ঘটনা থেকে শিক্ষা
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সবকিছুরই ফায়সালা রয়ে গেছে
, ২১ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৯ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১২ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একবার কিতাব মুতালায়াহ করার সময় পিপাসিত হয়ে যান। উনার হুজরা শরীফের পাশেই এক ব্যক্তি শরবত বিক্রি করতো। তিনি পানি পিপাসা নিবারনের জন্য শরবত ওয়ালাকে গিয়ে বললেন- ভাই শরবত ওয়ালা, তুমি আমাকে এক গ্লাস শরবত পান করাও, এর বিনিময়ে আমি তোমাকে একটি জরুরী মাসয়ালা শিক্ষা দিব। শরবত ওয়ালা বললো- মাসয়ালার বিনিময়ে আমার শরবত বিক্রি হয় না, আমার শরবত পান করতে হলে পয়সা লাগবে। হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট যেহেতু সেই মুহূর্তে কোন পয়সা ছিল না, সেহেতু তিনি শরবত পান না করেই চলে গেলেন।
এদিকে শরবত ওয়ালা তার মেয়েকে বিবাহ দিবে, বিবাহের বিষয়াদি নিয়ে ছেলে পক্ষের অভিভাবকদের সাথে আলোচনা হচ্ছিল। ছেলের পক্ষ শরবত ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলো- আপনি মেয়ের বিয়েতে কি কি দিবেন? শরবত ওয়ালা বললো- যা চান, তাই দিব। ছেলের পক্ষ বললো- তুমি সাধারণ শরবত ওয়ালা, তুমি যা চাই, তা কি করে দিবে? কিছুক্ষণ কথা কাটা কাটির পর শরবত ওয়ালা রাগ হয়ে বলে উঠলো- আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সব দিব। যদি না দিতে পারি, তবে আমার স্ত্রী তালাক। ছেলের পক্ষ বললো- প্রথমে নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে ফায়ছালা করুন, অতঃপর মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা হবে।
শরবত ওয়ালা তার স্ত্রীর তালাক সংক্রান্ত বিষয়ের ফায়ছালার জন্য আলেমদের দরবারে ঘুরতে লাগলো, কিন্তু কেউ তার ফায়ছালা দিতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত ঘুরতে ঘুরতে শরবত ওয়ালা হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে উপস্থিত হলো এবং উক্ত বিষয়ের ফায়ছালা কামনা করলো। ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সে দিন শরবতের বিনিময়ে এই মাসয়ালাটিই তোমাকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। তুমি সেদিন শরবতের বিনিময়ে পয়সা চেয়েছিলে, আজ আমার কাছ থেকে ফতওয়া নিতে হলে এক হাজার দেরহাম লাগবে। শরবত ওয়ালা এক হাজার দেরহাম নিয়ে আসলো। ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন ফতওয়া দিলেন, “তোমার মেয়ের বিয়েতে এক জিল্দ কুরআন শরীফ দিয়ে দাও, তোমার স্ত্রী তালাক হবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ
অর্থ: “শুকনা এবং ভিজা এমন কিছুই নেই, যা এ স্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ করা হয় নাই। ” (পবিত্র সূরা আন্য়াম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, তার চাইতেও বেশী পবিত্র কুরআন শরীফে রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
অতএব প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ অর্থাৎ দ্বীন ইসলামে সব বিষয়ের ফায়ছালাই রয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করা। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَّلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ:“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)
অর্থাৎ জ্বীন ও মানব জাতির জন্যে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুম মোতাবেক চলতে হলে যা কিছুর দরকার অর্থাৎ তার ব্যক্তিগত পর্যায় হতে শুরু করে, রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত এবং তার পায়ের তলা হতে মাথার তালু পর্যন্ত, তার হায়াত হতে মৃত্যু পর্যন্ত, এক কথায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত সমস্যারই উদ্ভব হোক না কেন, সকল বিষয়েরই ফায়ছালা বা সমাধান দ্বীন-ইসলাম উনার মধ্যে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের মধ্যে রয়েছে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)