জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৯)
, ২৩ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৬ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২২ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিলাদত শরীফ: ২২ হিজরী।
বিছাল শরীফ: ১১০ হিজরী।
বয়স মুবারক: ৮৮ বছর।
পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন ঘটনা:
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একবার প্রশ্ন করা হলো, আপনি কি কখনও কোন কারণে খুশি হয়েছেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, একদিন আমি আমার কামরায় বসে আছি। এমন সময় এক প্রতিবেশিনীকে তার আহালকে সম্বোধন করে বলতে শুনলাম, প্রায় পঞ্চাশ বছর হলো আমি আপনার সংসারে আছি। এ সুদীর্ঘ সময়ে আপনি আমাকে যা দিয়েছেন, তাতেই আমি ছবর করেছি। শীত ও গ্রীষ্মে আপনার নিকট বাড়তি কিছু চাইনি। আপনার দরিদ্রতাকে সহানুভূতির সাথে গ্রহণ করেছি। কখনও কারো নিকট আপনার বদনাম করিনি। কিন্তু আপনাকে দ্বিতীয় বিবাহ করার অনুমতি দিতে আমি পারব না। আমি সব কষ্ট এতদিন এজন্যই সহ্য করেছি যে, আমি আপনাকে দেখব এবং আপনি অন্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না। তবুও যদি আপনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন, তাহলে আমি ইমামুল মুসলিমীন উনার নিকট নালিশ করব। স্ত্রীলোকটির এ কথা শুনে আমার চোখ সিক্ত হতে লাগল। অবশেষে পবিত্র কুরআন শরীফেই দেখতে পেলাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন-
إِنَّ اللّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
অর্থ: নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শরীক করে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করবেন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করতে দেখেছি। তিনি তিলাওয়াত করছিলেন এবং ক্রন্দন করছিলেন, আর উনার দাড়ি বেয়ে অবিরত অশ্রু ঝরছিল। (তবাকাত)
কোন এক ব্যক্তি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার হাল কি? অর্থাৎ আপনার অন্তরে ইশকে ইলাহী কিরূপ? তিনি বললেন, তাদের আবার কি হাল হতে পারে, যাদের জাহাজ সমুদ্রের মধ্যে ভেঙ্গে ডুবে গেছে এবং যারা প্রত্যেকে এক খন্ড কাঠ শেষ অবলম্বন হিসেবে ধরে আছে? উত্তর হলো, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার অবস্থাও তদ্রুপ। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এক ব্যক্তিকে কবরস্থানে বসে রুটি খেতে দেখে তিনি বললেন, লোকটি বোধ হয় মুনাফিক হবে। লোকে উনার এই মন্তব্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বললেন, যার নফ্স্ মৃত ব্যক্তির সম্মুখেও উত্তেজিত হয়, সে মৃত ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। এটাই মুনাফিকের চিহ্ন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুনাজাতে বলতেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাকে নিয়ামত দান করেছেন, কিন্তু আমি তার শুকরিয়া আদায় করিনি। আপনি আমাকে পরীক্ষা করেছেন, কিন্তু আমি ছবর করিনি। শোকর আদায় করিনি বলে আপনি আমার নিকট থেকে নিয়ামত কেড়ে নেননি। ছবর না করার দরুণ আমার পরীক্ষাকে চিরস্থায়ী করেননি। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার নিকট উদারতা ও রহমত মুবারক ব্যতীত আর কিছুই নেই। বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কেউ কখনও হাসতে দেখেনি। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
বিছাল শরীফ
হযরত আবু তারিক আস-সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফের সময় উপস্থিত ছিলাম। তিনি তখন একজন লিখককে ওছীয়ত করেন, আপনি এইরূপ লিখুন- হাসান বিন আবিল হাসান সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় ইহার সত্যতায় সাক্ষ্য দিবে, সে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে। হযরত মুআয বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐরূপ ইরশাদ মুবারক করেছেন। হযরত মুআয বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফের সময় এইরূপ ওছীয়ত করেছিলেন। (তবাকাত)
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হিজরী ১১০ সনে রজবুল হারাম শরীফ মাসে কোন এক ইয়াওমুল খমীস (বৃহস্পতিবার) বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিল প্রায় ৮৮ বছর। উনার একশত দিন পরে হযরত মুহম্মদ বিন সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ হয়। (তবাকাত, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)