ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১১)
, ২১ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ০৭ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) স্থাপত্য নিদর্শন
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আব্দুর রিদার বাসায় এক নৈশ ভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন কোন এলাকার এক শিয়া প-িত। নাম ছিল জাওয়াদ। সে সময় নজদের মুহম্মদ এবং শিয়া প-িতের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলো।
শেখ জাওয়াদঃ আপনি যখন স্বীকার করেন হযরত আলী আলাইহিস সালাম একজন মুজতাহিদ ছিলেন তবে উনাকে অনুসরণ করতে আপনার আপত্তি কিসের?
নজদের মুহম্মদঃ হযরত উমর আলাইহিস সালাম এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার ইজতিহাদকেই কেন দলীল হিসেবে গণ্য করতে হবে। শুধু কুরআন শরীফ এবং সুন্নাহ শরীফকেই নির্ভরযোগ্য দলীল বলে মানতে হবে।
(মূল বিষয় হচ্ছে হযরত ছাহাবা আজমাঈনগণের ক্বওল হচ্ছে দলীল। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ অনুসরণীয়। )
শেখ জাওয়াদঃ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর হযরত আলী আলাইহিস সালাম তার দরজা। ” এতে কি এটাই বোঝায় না তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের চেয়ে আলাদা?
নজদের মুহম্মদঃ হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার কথাই যদি দলীল হবার যোগ্যতা রাখবে তাহলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে যেতেন, আমি তোমাদের জন্য কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ এবং হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনাকে রেখে গেলাম।
শেখ জাওয়াদঃ হ্যাঁ, আমরা তাই ধরে নিতে পারি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটিই বলেছেন। কেননা তিনি বলেছেন, আমি রেখে গেলাম মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব এবং আহলে বাইত। হযরত আলী আলাইহিস সালাম হচ্ছেন আহলে বাইতের একজন সদস্য।
নজদের মুহম্মদ অস্বীকার করলো যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা বলেছেন। যাই হোক, শেখ জাওয়াদ যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে তার ভুলগুলো দূর করার চেষ্টা করলো। নজদের মুহম্মদ বললো, আপনি যদি বলেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি রেখে গেলাম আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও আহলে বাইত” তবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক কোথায় গেল?
শেখ জাওয়াদঃ সুন্নত হচ্ছে কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা। “আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক উনার কিতাব আর আহলে বাইত রেখে গেলাম” বাক্যে আহলে বাইতের মধ্যে সুন্নত অন্তর্ভুক্ত।
নজদের মুহম্মদঃ আহলে বাইত বলতে যদি কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা বোঝাবে তাহলে হাদীছ শরীফ দিয়ে আর কুরআন শরীফের ব্যাখ্যার কি প্রয়োজন?
শেখ জাওয়াদঃ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিদায় নিলেন তখন উম্মতগণ ভাবলেন কুরআন শরীফের একটা ব্যাখ্যা থাকা উচিত যা বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন মিটাবে। এ কারণেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন, উম্মতরা মূল কুরআন শরীফের অনুসরণ করবে আর আহলে বাইত কুরআন শরীফের এমন ব্যাখ্যা করবেন যা কিনা বিভিন্ন সময়ের প্রয়োজন মিটাবে।
তাদের এই বিতর্ক আমি খুব উপভোগ করছিলাম। শিকারীর হাতে চড়ূই পাখি যেমন থাকে তেমনি শেখ জাওয়াদের কাছে নজদের মুহম্মদ নির্বাক হয়ে পড়েছিল। নজদের মুহম্মদের মতই আমি একজনকে খুঁজছিলাম। সমকালীন আলিমগণকে অবজ্ঞা করে, খুলাফায়ে রাশিদীনকে এড়িয়ে গিয়ে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ বুঝার ক্ষেত্রে নজদের মুহম্মদের স্বাধীন চিন্তাধারাকে কাবু করা সহজ কথা নয়। আমার শিক্ষক ইস্তাম্বুলের আহমেদ আফেন্দির সাথে এই আত্মঅহংকারী লোকটার যথেষ্ট পার্থক্য।
পূর্ববর্তী আলিমগণের মত আহমেদ আফেন্দীর ইলম ছিল গভীর এবং পাহাড় সমান। কোন শক্তিই সেই পর্বতকে নাড়াতে সক্ষম নয়। যখনই তিনি ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করতেন, তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ওযূ করে আসতেন। একইভাবে যখন তিনি হাদীছ শরীফের কিতাব বুখারী শরীফ পড়তেন তার পূর্বে ওযূ করে নিতেন। হাদীছ শরীফের এই কিতাবের প্রতি সুন্নী মুসলমানদের রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। অন্যদিকে নজদের মুহম্মদ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপর বিরূপভাব পোষণ করতো। সে বলতো, “আবু হানীফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর চেয়ে আমি বেশী জানি। ”
(কিছু অজ্ঞ, মূর্খ ব্যক্তি যাদের কোন নির্দিষ্ট মাযহাব নেই, তারাও এরকম বলে থাকে। উপরন্তু তার মতে বুখারী শরীফের অর্ধেকে ভুলে ভরা (তার এই উক্তিতে বোঝা যায় হাদীছ শরীফের জ্ঞানের ব্যাপারে সে ছিল অজ্ঞ। )
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুঘল আমলের নিরাপত্তা নিদর্শন হাজীগঞ্জ দুর্গ
০৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রাচীন মসজিদের অজানা ইতিহাস
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাজ-উল-মসজিদ ভারতের সর্ববৃহৎ মসজিদ
২৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক চুনাখোলা মসজিদ
১৯ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৪)
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (৩)
১২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (২)
০৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক বানিয়াবাসী মসজিদ (১)
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ (৩)
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১০)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ (২)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)