ঘটনা থেকে শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্দেশে মৃত ব্যক্তি জীবিত হওয়া এবং সূর্য অস্ত যাওয়া ও পুণরায় উদিত হওয়া!
, ২০ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ০২ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যার উপর উনাদের এ নেকদৃষ্টি যতক্ষণ থাকে, তিনি ততক্ষণ বহাল তবিয়তে থাকেন। যখন তার ব্যত্যয় ঘটে তখন অনিবার্যভাবে বিচ্যুতি আসে। মূলতঃ এ ধরনের আখাছ্ছুল খাছ ওলীআল্লাহগণ হলেন অপরাপর ব্যক্তির ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির পথে যাচাইয়ের এক কষ্টিপাথর।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি হক্ব-নাহক্ব পার্থক্য করা ব্যতীত ছাড়বো না। যাঁরা হক্ব তারা এই শ্রেণীর ওলীআল্লাহ উনাদের মুহব্বত লাভে ধন্য হন। আর যারা নাহক্ব তারা তা থেকে বঞ্চিত হয়।
হাদীছে কুদসী শরীফে রয়েছে, “যে আমার ওলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে আমি তার প্রতি জিহাদ ঘোষণা করি।” যে কারণে আমরা দেখি সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবুবে সুবহানী, গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের যামানায় অনেক বড় বড় নামধারী, আলিম, তথাকথিত উলামা, শায়খুল হাদীছ, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির এবং মহান আল্লাহ পাক উনার আশিক দাবিদার যারা রয়েছে তারা ওলীআল্লাহ উনাদের প্রতি শেষ পর্যন্ত সুধারণা রাখতে ব্যর্থ হয়ে অতঃপর হালাক হয়ে গেছে।
মূলতঃ ওলীআল্লাহ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত্ব ক্ষমতায় সমস্ত কিছুর অধিকারী। সমস্ত কিছু উনাদের হুকুমের অধীন। এ বিষয়টি বুঝতে একটি ঘটনা বর্ণনা করা যায়। যেমন এ প্রসঙ্গে ‘তাযকিরাতুল আউলিয়া’ কিতাবে উল্লেখ আছে, মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর ছাহেব, হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ইন্তিকালের পূর্বে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ইল্হাম প্রাপ্ত হয়ে রোম দেশের দিকে রওয়ানা করেন, মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত নিয়ামত আল্লামা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হাদিয়া করার জন্য। পথিমধ্যে এক জঙ্গলের পার্শ্বে দেখতে পেলেন যে, এক বৃদ্ধা মহিলা সম্মুখে একটি মৃত যুবক ছেলেকে নিয়ে খুব কান্নাকাটি করছে। তখন হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বৃদ্ধা মহিলাকে তার ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করায় মহিলা বললো, “হুযূর! এ যুবক আমার একমাত্র নাতি। আমার জীবিকা একমাত্র সেই নির্বাহ করত। সে ব্যতীত আমার কেউই নেই। যার কারণে তার মৃত্যুশোকে আমি আল্লাহর দরবারে ক্রন্দন করছি, যাতে মহান আল্লাহ পাক আমাকে কোন একটা কুদরতী ব্যবস্থা করে দেন।” বৃদ্ধা মহিলার হৃদয় বিদারক কথাগুলো শুনে হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যথিত হয়ে বললেন, “হে বালক! তুমি যিন্দা হয়ে যাও।” একথা বলার সাথে সাথে মৃত বালকটি যিন্দা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। পরে উক্ত বৃদ্ধা মহিলা ও যুবক ছেলেটি হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জন্য দোয়া করে চলে গেল। পরের দিন এ ঘটনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল যে, অমুক জঙ্গলের মধ্যে এক দরবেশের হুকুমে এক মৃত ছেলে জীবিত হয়েছে।
সেই এলাকার বাদশাহ এরূপ ঘটনা শুনে উক্ত ওলীআল্লাহ উনাকে তার রাজ দরবারে উপস্থিত করার জন্য লোকজনকে নির্দেশ দিল। হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাদশাহ’র এরূপ ফরমান শ্রবণ করে নিজেই যথাসময় রাজ দরবারে হাজির হলেন। বাদশাহ হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে চিনতে না পেরে ও উনার মর্যাদা না বুঝেই বললো যে, “হে দরবেশ ছাহেব! আপনি কি সেই ছেলেটিকে আপনার হুকুমে জীবিত করেছেন?” উত্তরে হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আমি এরূপ বলেছি।” তখন বাদশাহ’র দরবারী আলিমরা বললো, “তাহলে আপনি র্শিক করেছেন। কাজেই শরীয়তসম্মত ফায়সালা অনুযায়ী আপনার সমস্ত শরীরের চামড়া খুলে ফেলা হবে।” তখন হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতেই পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে শুরু করে সমস্ত শরীরের চামড়া খুলে বাদশাহ’র সামনে রেখে চলে গেলেন। পরের দিন সকালে যখন সূর্য উঠলো, তখন উনার শরীর মুবারকে চামড়া না থাকায় সূর্যের আলোতে কষ্ট হওয়ার কারণে তিনি সূর্যকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে সূর্য! তুমি আমাকে কষ্ট দিওনা।” একথা বলার সাথে সাথেই উদিত হওয়া সূর্য তৎক্ষনাৎ ডুবে গেল এবং চতুর্দিক অন্ধকার হয়ে গেল। এলাকার সমস্ত লোক ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গেল। চতুর্দিকে হাহাকার শব্দ হতে লাগলো। বাদশাহ ও তার লোকজন বুঝতে পারলো যে, নিশ্চিত সেই দরবেশ বড় বুযুর্গ ও ওলীআল্লাহ হবেন এবং উনার সাথে আমাদের বেয়াদবী হওয়ার কারণেই আমরা এরূপ মুছীবতে পড়েছি। তখন বাদশাহ তার লোকজনসহ হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে গিয়ে উনার হাত মুবারক ধরে ক্ষমা চাইল এবং সূর্যকে আবার যথাস্থানে উঠিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলো। হযরত শামছ তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি সূর্যকে বললেন, “হে সূর্য! আমি বলেছি যে, তুমি আমাকে কষ্ট দিওনা। কিন্তু তুমি কেন সমস্ত লোককে কষ্ট দিচ্ছ?” একথা বলার সাথে সাথে পুনরায় সূর্য যথাস্থানে উঠে গেল; কিন্তু উনার শরীর মুবারকে রোদের তাপ লাগলো না।” সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)