বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
মসজিদ গ্রন্থাগার
, ০৭ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১০ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) বিজ্ঞান মুসলমান উনাদেরই অবদান
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সূচনাকাল থেকেই মসজিদগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ইবাদতের জন্য একটি পবিত্র স্থান ছাড়াও মসজিদে প্রাথমিক পাঠ্যক্রম শেখানো হতো আজকের বিদ্যালয়ের মতোই।
পরবর্তীতে এবং ধীরে ধীরে, উন্নত অধ্যয়ন আর মসজিদে সীমাবদ্ধ ছিল না। বাগদাদ, দামেস্ক, কায়রো, কর্ডোভার মতো বড় বড় শহরগুলিতে মক্তব (স্কুল), মাদরাসা (কলেজ) জামিয়া মাদরাসা (বিশ্ববিদ্যালয়) এবং বড় লাইব্রেরিগুলি গড়ে উঠতে শুরু করে, যা মুসলমানদের বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকলাপকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
অবশ্যই, মসজিদ গ্রন্থাগারের প্রধান বিষয় ছিল দ্বীন ইসলাম সম্পর্কিত। এখানে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অসংখ্য অনুলিপি সংগ্রহে রাখা হতো এবং পবিত্র কুরআনুল কারীম উনার অনেকগুলো তাফসীর হাজার হাজার ভলিউমে রাখা হত। এছাড়া অনেক খ-ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক, অন্যান্য মুসলিম ব্যক্তিত্বের জীবনী অনেক ভলিউমে রাখা হত।
মুসলিম স্বর্ণালী ইসলামী বিশ্বের অনেক বিখ্যাত মসজিদ গ্রন্থাগার ছিল। সবচেয়ে বিখ্যাত হল কায়রোর আল-আজহার, যেটি তৃতীয় হিজরী শতক (তৃতীয় শামসী শতক, নবম খ্রিস্টীয় শতক) এ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুসলিম স্বর্ণালী যুগে যেসব মসজিদগুলিতে বড় লাইব্রেরি ছিল তার মধ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদিনা শরীফ উনাদের মসজিদ, আল-উনাভি মসজিদ (দামাস্কাস), আল-আজহার মসজিদ (কায়রো), আল-মনসুর মসজিদ (বাগদাদ), আল-কামারিয়া মসজিদ (বাগদাদ), আল-জাইতুনাহ মসজিদ (তিউনিস), আল-মসজিদুল জামে‘আ (মারভ/মারাঘা) অন্যতম।
ছবি: গ্রান্ড উমাইয়্যা মসজিদ, দামেস্ক
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রথমদিকের প্রাইভেট লাইব্রেরিগুলো মূলত শাসক এবং জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আগ্রহী গবেষক স্কলারদের মালিকানাধীন ছিল। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামিক দেশগুলোতে অসংখ্য ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। যেমন ইরাকি লেখক গবেষক আল-জাহিজ উনার নিজের লাইব্রেরীর বইয়ের নীচে পিষ্ট হয়ে ইন্তেকাল করেছিলেন বলে জানা যায় ২৫৫ হিজরী (২৩৬ শামসী, ৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ) সনে। আব্বাসীয় উজির ইবনে খাকানের বাগদাদের ঠিক উত্তরে একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল। অন্যান্য আব্বাসীয় শাসক, উজির এবং প-িতদের গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যবহারিক কাজের সংগ্রহ ছিল।
বুওয়াইহিদ খলীফা, অদুদ্দৌলা (৩৭১ হিজরী, ৩৪৮ শামসী, ৯৮১ খ্রিস্টাব্দ) উনার কম্পাউন্ডে (ইরান) একটি লাইব্রেরি ছিল। মুয়েজুদ্দৌলা এবং তার উজির আন-নুমানের গ্রন্থাগারগুলো ছিল ইরানের সবার কাছে সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সূত্র বলছে যে, বুওয়াইহিদ উজির ইবনে সাহলের প্রসিদ্ধ গ্রন্থাগার হিজরী ৪৮২ (শামসী ৪৫৭, খ্রিস্টাব্দ ১০৯০) সালে বেদুইনদের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায় এবং ইরানের রায় প্রদেশের আরেক বুওয়াইহিদ উজির ইবনে আব্বাদের গ্রন্থাগার হিজরী ৪১৯ (শামসী ৩৯৬, খ্রিস্টাব্দ ১০২৯) সালে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ গ্রন্থাগারের কিতাবের ক্যাটালগ দশটি ভলিউমে সংরক্ষিত ছিল। বাগদাদের একজন পরবর্তী বুওয়াইহিদ উজির, সবুর ইবনে আরদাশির হিজরী ৪১৫ (শামসী ৩৯২, ১০২৫ খ্রিস্টাব্দ) সালে ১০ হাজার কিতাবের গ্রন্থাগার তৈরি করেছিলেন।
ফাতেমীয় আমলে মিশরে বেশ কিছু ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের রেকর্ড ছিল, কিন্তু সেগুলি সম্পর্কে আমাদের কাছে তেমন তথ্য নেই। খ্রিস্টান ঐতিহাসিক পিন্টো উল্লেখ করেছে যে, বড় শহরগুলিতে এমন দুর্দান্ত পাবলিক লাইব্রেরি ছিল যে ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব বই সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। তা সত্ত্বেও, আবুল ওয়াফা আল মুবাশ্বির ইবনে ফাতিক প্রাচীন বিজ্ঞানের প্রতি এতটাই উৎসাহী ছিলেন যে তিনি বইয়ের একটি বড় সংগ্রহ একত্রিত করেছিলেন। আরেকটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে কবি ও চিকিৎসক আল-মুয়ারিফের হাজার হাজার চিকিৎসা সংক্রান্ত কিতাব ছিল বলে জানা যায়।
ছবি: উলুঘ বেগ মাদরাসা, (৯শ হিজরী; ১৫শ খ্রিস্টাব্দ), সামারখন্দ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নুরুদ্দীন ইবনে ইসহাক আল-বিতরূজী
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আবু বকর মুহম্মদ ইবনে আবদুল বাকী আল বাগদাদী
১৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের চক্রান্ত (৫)
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আবু আবদুল্লাহ মুহম্মদ আল ইদরিসী আল কুরতুবী আল হাসানী আস সাবতী
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আবু মুহম্মদ জাবির ইবনে আফলাহ আল ইশবিলি
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিখ্যাত মহাকাশ ও জ্যোতিষ বিজ্ঞানী আবু ইসহাক ইবরাহীম ইবনে ইয়াহইয়া আন নাক্কাশ আয যারকালী
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ সৌর ক্যালেন্ডার অত্যন্ত জরুরী। উম্মাহর এই ঘাটতি পুরণের উদ্দেশ্যেই আত-তাক্বউইমুশ শামসী তৈরি করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের উচিত- বিধর্মীদের অনুসরন বাদ দিয়ে আত-তাক্বউইমুশ শামসী অনুসরন-অনুকরন করা।
২৭ আগস্ট, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)