বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
ব্যক্তিগত পাঠাগার বা প্রাইভেট লাইব্রেরি
, ১৪ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) বিজ্ঞান মুসলমান উনাদেরই অবদান
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এছাড়াও, ফাতেমীয় শাসক আল-আজিজ বিল্লাহ (হিজরী ৩৬৪-৩৮৫; শামসী ৩৪২-৩৬৩, খ্রিস্টাব্দ ৯৭৫-৯৯৬) এর লাইব্রেরির একটি বিশেষ চরিত্র ইবনে কিলিস, যিনি সম্ভবত উজির ছিলেন, তিনি কিতাব সংগ্রহ ও বিন্যাসে ছিলেন। গ্রন্থাগারটিতে শুধুমাত্র ধর্মতত্ত্বের উপর ১৮ হাজার কিতাব অন্তর্ভুক্ত ছিল, ছিল পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ২৪০০ কপি।
মুসলিম স্পেন আল আন্দালুসিয়ায় চতুর্থ হিজরী শতকে লাইব্রেরি সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০টি। এর কিছু ছিল টলেডোয় (আল তুলায়তুলাহ) বাকিগুলো কর্ডোভা (আল কুরতুবাহ), মালাগা (আল মালাক্বাহ), সেভিল (আল ইসবিলিয়াহ), গ্রানাডায় (আল গারনাতাহ) ও অন্যান্য শহরে।
পাবলিক লাইব্রেরির চেয়ে সেখানে ছিল প্রচুর প্রাইভেট লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিগুলো শুধুমাত্র শাসক, গভর্নর, শাসকপুত্র এবং ধনী অভিজাতদের দ্বারাই নয় বরং গবেষক, স্কলার, ছাত্র এবং এমনকি দরিদ্র ছাত্রদের দ্বারাও গড়ে উঠেছিল। উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম স্পেন আল আন্দালুসিয়ার আলমেরিয়াতে (মদিনাতু আল মারিয়াহ) হিজরী ৫ম শতকে ইবনে আব্বাসের ৪ লক্ষ ভলিউমের একটি প্রাইভেট লাইব্রেরি ছিল বলে জানা যায়। ইবনে হাজম, একজন উস্তাজ, কর্ডোভাতে গবেষক ও বই মুহব্বতকারীদের জন্য একটি চমৎকার লাইব্রেরি উন্মুক্ত করেছিলেন। স্পেনের অন্যতম সেরা বই মুহব্বতকারী ছিলেন কর্ডোভার বিচারক ইবনে সুলেমান, যার একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল যেখানে ছয়জন লেখক ক্রমাগত লেখার কাজ করতেন।
তিউনিসিয়ায়, চিকিৎসক ইবনে আল-জাজার হিজরী ৪র্থ শতকে তিউনিসিয়ার শহর কাইরাওয়ানে একটি ব্যক্তিগত চিকিৎসা গ্রন্থাগারের মালিক ছিলেন। তিউনিসিয়ার হাফসিদ সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা আবু জাকারিয়া ইয়াহইয়া (হিজরী ৬৪৬, শামসী ৬১৫, ১২৪৮ খ্রিস্টাব্দ) ৩৬ হাজার কিতাব উনার ব্যক্তিগত লাইব্রেরির জন্য সংগ্রহ করেছিলেন।
স্কলার ইবনে খালদুন যখন তিউনিসিয়া সফরে যান তখন তিনি সেখানে অসংখ্য মসজিদ ও বিদ্যালয় বা পাঠশালা দেখতে পান যেখানে অনেক বইয়ের সংগ্রহ ছিল।
ইয়েমেনের সাথে মিশরের ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছিল ফাতেমীয় খিলাফতকালে এবং এর পরবর্তী যুগে।
বলা হয় যে চতুর্থ হিজরী শতকে বাগদাদেই একশর বেশি বই বিক্রেতা ছিল এবং ৬৫৬ হিজরী (৬২৫ শামসী, ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ) সালে মঙ্গোলদের দ্বারা ধ্বংস হওয়ার আগে বাগদাদের শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার শিখরে উঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে তখন বাগদাদে ত্রিশটির বেশি পাবলিক লাইব্রেরী ছিল। মুসলিম স্বর্ণালী যুগের অন্যান্য পাবলিক লাইব্রেরিগুলি ছিল বোখারা, মার্ভ থেকে শুরু করে এশিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে, বসরা, দামেস্ক, কায়রো এবং তিউনিসিয়া হয়ে পশ্চিমে মরক্কো এবং স্পেন পর্যন্ত, অর্থাৎ মুসলিম খিলাফত এবং মুসলিম প্রধান প্রায় সব স্থানগুলোতেই পাবলিক লাইব্রেরি গড়ে উঠেছিল।
