ভারত কেন বাংলাদেশকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলো? (২)
, ০৯ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ মাঘ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আপনাদের মতামত
ঐতিহাসিকদের এ ধরনের তথ্য যদি সত্য হয়, তবে একাত্তরে বাংলাদেশকে ভারত যতটুকুই সাহায্য করেছিলো, তার মূল উদ্দেশ্য কখনই নিঃস্বার্থ ছিলো না, বরং বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে গ্রাস করে নেয়াই ছিলো ভারতের উদ্দেশ্য। অর্থ্যাৎ সদ্য জন্ম নেয়া দুর্বল বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক ও অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকবে তাদের হাতে এই উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশকে সাহায্য করে।
কিন্তু তাদের এ আশায় গুড়ে বালি হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হওয়ার পর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় অস্থায়ী সরকার যেই চুক্তি করুক, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে ফিরে এসে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে প্রথম সাক্ষাতে প্রথম যে কথাটা বলেছিলেন, সেটা ছিলো- ‘ভারতীয় সৈন্যদের বাংলাদেশ থেকে কবে প্রত্যাহার করবেন?’ ইন্দিরা গান্ধী সৈন্য রাখার পক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরতে গেলেও বঙ্গবন্ধু তাতে ছাড় দেননি, প্রত্যাহারের তারিখ চেয়ে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়তায় ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১৭ই মার্চ ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। ফলে ৭ দফা কথিত মৈত্রি চুক্তির কার্যকরীতা অনেকটাই শেষ হয়ে যায়।
এখানে লক্ষণীয়, ‘৭ দফা মৈত্রী চূক্তি’ বলে যদি সত্যি কিছু হয়ে থাকে, তবে এর দ্বারা প্রমাণ হয়, ভারত বাংলাদেশকে যতটুকুই সাহায্য করুক, এর পেছনে তার হীন লোভ কাজ করেছিলো, যেখানে ছিলো সামরিক-বেসামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে নতুন ও দুর্বল রাষ্ট্রটিকে গ্রাস করে নেয়ার উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তাদের সাহায্যটুকু মোটেও নিঃস্বার্থ ছিলো না।
এখানে একটি ইতিহাস জেনে রাখা দরকার, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বলতে আমরা যে যুদ্ধকে বুঝি, ভারতীয়রা কিন্তু সেই যুদ্ধ বুঝে না। আমরা যে যুদ্ধ বুঝি, তার সূচনা হয়েছিলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। অপরদিকে ভারতীয়রা ১৯৭১ সালের ইন্দো-পাকিস্তানী যুদ্ধ বলতে যে যুদ্ধ বুঝে তার সূচনা হয় ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। দুই দেশই ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখকে বিজয় দিবস দাবী করে। অর্থাৎ আমাদের যুদ্ধ হয়েছিলো ৯ মাস, অপরদিকে ভারতের যুদ্ধ হয় মাত্র ১৩ দিন। এখানে পার্থক্যটা কোথায়?
এর পার্থক্যটা হচ্ছে, ভারতের পশ্চিমে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে দুই দেশের বিমানবাহিনীর মধ্যে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরী হয়। যাকে বলা হয় ১৯৭১ সালের ইন্দো-পাকিস্তানী যুদ্ধ। কিন্তু সেই যুদ্ধে ভারতীয়রা তেমন সাফল্য না দেখাতে পারলেও বাংলাদেশীরা ৯ মাস যুদ্ধ করে পাকিস্তানীকে প্রায় ধরাশায়ী করে ফেলে। যুদ্ধের প্রায় শেষের দিকে, অর্থাৎ বিজয়ের মাত্র ১১ দিন পূর্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশীদের সাথে মিলে মিত্রবাহিনী গঠন করে। মাত্র ১১ দিন পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই সম্মিলিত বাহিনীর কাছে পাকিস্তানী বাহিনী আনুষ্ঠানিক আত্মসমপর্ণ করে।
প্রশ্ন এসে যায়, যুদ্ধের মাত্র ১১ দিন আগে যদি ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে না আসতো, তবে কি বাংলাদেশীরা পাকিস্তানীদের পরাজিত করতে পারতো না?
