জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
, ১৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০২ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিলাদত শরীফ: ২২ হিজরী।
বিছাল শরীফ: ১১০ হিজরী।
বয়স মুবারক: ৮৮ বছর।
পরবর্তী জীবনের বিভিন্ন ঘটনা:
বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি সবসময় চিন্তায় নিমগ্ন থাকতেন। আর হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সব সময় হাসি-খুশি দেখা যেত। (তবাকাত)
হযরত আল-হাকাম বিন হাজাল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বন্ধু ছিলেন। হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফের পর হযরত আল-হাকাম রহমতুল্লাহি আলাইহি খুবই চিন্তান্বিত হন। তিনি বলেন, আমি আমার ভাই হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি একটি রাজ-প্রাসাদে বাস করছেন। আমি উনাকে উৎকৃষ্ট হালে দেখতে পেলাম। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অবস্থা কি? তিনি বললেন, উনাকে আমার উপরে নব্বই অথবা সত্তরগুণ অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তা কেন? তিনি বললেন, এর কারণ হচ্ছে উনার সুদীর্ঘ সময় পর্যন্ত চিন্তায় নিমগ্ন থাকা। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
একবার খলীফা হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এই মর্মে একটি পত্র লিখেন যে, উনাকে যেন তিনি কিছু নছীহত করেন। এ নছীহত এমন হওয়া চাই, যা খলীফা সর্বদা স্মরণ রাখতে এবং তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন। তিনি উত্তরে লিখেন, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সাথে থাকেন, তাহলে আপনার ভয় কিসের? অপরপক্ষে যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সাথে নেই বলে বিশ্বাস করেন, তাহলে কার কাছ থেকে আপনি রহমতের আশা করতে পারেন? (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
হিলইয়াতুল আওলিয়া কিতাবে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় এই পত্রখানার সুদীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে। (প্রায় ৬ পৃষ্ঠার অধিক)
একবার হযরত ছাবিত বনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পত্র লিখেন, শুনতে পেলাম আপনি এবার হজ্জে গমন করবেন। আমিও আপনার সঙ্গী হতে ইচ্ছুক। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উত্তরে লিখেন, সে চিন্তা ছেড়ে দিন। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার গুপ্ত রাজ্যে বাস করতে পারি। একত্র হলেই পরস্পর পরস্পরের দোষ-ত্রুটি জানতে পারব এবং একে অপরকে খারাপ মনে করতে থাকব। এ কারণে আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারলাম না। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
একবার হযরত মালিক ইবনে দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করেন, আলেমের বিপদ হয় কিসে? তিনি উত্তরে বলেন, আত্মার মৃত্যুতে। হযরত মালিক ইবনে দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি আবার জিজ্ঞেস করেন, আত্মার আবার মৃত্যু কিভাবে হয়? হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হলেই আত্মার মৃত্যু হয়। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত আবদুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদিন সকালে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে একই জামায়াতে নামায পড়ার আশায় মসজিদের কাছে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ এবং ভিতরে তিনি উচ্চস্বরে দোআ করছেন ও কয়েকজন লোক উনার সাথে আমীন-আমীন বলছেন। আমি মনে করলাম, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুরীদগণের সাথে এ মুনাজাতে লিপ্ত রয়েছেন। কিছুক্ষণ পর আমি দরজায় আওয়াজ করতেই তিনি দরজা খুলে দিলে আমি ভিতরে প্রবেশ করে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একাকী পেয়ে অবাক হয়ে গেলাম। এরপর ফজরের নামায পড়ে লোকজন চলে গেলে, এ রহস্য জানার জন্য উনার খিদমতে আরজ করলে তিনি বললেন, সাবধান এ বিষয়টি কাউকে বলবেন না। ঘটনা হলো এই যে, প্রত্যেক জুমুয়ার রাতে এখানে জিনেরা আসে। আমি তাদেরকে দ্বীনের হুকুম-আহকাম শিক্ষা দান করে মুনাজাতে মশগুল হই এবং তারা আমার সাথে আমীন-আমীন বলতে থাকে। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
এক বুযূর্গ ব্যক্তি বলেন, একবার আমি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে হজ্জে গমন করলে পথে একদিন আমি খুবই তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ি। পানির জন্য কূপের কাছে যাই। কিন্তু সেখানে বালতি ও দড়ি কিছুই পেলাম না। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যখন আমি নামাযে মশগুল হবো, তুমি তখন পানি পান করবে। এ কথা বলে তিনি নামাযে মশগুল হলেন। আমি কূপের কাছে গিয়ে দেখি পানি কূপের কানায় কানায় ভর্তি হয়ে আছে। পানি পান করে আমি পরম তৃপ্তি লাভ করলাম। আমার এক বন্ধু পাত্র ভরে পানি নিলেন। পরক্ষণেই পানি নীচে নেমে গেল। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামায শেষে ঘটনা অবগত হয়ে বললেন, তুমি কি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর বিশ্বাস রাখ না? যদি তাই হতো তাহলে পানি কখনও নীচে নেমে যেত না। এরপর যখন আরো পথ চলতে লাগলাম, পথে তিনি একটি খেজুর ফল পেয়ে তা উঠিয়ে আমাকে দিলেন। আমি সেটি খেয়ে ফেললাম। কিন্তু বীজটি স্বর্ণের মত দেখাচ্ছিল বলে আমি সেটি রেখে দিলাম। পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে স্বর্ণকারের কাছে তা বিক্রয় করে আমি খাবার খরিদ করলাম এবং দরিদ্র লোকদেরকে দান করলাম। (তাযকিরাতুল আওলিয়া) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৩)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৭)
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩৯)
২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় সম্মানিত মশহূর লক্বব মুবারক এবং এই সম্পর্কে কিছু আলোচনা
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় বেমেছাল খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)