জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৭)
, ২১ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২০ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিছাল শরীফ: ১১০ হিজরী।
বয়স মুবারক: ৮৮ বছর।
পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন ঘটনা:
এ ঘটনায় শামাউন অনুতপ্ত হয়ে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে আরজ করল, হে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি! সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত আমি অগ্নির উপাসনায় কাটিয়ে দিলাম। এখন মাত্র কয়েকটি শ্বাস অবশিষ্ট আছে। এ অবস্থায়ও যদি কোন উপায় থাকে তাহলে সময় বিনষ্ট না করে আমাকে বলুন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তোমার উদ্ধার পাওয়ার এখনও একটি মাত্র উপায় আছে। তা হচ্ছে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করা। শামাউন বলল, যদি আপনি আমাকে এ মর্মে একখানা পত্র লিখে দেন যে, মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আযাব না দিয়ে মুক্তি দিবেন, তাহলে আমি ঈমান আনতে পারি। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তখনই পত্র লিখে দিলেন। শামাউন পত্রে স্বাক্ষর করে তা হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে অর্পন করল ও কাঁদতে কাঁদতে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করল। অতঃপর শামাউন বলল, আমি মারা গেলে আমাকে গোসল দেয়ার পর আপনি নিজের হাতে আমাকে কবরে শোয়াবেন এবং পত্রখানা আমার হাতে রেখে দিবেন। এটাই আমার অন্তিম আকাঙ্খা। কিয়ামতের ময়দানে এটি একটি নিদর্শন হিসাবে আমার হাতে থাকবে। এ বলেই কালেমা শরীফ উচ্চারণ করতে করতে শামাউন মৃত্যুবরণ করে। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও নিজ প্রতিশ্রুতি মুতাবিক তার অন্তিম ইচ্ছা পূর্ণ করেন এবং বহু লোকসহ জানাযা পড়ে তাকে দাফন করেন। পরক্ষণেই হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মনে মনে ভাবলেন, আমি নিজেই পতিত, অন্য পতিতকে কিভাবে উদ্ধার করা সম্ভব? নিজ প্রাণের উপরেই আমার বিশ্বাস নেই, মহান আল্লাহ পাক উনার অধিকারে কেন হস্তক্ষেপ করলাম? এমনিভাবে চিন্তিত মনে নামাযে রাতের বেশির ভাগ সময় পার করে একটু শুয়ে পড়লেন। নিদ্রায় তিনি শামাউনকে স্বপ্নে দেখলেন- অতি উজ্জ্বল একটি তাজ মাথায় ও মূল্যবান পোশাক পরিধান করে হাসিমুখে জান্নাতে পায়চারী করছে। তিনি কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করেন, শামাউন! তুমি কি অবস্থায় আছো? হাসিমুখে শামাউন উত্তর করল, যেমন বাহ্যিক দেখছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে উনার জান্নাতে স্থান দিয়েছেন এবং উনার অফুরন্ত নিয়ামতস্বরূপ উনার সাক্ষাত দান করেছেন। এ পত্রখানা ফেরত নিন, এখন এর আর প্রয়োজন নেই। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জেগে উঠে পত্রখানা উনার হাতের মুঠোয় রয়েছে দেখে অত্যন্ত অবাক হয়ে বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার কোন কাজই নিয়মের অধীন নয়। সত্তর বছর অগ্নি উপাসনার পর এক কালেমা শরীফের বরকতে আপনি শামাউনকে আপনার দীদার পর্যন্ত দান করেছেন। তাহলে সত্তর বছর বয়স্ক মু’মিনকে আপনি কেমন নিয়ামত দান করবেন?
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজকে খুবই নীচু মনে করতেন এবং অপরকে উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন। একদিন দজলা নদীর তীরে তিনি এক কাফ্রি ব্যক্তিকে দেখলেন, সে একজন স্ত্রীলোকের সাথে বসে আছে। তাদের সামনে রাখা একটি বোতল থেকে কাফ্রি লোকটি কিছু পান করছিল। এ দৃশ্য দেখে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, এ ব্যক্তি কি আমার চেয়ে উত্তম? সে একজন স্ত্রীলোকের সাথে একাকী বসে মদ পান করছে। অতএব সে কিভাবে আমার চেয়ে উত্তম হতে পারে? এমনি ভাবনার গভীরতায় যখন তিনি পৌঁছলেন তখনই সেখানে একখানা নৌকা ভিড়ল। ঢেউয়ের আঘাতে নৌকাটি উল্টে গেল। নৌকায় সাতজন আরোহী ছিল। কাফ্রি তাদের প্রাণ রক্ষার জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বীরত্বের সাথে ছয়জনকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। তারপর হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি লক্ষ্য করে সে বলতে লাগল, পানিতে নিমগ্ন সাতজন আরোহীর মধ্যে আমি ছয়জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আপনি বাকী একজনকে উদ্ধার করুন। হে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি! এ স্ত্রীলোকটি আমার মা, আর এ বোতল থেকে যা পান করেছি, তা হালাল পানীয়। আপনি অন্ধ না দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন সেটা পরীক্ষার জন্যই আমি এমনটি করেছি। এখন দেখলাম, আপনি বাস্তবিকই অন্ধ। এ কথা শুনে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি খুব লজ্জিত হন এবং অন্যায় ধারণার জন্য কাফ্রির কাছে ক্ষমা চেয়ে ভাবলেন, উনাকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি এ কাফ্রিকে পাঠিয়েছেন। তিনি কাফ্রিকে সম্বোধন করে বললেন, হে কাফ্রি! তুমি এতগুলি লোককে যখন নদীর পানি থেকে উদ্ধার করেছ, তখন দয়া করে আমাকেও অন্ধকার রূপ নদীর অতল গর্ভ থেকে উদ্ধার করো। কাফ্রি উনাকে দোআ করে বললেন, আপনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দিব্যচক্ষু দান করুন। এ ঘটনার পর হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনে আর কখনও কাউকে নিজের চেয়ে নিকৃষ্ট মনে করতেন না। (তাযকিরাতুল আওলিয়া) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)