ঐতিহাসিক ইবন আল-ফুরাত ত্রিপোলির দারুল ইলম পাবলিক লাইব্রেরীকে নিম্নরূপ বর্ণনা করেছেন-
“... এতে সব বিজ্ঞানের প্রায় ত্রিশ লাখ বই ছিল। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পঞ্চাশ হাজার কপি ছিল এবং এখানে আশি হাজার ভলিউমের তাফসীর ছিল। .... এই লাইব্রেরি পৃথিবীর আশ্চর্য গুলোর একটি ছিল। .... এতে ১৮০ জন অনুলিপিকার নিযুক্ত ছিল এবং ত্রিশজন দিনরাত কাজ করত এবং এদের সকলেই তাদের পরিষেবার জন্য ভাল বেতন পেতেন। বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই পাবলিক লাইব্রেরীতে অধ্যয়নের জন্য আসতেন”।
ছবি: আল কারাউইন জামিয়া মাদরাসা (৩য় হিজরী শতক; ৯ম ঈসায়ী শতক)
পূর্বদিকে পারস্যে অনেক পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে লাইব্রেরি ছিল, ভূগোলবিদ, ইয়াকুত আল-হামাউই, যিনি ৬২৫ হিজরী (শামসী ৫৯৪, খ্রিস্টাব্দ ১২২৭) সালে মারভে ছিলেন, সেখানে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ১০টির বেশি বিশাল পাবলিক লাইব্রেরির সন্ধান পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কিছু মসজিদ বা মাদরাসা (স্কুল) ভিত্তিক ছিল। ইয়াকুত উল্লেখ করেছেন যে মার্ভের পাবলিক লাইব্রেরিগুলির বই দেওয়ার নীতিগুলি এতই উদার ছিল যে তিনি একবারে ২০০টিরও বেশি বই ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন!
পঞ্চম হিজরী শতাব্দীর প্রথম দিকে দার্শনিক চিকিৎসক ইবনে সিনা বোখারায় খলীফার দরবারে একটি লাইব্রেরি দেখেছিলেন যেখানে অনেকগুলি বই ভর্তি কক্ষ ছিল, যার সবগুলিই সহজ ব্যবহারের জন্য সাজানো ছিল এবং তা উন্মুক্ত ছিল ছাত্র গবেষক এবং স্কলারদের জন্য।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদ গ্রন্থাগার
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নুরুদ্দীন ইবনে ইসহাক আল-বিতরূজী
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ
২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আবুল ওয়ালিদ মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে রুশদ
২৫ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আবু বকর মুহম্মদ ইবনে আবদুল বাকী আল বাগদাদী
১৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের চক্রান্ত (৫)
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আবু আবদুল্লাহ মুহম্মদ আল ইদরিসী আল কুরতুবী আল হাসানী আস সাবতী
০৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আবু মুহম্মদ জাবির ইবনে আফলাহ আল ইশবিলি
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিখ্যাত মহাকাশ ও জ্যোতিষ বিজ্ঞানী আবু ইসহাক ইবরাহীম ইবনে ইয়াহইয়া আন নাক্কাশ আয যারকালী
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ সৌর ক্যালেন্ডার অত্যন্ত জরুরী। উম্মাহর এই ঘাটতি পুরণের উদ্দেশ্যেই আত-তাক্বউইমুশ শামসী তৈরি করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের উচিত- বিধর্মীদের অনুসরন বাদ দিয়ে আত-তাক্বউইমুশ শামসী অনুসরন-অনুকরন করা।
২৭ আগস্ট, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইসলামী মাস নির্ধারণে সউদী ওহাবী ইহুদী চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচন (পর্ব-৫)
১৯ মার্চ, ২০২৩ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)