জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩)
বিলাদত শরীফ: ২২ হিজরী। বিছাল শরীফ: ১১০ হিজরী। বয়স মুবারক: ৮৮ বছর।
, ১৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ক্বাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন লোকদের মধ্যে হালাল-হারাম বিষয়সমূহে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। হযরত হিশাম বিন হাস্সান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন উনার যামানায় সবচেয়ে বেশি সাহসী ব্যক্তিত্ব। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত মুহম্মদ বিন সা‘দ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন সর্বগুণে গুনান্বিত ব্যক্তি, আলিম, উচ্চ মর্যাদা-সম্পন্ন, ফক্বীহ, নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী, দলীল-প্রমাণ, সংরক্ষিত, আবিদ, যাহিদ, অধিক ইলিমধারী, সুবক্তা, সুন্দর এবং প্রশান্ত-চিত্ত ব্যক্তি। (তবাকাত)
হযরত মুহম্মদ বিন আমর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলতে শুনেছি, ওযূ দোযখের আগুনকে পরিবর্তন করে অর্থাৎ ঠান্ডা করে দেয়। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অতঃপর আমি ইহা (অর্থাৎ ওযূ) আর পরিত্যাগ করিনি। অর্থাৎ তিনি সব সময় ওযূ অবস্থায় থাকতেন। (তবাকাত)
হযরত ঈসা বিন আবদির রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখেছি, উনার মাথায় ছিল কালো পাগড়ী, পেছন দিকে পাগড়ীর শিমলা, তিনি ক্বামীছ ও চাদর পরিহিত ছিলেন। (তবাকাত)
একদিন লোকজন উনাকে জিজ্ঞেস করল, হযরত! মুসলমানী কি এবং মুসলমান কে? তিনি বললেন, মুসলমানী কিতাবে এবং মুসলমান কবরে আছেন। অন্য একবার লোকেরা জিজ্ঞেস করল, দ্বীনের মূল কি? উত্তরে তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করা অর্থাৎ পরহেযগারী। উনাকে আবার প্রশ্ন করা হলো, কোন জিনিস আল্লাহভীতিকে ধ্বংস করে? তিনি বললেন, লোভ। প্রশ্ন করা হলো, হযরত! আদন কি? উত্তরে তিনি বললেন, সেটি স্বর্ণ-নির্মিত একটি অট্টালিকা। সে অট্টালিকায় হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, শহীদ, সত্যবাদী এবং সুবিচারক শাসকগণের স্থান হবে। আর কেউ সেখানে স্থান পাবে না। উনাকে আবার প্রশ্ন করা হলো, যে চিকিৎসক স্বয়ং রোগী, সে অন্যের চিকিৎসা কিভাবে করতে পারে? তিনি উত্তরে বললেন, প্রথমে নিজের চিকিৎসা এবং পরে অন্যের চিকিৎসা করবে। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
একদিন তিনি বললেন, হে মানবগণ! তোমরা আমার উপদেশ শুনো। আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তোমাদের উপকারে আসবে। শ্রোতাগণ উত্তরে বললেন, হুযূর! আমাদের অন্তর নিদ্রিত। আপনার কথা আমাদের মন মেনে নিচ্ছে না, এখন কি করবো? তিনি উত্তরে বললেন, না, নিদ্রিত নয় বরং মৃত। কেননা নিদ্রিত ব্যক্তিকে ধাক্কা দিলে সে অবশ্যই জেগে উঠে। কিন্তু মৃত ব্যক্তি কখনও জাগে না। কেউ কেউ বলল, হুযূর! একদল লোক এজন্য আপনার ওয়াজ শুনে ও মনে রাখে, যেন এর মধ্যে দোষ-ত্রুটি বের করতে পারে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, ভাইয়েরা আমার! আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সান্নিধ্যে নিজকে জান্নাতে দেখার প্রত্যাশী, মানুষের কাছ থেকে নিরাপদ থাকার প্রত্যাশী নই। কারণ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি পর্যন্ত তাদের জিহ্বার আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকেননি। আমি আর এমন কে যে, তাদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকার আশা করতে পারি? লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হুযূর! লোকেরা এমনও বলে, প্রথমে নিজে পবিত্র হবে, পরে লোককে উপদেশ দান করবে। এর উত্তরে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, শয়তানও আকাঙ্খা করে যে, সৎকাজে আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাক। (তাযকিরাতুল আওলিয়া)
এক মজলিসে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়াজ করছিলেন। ইত্যবসরে সৈন্য-সামন্তসহ খোলা তরবারি হাতে হাজ্জাজ সেখানে উপস্থিত হলো। এক ব্যক্তি আস্তে আস্তে বলতে লাগল, আজ হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পরীক্ষা করা যাবে। তিনি হাজ্জাজকে দেখামাত্র তার সম্মানার্থে ওয়াজ বন্ধ করেন কি-না! হাজ্জাজ যথারীতি সভাস্থলে প্রবেশ করে চুপচাপ এক কোণে বসে পড়ে। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার প্রতি ভ্রƒক্ষেপ না করে ওয়াজ করতে লাগলেন। এমনটি দেখে সে ব্যক্তি বলল, হাসানই হুসন (অর্থাৎ সৌন্দর্য)। ওয়াজ শেষ হলে হাজ্জাজ উনার কাছে গিয়ে উনার হাতে চুম্বন দিয়ে বললো, যদি কেউ সত্যিকার ওলীকে দেখতে চায়, তবে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখুক। (তাযকিরাতুল আওলিয়া) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)