জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৮)
, ২২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৭ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২১ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন ঘটনা: একদিন একটি কুকুর দেখে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আখিরাতে আমাকে এ কুকুরের সাথে উঠাবেন। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, আপনি উত্তম, না এ কুকুরটি উত্তম? হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, কিয়ামতের ময়দানে যদি আযাব থেকে পরিত্রাণ পাই, তাহলে আমাকে উত্তম বলতে পারো। নতুবা আমার মত হাসান বছরীর চেয়ে কুকুরটিই উত্তম। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি শুনতে পেলেন কোন এক ব্যক্তি অগোচরে উনার নিন্দা করেছে। তিনি অতি বিনীতভাবে এক থালা খেজুরসহ তার নিকট হাযির হয়ে বললেন, জানতে পারলাম, আপনি আপনার নেকী আমার আমলনামায় পরিবর্তিত করেছেন। আমি তার পরিবর্তে এ সামান্য বস্তু উপহার দিলাম। মাফ করবেন, আমি এর চেয়ে ভাল পুরস্কার প্রদানে অক্ষম। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
একদিন হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি সঙ্গীদের বললেন, আপনারা প্রত্যেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবাগণের ন্যায়। এ কথা শুনে উনারা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, চেহারা, আকৃতি ও দাড়ি রাখার ব্যাপারেই শুধু, অন্য দিক দিয়ে নয়। যদি আপনারা উনাদেরকে দেখতেন, তাহলে আপনাদের দৃষ্টিতে উনারা পাগল বলে প্রতীয়মান হতেন। অপরদিকে উনারা যদি আপনাদের অবস্থা জানতেন, তাহলে আপনাদের একজনকেও উনারা মুসলমান বলতেন না। উনারা নিপুণ অশ্বারোহী, উনারা বাতাস পাখীর মত জান্নাতের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। আর আমরা দুর্বল ও আহত গাধার পিঠে আরোহণ করে ধীরে ধীরে চলতে চলতে পিছনে পড়ে আছি। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
একজন আরববাসী ছবর সম্পর্কে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, ছবর দু’প্রকার: (১) দুঃখ ও বিপদে পড়লে ছবর করা, (২) মহান আল্লাহ পাক উনার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ অর্থাৎ হারাম কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এরপর তিনি ছবর সম্বন্ধে আরো কিছু গুঢ়তত্ত্ব প্রকাশ করলে সেই আরবী লোকটি বললেন, আমি আজ পর্যন্ত আপনার মত কোন যাহিদকে দেখিনি বা শুনিনি। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ভাই! আমার ধৈর্য্য মূলত অধৈর্য্যরে কারণে, আর আমার যুহদ আমার আসক্তির কারণে উৎপন্ন হয়েছে। আরবী লোকটি বললেন, আপনার কথা আমি পরিস্কার বুঝতে পারিনি, মেহেরবানী করে কথাটির ভাবার্থ বুঝিয়ে বলুন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি জাহান্নামকে অত্যন্ত ভয় করি। এই ভয়ে সর্বদা অস্থির থাকি। এটাই আমার অধৈর্য্য। আর আমার জান্নাতের জন্য আসক্তি প্রবল, যার কারণে আমি দুনিয়া ত্যাগী (যাহিদ) হয়েছি। যার ধৈর্য্য শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতের জন্য, সেই প্রকৃত ধৈর্য্যশীল। জাহান্নামের আগুন থেকে নিজকে রক্ষা করার জন্য যে চঞ্চল, সে প্রকৃত ধৈর্য্যশীল নয়। যার যুহদ শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পাওয়ার উদ্দেশ্যে, সে-ই প্রকৃত যাহিদ। শুধু জান্নাত আকাঙ্খা করলে সে যাহিদ হবে না। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত হাযম বিন আবী হাযম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি, দুই বন্ধু অতিশয় মন্দ- দীনার ও দিরহাম, এরা তোমার নিকট থেকে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তোমার কোন উপকার করবে না। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
মানুষের উপকারে আসে এমন ইখলাছ-ই আজ একান্ত প্রয়োজন এবং যেমন শিক্ষা (ইলিম) তেমন কাজ (আমল) হওয়া চাই। আমলের সাথে সাথে ইখলাছ (স্বচ্ছ হৃদয়), ক্বানায়াত (অল্পে তুষ্টি), ছবর (ধৈর্য্য)-- এ তিনটির খুবই প্রয়োজন। এ তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান তার পুরস্কার সম্পর্কে শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনিই উত্তমরূপে অবগত আছেন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি জানতে পারলেন যে, এক ব্যক্তি বিশ বছর যাবত জামায়াতে নামায পড়েন না এবং কারো সাথে মেলামেশা করেন না। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই ব্যক্তির নিকট গিয়ে বললেন, জনাব! আপনি কেন জামায়াতে নামায পড়েন না এবং কারো সাথে মেলামেশা করেন না? তিনি বললেন, হুযূর! মাফ করবেন, আমি ইবাদতে মশগুল আছি। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উত্তরে বললেন, কার সাথে মশগুল আছেন? তিনি বললেন, এমন কোন নিঃশ্বাস বের হয় না, যার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত মুবারক বর্ষিত না হয় এবং আমি নিজে গুনাহ না করি। আমি এই নিয়ামতের শোকর আদায় করতে এবং গুনাহ মাফ চাওয়ার মধ্যে মশগুল আছি। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনি আমার চেয়ে উত্তম কাজে নিযুক্ত আছেন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)