জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১০)
, ২৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিলাদত শরীফ: ২২ হিজরী।
বিছাল শরীফ: ১১০ হিজরী।
বয়স মুবারক: ৮৮ বছর।
বিছাল শরীফ
হযরত উরওয়া বিন যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি পাখি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ধরে মসজিদের মধ্যে ঢিল মারছে। তখন হযরত ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যদি তুমি সত্য সত্যই এইরূপ স্বপ্ন দেখে থাকো, তবে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অল্প কিছুক্ষণ পরেই খবর আসলো যে, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন। (তবাকাত)
হযরত হিশাম বিন হাস্সান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমরা ইয়াওমুল খমীস (বৃহস্পতিবার) বিকালে হযরত মুহম্মদ ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ছিলাম। এক ব্যক্তি আছরের সময়ের পরে উপস্থিত হয়ে বলল, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন। ইহা শুনে হযরত মুহম্মদ বিন সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল, সূর্য ডুবা পর্যন্ত তিনি কোন কথা বললেন না। উনার হাল ও ওয়াজ্দ্ দেখে লোকেরাও কিছু বলল না। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত হুসাইন বিন মুসলিম আল-বাহিলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত আবদুল্লাহ বিন হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট লোক পাঠিয়ে অনুরোধ করলাম যে, তিনি যেন উনার পিতার কিতাবসমূহ আমার নিকট প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি আমাকে এই সংবাদ দিলেন যে, যখন হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্তিম সময় উপস্থিত হলো, তিনি নির্দেশ দিলেন, কিতাবসমূহ একত্রিত করো। আমি সেগুলি একত্রিত করলাম, আমরা জানতাম না তিনি এগুলি দিয়ে কি করবেন। অতঃপর উনার নিকট এগুলি নিয়ে আসলাম। তখন তিনি উনার খাদিমকে বললেন, এগুলি সব চুলায় নিক্ষেপ করো। শুধু একটি ছহীফা (পুস্তিকা) ব্যতীত সব কিতাব জ্বালিয়ে দেয়া হলো। পুস্তিকাটি তিনি আমার নিকট প্রেরণ করলেন। এরপর আমি উনার সাথে সাক্ষাত করলে তিনি মৌখিকভাবে এ সম্পর্কে বললেন। (তবাকাত)
উনার ক্বওল শরীফসমূহ
(তাযকিরাতুল আওলিয়া কিতাব থেকে উদ্ধৃত)
১। ছাগল মানুষের চেয়ে সাবধান। কারণ, সে রাখালের ডাক শুনে ঘাস খাওয়া বন্ধ করে ও তার দিকে দৌড়ে আসে। পক্ষান্তরে মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার আহ্বান শুনে উনার দিকে দৌড়ে যায় না এবং পাপ কাজ থেকে বিরত হয় না।
২। অসৎ লোকের সংসর্গে থাকলে সে সৎলোকের প্রতি অসৎ ভাব জন্মিয়ে দেয়।
৩। যদি কেউ আমাকে মদ ও দুনিয়াদারীর প্রতি আহ্বান করে, তাহলে আমি দুনিয়াদারীকে অধিক অপছন্দ করব।
৪। যখন দেখব, তোমার মনে বিন্দুমাত্রও মহান আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতা নেই তখনই আমি বুঝব, তুমি প্রকৃত মা‘রিফাত লাভ করেছ।
৫। অনন্ত সুখময় জান্নাত শুধুমাত্র কয়েকদিনের বাহ্যিক কিছু আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা লাভ করা যায় না। বরং তা আন্তরিকতা ও রিয়াযত-মাশাক্কাত দ্বারা লাভ করতে হয়।
৬। জান্নাতীগণ সর্বপ্রথম যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক দর্শন করে উনারা শত শত বছর চেতনা হারিয়ে বিভোর হয়ে থাকবেন। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারকের তাজাল্লী দেখে ভয়ে ও আতঙ্কে অভিভূত হয়ে পড়বেন এবং উনার অপার সৌন্দর্য মুবারক প্রত্যক্ষ করে উনার তাওহীদে ডুবে থাকবেন।
৭। ইস্তেখারার বিষয়টি হচ্ছে আয়নার মত। তাতে তোমার ভাল-মন্দ কাজগুলি প্রতিফলিত ও সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। যখন সৎচিন্তা মনে উদিত হবে তখন মনে করবে, তুমি সৎ পথে আছ। আর যখন মনে কু-চিন্তা জাগবে, তখন মনে করবে, তুমি অসৎ পথের পথিক হয়েছ।
৮। যার কথা নির্বোধের ন্যায় যুক্তিহীন, সে ব্যক্তি বিপদসদৃশ অর্থাৎ তার কথা তোমাকে বিপথে চালিত করতে পারে।
৯। নীরব চিন্তায় যার হৃদয় মহান আল্লাহ পাক উনার গোপন ভেদ না জানে, সে দুনিয়াদারি ও অলসতায় ডুবে আছে এবং যার দৃষ্টিতে মহান আল্লাহ পাক উনার গোপন ভেদের আভাস নেই, তার দৃষ্টি ধূলিতে আচ্ছন্ন, অর্থাৎ সত্যদৃষ্টি সে লাভ করেনি।
১০। তাওরাত শরীফে আছে, যে ব্যক্তি অল্পে তুষ্টি (قناعت) অভ্যাস করে, সে পরমুখাপেক্ষী নয়। যে ব্যক্তি মানুষের সংশ্রব থেকে মুক্ত হয়েছে সে ব্যক্তিই প্রকৃত তুষ্টি লাভ করেছে। যে ব্যক্তি নফ্স্কে বশ করেছে, সেই স্বাধীন। যে হিংসা ত্যাগ করেছে, সেই বন্ধুত্ব লাভের যোগ্য। যার হিংসা নেই, লোকে তাকে মুহব্বত করে ও তার বন্ধুত্ব কামনা করে। যে কিছুদিন (পার্থিব জীবনে) ধৈর্য ধারণ করতে পারে, সে অনন্তকাল (আখিরাতে) সুখে থাকার যোগ্যতা লাভ করে। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)