অবশ্যই পারতো। কারণ ভারতীয়রা বাংলাদেশে আসার বহু আগেই পাকিস্তানীরা বাংলাদেশীদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে পরাজিত হয়েছিলো এবং বাংলাদেশের অনেক এলাকা ততদিনে স্বাধীন হয়ে গিয়েছিলো। তবে বিজয়ের মাত্র ১১ দিন আগে এসে ভারতীয়রা শুধু শেষ আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে মাত্র। বিষয়টা অনেকটা সূচ রাজার গল্পের মত। আসল রানী ঘুমন্ত সূচ রাজার দেহের সব সূচ তুলেছে, চাকরানী এসে শুধু চোখের সুই দুটো তুলে নিজে সব কৃতিত্ব দাবী করে বসে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য ছিলো সূচ রাজার গল্পের চাকরানীর মত, এর বেশি কিছু না।
-এস হাবীব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে পরিমাণ বোমা সারাবিশ্বে ফেলা হয়েছে, গাজায় এর চেয়েও বেশি বোমা ফেলা হয়েছে। গাজায় ১৪ মাস ধরে চলছে গণহত্যা, গণহারে শিশুহত্যা এরপরেও মুনাফিক ইউরোপ-আমেরিকা কীভাবে মানবতার কথা প্রচার করে? (পর্ব-২)
২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অমুসলিম-বিধর্মীদের নামে রাস্তা-ঘাটের নামকরণ এদেশের মুসলমানদের অপমান করার শামিল
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ফিলিস্তিনি সংবাদ প্রচারে বাধা দিচ্ছে ফেইসবুক এরপরেও কী বিশ্ব মুসলিম ফেইসবুক বয়কট করবে না?
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গাজায় ইহুদীবাদী আগ্রাসন: আরব সরকারগুলো নীরব ও নিস্ক্রিয় থাকলেও ইহুদী পণ্য বর্জনের মাধ্যমে আরব মুসলিম নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হচ্ছে ইনশাআল্লাহ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উলামায়ে ‘সূ’ আহাজারীর কুফরী মন্তব্যের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সব ঈমানদারদের আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কনসার্ট, যাত্রা, সিনেমা ও জোকারী কায়দায় ওয়াজকারীদের বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে ইনশাআল্লাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী মূল্যবোধ, আদর্শ ও ইতিহাস থেকে ভালো শাসক হওয়ার শিক্ষা নিতে হবে
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কুখ্যাত জেনাখোর এবং জেনা করার জন্য ওয়াজকারী আমীর হামজা কী? তার ওস্তাদ তারেক মনোয়ারের কাছ থেকেই হারামের (ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী) দীক্ষা পেয়েছে?
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ইতিহাস, লুটপাটের ইতিহাস
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইসকনকে নিষিদ্ধ করার আইনি প্রেক্ষিত
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
গণমাধ্যমে হেডিং হয়েছে, “..... সৌন্দর্য নিয়ে ওয়াজ; ক্ষমা চেয়ে আমির হামজা বললো ‘আমি সুস্থ না’” হক্কানী রব্বানী ওলীআল্লাহ বিরোধী হামজা গং ইলমে তাসাউফের বিরোধীতা করায় ওয়াজের গযবে- এখন জিনা করার জন্য ওয়াজ করেছে। (নাউযুবিল্লাহ)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ: কুয়েতে ঋণ নিয়ে নার্সসহ দেড় হাজার ভারতীয়ের পলায়ন অবিলম্বে সব মুসলিম দেশ থেকে ভারতীয় হিন্দুদের উচ্ছেদ করতে হবে ইনশাআল্লাহ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)