মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য ও রেযামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সৎ চরিত্রবান হওয়া
, ১৯ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
একবার এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন। তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, আপনি যখন যেখানেই অবস্থান করুন না কেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবেন। লোকটি আবার বললেন, আরো কিছু উপদেশ মুবারক দান করুন। তিনি বললেন, আপনি যদি কখনো গোনাহের কাজ করে ফেলেন তাহলে সাথে সাথে একটি নেক কাজ করে নিবেন। তাহলে এই নেক কাজটি আপনার গোনাহের কাজটিকে মিটিয়ে দিবে। লোকটি আবার অনুরোধ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে আরো কিছু উপদেশ মুবারক দান করুন।
তিনি বললেন, “মানুষের সাথে সৎস্বভাব সূলভ কথা-বার্তা বলবেন এবং সবার সাথে সদাচরণ করবেন।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক যাকে উত্তম স্বভাব এবং সুন্দর চেহারা দান করেছেন তিনি কখনোই তাকে জাহান্নামের ইন্ধন বানাবেন না।”
একদিন কতিপয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অমুক স্ত্রী লোকটি দিনে রোযা রাখে এবং সারারাত ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করে কিন্তু তার মেজাজ বড়ই রুক্ষ। তার কর্কশ ভাষা ও ব্যবহারে প্রতিবেশীগণ বিরক্ত।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা শুনে ইরশাদ মুবারক করলেন, “সে স্ত্রী লোকটি জাহান্নামী।” তিনি আরো বললেন, “সিরকা দ্বারা মধু যেমন নষ্ট হয়ে যায়, মানুষের বদস্বভাবের দ্বারা তার যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী মূল্যহীন হয়ে পড়ে। (কিমিয়ায়ে সায়াদাত-২/২১৮)
একদা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত মানুষের গুণাবলীর মাঝে কোন গুণটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, মানুষের সর্বোত্তম গুণ হলো সৎস্বভাব। তিনি আরো বললেন, সূর্যের তাপ বরফকে যেমন বিগলিত করে দেয়; মানুষের সৎস্বভাবও তেমনি তার অপরাধ-অপকর্মকে বিতাড়িত করে।
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেন, একদা আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি গতকাল একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখতে পেলাম। আমার উম্মতদের মধ্যে এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে হাঁটু গেড়ে উপবিষ্ট আছে। এতোদিন তার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মাঝখানে একটি যবনিকা লটকানো ছিলো। লোকটির সৎস্বভাব উপস্থিত হয়ে সেই যবনিকাটিকে সরিয়ে দিল এবং তার ও মহান আল্লাহ পাক উনার মাঝে আর কোনো আবরণ থাকলো না। তিনি আরো বললেন, সৎস্বভাব দ্বারা মানুষ বছরভর রোযা রাখা এবং সারারাত জেগে দাঁড়িয়ে ইবাদত করার পূর্ণ ফযীলত অর্জন করতে পারে। সৎস্বভাবাপন্ন লোকেরা পরকালে উন্নত মর্যাদা অর্জন করবে, যদিও বা তারা ওই মর্যাদা লাভের উপযোগী ইবাদত করেনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বভাব মুবারক সর্বোত্তম এবং অত্যন্ত সুমধুর ছিলো।
সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ফুযায়িল ইবনে আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, অসৎ স্বভাবসম্পন্ন আলিমের সংসর্গের চেয়ে উত্তম স্বৎভাবাপন্ন দুনিয়াদার লোকের সংসর্গ আমার নিকট অধিক প্রিয়। একদিন পথের মাঝে অসৎ স্বভাবাপন্ন একটি লোকের সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাৎ ঘটলো। কিছু সময় উভয়ে এক সাথে পথ চলার পর কুস্বভাবাপন্ন লোকটি উনার সঙ্গ ছেড়ে অন্য পথে চলে গেলো। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অঝোরো ক্রন্দন করতে লাগলেন। লোকেরা উনাকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি এরূপ ক্রন্দন করছেন কেন? তিনি বললেন, ওই হতভাগা কিছুক্ষণ আমার সাথে থাকার পর চলে গেলো বটে, কিন্তু তার অসৎ স্বভাব সে সাথে করেই নিয়ে গেলো। তার স্বভাবের কিছুই সংশোধন করে যেতে পারলো না।
হযরত কাতানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, মানুষের নৈতিক চরিত্রের সংশোধন ও উন্নতিই হলো ইলমে তাছাওউফ বা বাতিনী ইলমের মূল লক্ষ্য। সুতরাং মনে করতে হবে, যার স্বভাব যত উন্নত সে তত উচ্চ পর্যায়ের বুযূর্গ।
হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুআয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে, চরিত্রহীনতা এতো ভয়ানক পাপ যে, কোনো ইবাদতই সে পাপ মোচনে সক্ষম নয়। পক্ষান্তরে, সৎ-স্বভাবের উন্নতি বিধান এতো বড় ইবাদতরূপে গণ্য যে, কোনো ধরনের পাপ বা অপরাধই সেই ইবাদতের কোনো অনিষ্ট করতে পারে না।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)