মহাসম্মানিত ঐতিহাসিক গাযওয়াতুল হুদায়বিয়াহ বা হুদায়বিয়ার জিহাদ (৭)
, ১৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আইন ও জিহাদ
আলাপ আলোচনার বিষয়াদি অবহিত হয়ে বনু কিনানাহ গোত্রের হুলাইস বিন আলকামা বলল, ‘আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতে দাও।’ লোকেরা বলল, ‘বেশ তবে যাও।’
যখন সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হল তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন-
هٰذَا فُلاَنٌ، وَهُوَ مِنْ قَوْمٍ يُعَظِّمُوْنَ الْبُدْنَ، فَابْعَثُوْهَا
এ ব্যক্তি এমন এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত যারা হাদয়ীর পশুকে অনেক সম্মান করে। অতএব পশুগুলোকে দাঁড় করে দিন।’
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পশুগুলোকে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং তাকে স্বাগত জানালেন। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে সে ব্যক্তি আনন্দে বিভোর হয়ে বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ! এই সকল ব্যক্তিত্ব উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর হতে বিরত রাখা কোন মতেই সমীচীন হবে না।’ এ কথা বলেই সে তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল।
ফিরে গিয়ে সে কুরাইশগণের নিকট বলল, ‘আমি হাদয়ীর পশু দেখে এলাম যাদের গলায় হার দেওয়া আছে এবং পৃষ্ঠদেশ চিরে দেয়া হয়েছে। এজন্য মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর থেকে তাদের নিবৃত্ত রাখা আমি সমীচীন মনে করছি না।’ তার এ সকল কথার প্রেক্ষাপটে কুরাইশ লোকজন ও তার মধ্যে এমন কিছু বাক্য বিনিময় হয়ে গেল যার ফলে সে খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়ল।
এমন সময় উরওয়া বিন মাসউদ সাক্বাফী হস্তক্ষেপ করল এবং বলল, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের নিকট একটি ভাল প্রস্তাব দিয়েছেন। তোমরা উনার প্রস্তাব গ্রহণ করে নাও এবং আমাকে উনার নিকট যেতে দাও।”
অতঃপর কুরাইশদের পক্ষ থেকে সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করল। আলোচনায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকেও সে সব কথাই বললেন, যা তিনি হযরত বুদাইল বিন ওয়ারাক্বা খুযায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এবং পরবর্তীতে কুরাইশদের পক্ষ থেকে প্রেরিত মিকরায বিন হাফ্স্কে বলেছিলেন। প্রত্যুত্তরে উরওয়া বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি আপনি নিজ জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেন তবে কি আপনার পূর্বের কোন আরব সম্পর্কে শুনেছেন যে, সে নিজ জাতিকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে? আর যদি দ্বিতীয় অবস্থা ঘটে যায় তবে মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি এমন কতগুলো মূর্খ ও লম্পট দেখেছি যারা আপনাকে ছেড়ে পলায়ন করবে।
এ কথা শুনে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বললেন, “লাতের ঝুলন্ত চর্ম চুষতে থাক, আমরা উনাকে ছেড়ে পলায়ন করব?”
উরওয়া বলল, “এ লোক কে?”
লোকজন বললেন, তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম।
উরওয়া বিন মাসউদ সাক্বাফী সে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে সম্বোধন করে বলল, ‘দেখেন, সেই সত্তার কসম! যাঁর কুদরতী হাত মুবারকে আমার জীবন রয়েছে। যদি এমন ব্যাপার না হতো যে, আপনি আমার একটি উপকার করেছিলেন এবং আমি তার প্রতিদান দিতে পারিনি, তবে অবশ্যই এর জবাব আমি দিয়ে দিতাম।’
এরপর উরওয়া পুনরায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে কথোপকথন শুরু করল এবং আলাপ-আলোচনা চলা অবস্থায় বার বার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুন নিআমাহ মুবারক (দাঁড়ি মুবারক) সে ধরতে চাচ্ছিল। হযরত মুগীরা বিন শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। হযরত মুগীরা বিন শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে ছিল একটি তরবারী মুবারক। আলোচনার সময় উরওয়া যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুন নিআমাহ মুবারক (দাঁড়ি মুবারক) ধরার জন্য হাত বাড়ানোর মত দুঃসাহস করতো। তখন হযরত মুগীরা বিন শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তরবারীর হাতল দ্বারা তার হাতে আঘাত করতেন এবং বলতেন, “হে বেয়াদব! হাত দূরে রাখ।”
অবশেষে উরওয়া নিজ মস্তক উত্তোলন করে বলল, ‘এ লোক কে?’
লোকেরা বললেন, তিনি হচ্ছেন হযরত মুগীরা বিন শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সে বলল, “অঙ্গীকার ভঙ্গকারী! আমি কি আপনার অঙ্গীকার ভঙ্গের ব্যাপারে দৌঁড় ঝাঁপ করছিনা?” (চলবে)
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৮)
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৬)
১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৭)
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৫)
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৬)
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৪)
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (৩)
২৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (২)
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১১)
১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
৬০ জন সম্মানিত মুসলিম বীর মুজাহিদ উনারা সম্মানিত জিহাদ করলেন ৬০ হাজার কাফিরের বিরুদ্ধে (১)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় (১০)
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার সনদ (৩)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)