মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দ্বারাও জগত পরিচালনা করেন
, ২২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। উনার হুকুম বা নির্দেশেই জগতের সব কিছু পরিচালিত হয়। তবে তিনি জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে যেরূপ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়োগ করেছেন, তদ্রুপ মানুষের মধ্যে যারা খাছ ওলীউল্লাহ তথা আবদাল, কুতুব, গাউছ রয়েছেন, উনাদের কাছেও তিনি জগত পরিচালনার অনেক দায়িত্ব ন্যস্ত করে থাকেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমেই জগত পরিচালনা করে থাকেন। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার অক্ষমতা নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার কারণ। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার সবকিছুই জানেন তারপরও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বান্দার আমল সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে অবহিত করে থাকেন। এর অর্থ এই নয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন না, তাই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা অবহিত করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা জগত পরিচালনা করেন, তার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই রয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا
অর্থ: “জগতের কার্য নির্বাহকারী। ” (পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন” ও “বাগবী শরীফ”-এ উল্লেখ আছে-
(فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا) قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ هُمُ الْمَلَائِكَةُ وُكِّلُوا بِأُمُورٍ عَرَّفَهُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْعَمَلَ بِهَا. هُمُ الْمَلَائِكَةُ وُكِّلُوا بِأُمُورٍ عَرَّفَهُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْعَمَلَ بِهَا. قَالَ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ سَابِطٍ: يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فِي الدُّنْيَا أَرْبَعَةٌ جِبْرِيلُ وَمِيكَائِيلُ وَمَلَكُ الْمَوْتِ وَإِسْرَافِيلُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ. اَمَّا جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَمُوَكَّلٌ بِالْوَحْىِ وَالْبَطْشِ وَهَزْمِ الْجُيُوْشِ وَاَمَّا مِيْكَائِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَمُوَكَّلٌ بِالْمَطَرِ وَالنَّبَاتِ وَالْاَرْزَاقِ وَأَمَّا مَلَكُ الْمَوْتِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَمُوَكَّلٌ بِقَبْضِ الْأَنْفُسِ، وَاَمَّا اِسْرَافِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَهُوَ صَاحِبُ الصُوْرِ.
অর্থ: “(কার্য নির্বাহকারী) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, উনারা হলেন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! .... হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সাবিত্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, চারজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা জগতের কার্য নির্বাহ করে থাকেন। হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম উনারা। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ওহী, বাতাস ও সৈন্য পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বৃষ্টি, ফসল ও রিযিকের দায়িত্বে নিয়োজিত। হযরত মালাকুল মউত আযরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি রূহ কবয করার দায়িত্বে নিয়োজিত। আর হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনি শিঙ্গায় ‘ফু’ দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত। ” কোন কোন তাফসীরে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশেষ বিশেষ ওলীগণ উনাদের হাতে জগতের বিশেষ বিশেষ কাজের দায়িত্ব ন্যস্ত করার কথাও উল্লেখ আছে। ”
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-
قَالَ حَضْرَتِ الْاِمَامُ اَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِى مُسْنَدِهٖ ذُكِرَ اَهْلُ الشَّامِ عِنْدَ عَلِىٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهُوَ بِالْعِرَاقِ فَقَالُوْا اِلْعَنْهُمْ يَا اَمِيْرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ قَالَ لَا سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اَلْاَبْدَالُ بِالشَّامِ وَهُمْ اَرْبَعُوْنَ رَجُلًا كُلَّمَا مَاتَ رَجُلٌ اَبْدَلَ اللهُ مَكَانَهٗ رَجُلًا يَسْقِى بِـهِمُ الْغَيْثَ وَيَنْتَصِرُبِـهِمْ عَلَى الْاَعْدَاءِ وَيَصْرِفُ عَنْ أَهْلِ الشَّامِ بِهِمُ الْعَذَابَ
অর্থ: “হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মুসনাদে আহমদ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন। হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি যখন ইরাকে অবস্থান করছিলেন তখন উনার সম্মুখে শামবাসীদের সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। লোকজন বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন! শামবাসীদের উপর বদদোয়া করুন। হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, না। কারণ আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আবদালগণ উনারা শামদেশেই থাকেন, উনারা সংখ্যায় চল্লিশজন। যখন উনাদের মধ্যে একজন ইন্তিকাল করেন তখন আরেকজন দিয়ে সে স্থান পূর্ণ করা হয়। উনাদের মাধ্যমে শামবাসী বৃষ্টি পেয়ে থাকে, শত্রুর উপর বিজয়ী হওয়ার জন্যে সাহায্য পেয়ে থাকে এবং উনাদের মাধ্যমে তারা আযাব-গযব থেকে বেঁচে থাকে। ” সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাইয়্যিদ আবূ খুবাইব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)