বিছানা মুবারক-এ আপনি বসেন। ’) সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ‘আমার থেকে আলাদা হওয়ার পর আপনাকে অনেক খারাপী স্পর্শ করেছে। ’ না‘ঊযুবিল্লাহ! (জওয়াবে) উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন-
هَدَانِي اللهُ لِلْإِسْلَامِ وَأَنْتَ يَا أَبَت سَيّدُ قُرَيْشٍ وَكَبِيرُهَا كَيْفَ يَسْقُطُ عَنْك الدّخُول فِي الْإِسْلَامِ وَأَنْتَ تَعْبُدُ حَجَرًا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ
‘মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নিসবত মুবারক উনার কারণে) সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হিদায়াত দানকারিণী হিসেবে মনোনীত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর হে আমার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম আপনি হচ্ছেন কুরাইশদের সাইয়্যিদ এবং তাদের মূল। আপনি কিভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেন? আর আপনি এমন এক পাথরের উপাসনা করেন, যে কানেও শুনে না, চোখেও দেখে না?’ তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হায়; আশ্চর্য! আর এটাও কি আপনার কাছ থেকে (আমাকে শুনতে হলো)? তাহলে আমার পূর্বপুরুষরা যাদের উপসনা করতো, আমি কি তাদেরকে ত্যাগ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন উনার অনুসরণ করবো? (আস সীরাতুন নুবুওইয়্যাহ্ লিইবনে হিব্বান ১/৩২২, দালাইলুন নুবুওওয়াহ্ ৫/৮, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৫/২০৬, তারীখে ত্ববারী ৩/৪৬, আল কামিল ফিত তারীখ ২/১১৭, আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্ ৪/২৮০, আল মাগাযী লিল ওয়াক্বেদী ১/৭৯৩, আল ইমতা’ ১/৩৪৯, উয়ূনুল আছার ২/২১৪ ইত্যাদি)
মূলত, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার এই সম্মানিত নছীহত মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম উনার মাঝে বেমেছাল প্রভাব পড়েছিলো, যার কারণে পরবর্তীতে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
যা হোক; উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি নবায়নের বিষয়ে কথা বলার কোন প্রসঙ্গ বা সুযোগ না পেয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি মনক্ষুণœ হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সুপারিশ করার জন্য বলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সুস্পষ্টভাবে জবাব দিয়ে দিলেন যে, আমার দ্বারা তা কোনোদিনই সম্ভব হবে না। এরপরে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে বলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আরো কঠোরভাবে তা প্রত্যাখ্যান করে দেন। সেখান থেকে নিরাশ হয়ে তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট যান এবং একই আরজী পেশ করেন। তিনিও তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট যান এবং উনাকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে আবূ ত্বালিবের মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম! আপনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। আমি আশা করি, আপনি আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন না। ’ অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি উনার আরজী পেশ করেন। ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মুচকি হেসে জবাব দিলেন যে, ‘হে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত মুবারক নিয়েছেন, যা পরিবর্তন করা আমার দ্বারা একেবারেই অসম্ভব। ’ সবশেষে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি ব্যর্থ হয়ে শূন্য হাতে সম্মানিত মক্কা শরীফ ফিরে আসেন।
-মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীকুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)