জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আমির বিন আবদিল্লাহ বিন আবদিল ক্বায়েস আল-আনবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
বিলাদত শরীফ: তারিখ উল্লেখ নেই। বিছাল শরীফ: হিজরী ৬০ সনের পূর্বে।
, ০৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কারামত মুবারক:
বর্ণিত আছে যে, হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজ করেছিলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন উনার অন্তরকে স্ত্রীলোকের আকর্ষণ থেকে মুক্ত রাখেন। অতঃপর কোন পুরুষের সাথে সাক্ষাত অথবা কোন মহিলার সাথে সাক্ষাত এই উভয় ক্ষেত্রে উনার কোন মানসিক পরিবর্তন ঘটত না। আর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজ করেছিলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন নামাযের মধ্যে উনার অন্তরকে শয়তান থেকে মুক্ত রাখেন। সুতরাং শয়তান নামাযের মধ্যে উনার কোন ক্ষতি করতে পারত না। বর্ণিত আছে যে, তিনি গৃহের বাইরে রাত্রি যাপন করতেন। উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি রাত্রে কি সিংহের ভয় করেন না? উত্তরে তিনি বলেন, আমি আমার রব তায়ালা উনার নিকট তিনি ব্যতীত অন্য কিছুকে ভয় করতে লজ্জাবোধ করি। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
একবার হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাস্তায় হেঁটে চলছিলেন। দেখা গেল একটি কাফেলা রাস্তায় দ-ায়মান, সম্মুখে চলছে না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? কাফেলার লোকেরা বলল, সম্মুখে রাস্তার উপর একটি সিংহ পথ রোধ করে আছে। সেজন্য কাফেলা সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছে না। হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ইহা তো কুকুরগুলোর মধ্যে একটি কুকুর। অতঃপর তিনি ইহার পাশ দিয়ে চলে গেলেন, এমনকি উনার কাপড় সিংহের মুখের সাথে লাগল। তিনি কোন ভয় করলেন না, সিংহও আক্রমণ করল না। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
একবার হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাড়ীর খুব নিকটে কোন বাড়ীতে আগুন লাগল। উনাকে বলা হলো, আগুন আপনার বাড়ীর একেবারে নিকটে এসে গেছে। তিনি বললেন, ইহাকে এর মর্জিমত চলতে দাও, ইহা তো আদিষ্ট। তিনি সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ না করে নামাযে অগ্রসর হলেন। আগুন জ্বলতে জ্বলতে যখন উনার বাড়ীর নিকট আসল, ইহার গতির দিক পরিবর্তন করে ভিন্ন দিকে জ্বলতে জ্বলতে চলে গেল, উনার বাড়ী স্পর্শ করল না। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
বছরার আমীর যিয়াদের অসন্তুষ্টি:
একবার বছরার আমীর (গভর্ণর) লোক পাঠিয়ে হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট কয়েকটি প্রশ্নের জাওয়াব চাইলেন। গভর্ণর বলে পাঠালেন, আমীরুল মু’মিনীন (খলীফা) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনার নিকট থেকে এই প্রশ্নগুলির জাওয়াব চাই।
প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে: আপনি বিবাহ করেন না কেন?
তিনি উত্তর দিলেন: আমি ইহা পরিত্যাগ করিনি, আমি বিবাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এজন্য আমার চাহিদা অনুযায়ী পয়গাম দিয়ে যাচ্ছি।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে: আপনি মাখন খান না কেন?
তিনি উত্তর দিলেন: আমি যে দেশে বসবাস করি, সেখানে অগ্নি-উপাসক রয়েছে। আমার নিকট মুসলমানদের তরফ থেকে এমন দুই জন সাক্ষী নেই যারা সাক্ষ্য দিবে যে, আমার খাওয়ার বস্তুর মধ্যে কোন মৃত বস্তু নেই।
তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে: আপনি আমীরদের নিকট যান না কেন?
তিনি উত্তর দিলেন: আপনাদের দরজায় অভাবী লোকদের অনেক প্রয়োজন রয়েছে, তাদেরকে ডেকে তাদের প্রয়োজন পূরণ করুন। আর আপনাদের নিকট যে সব লোকের কোন প্রয়োজন নেই, তাদেরকে ছেড়ে দিন। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
একবার হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জনসমাগমের মধ্যে পথ চলছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন, একজন যিম্মীর (মুসলমানদের দেশে অমুসলিম নাগরিক) উপর জুলুম করা হচ্ছে। হযরত আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি তার চাদর ধরলেন এবং বললেন, আমি যতক্ষণ জীবিত আছি, মহান আল্লাহ পাক উনার যিম্মা কেউ তুচ্ছ করতে পারবে না। অতঃপর সেই যিম্মী ব্যক্তিকে জুলুম থেকে বাঁচিয়ে দিলেন।
অন্য একটি বর্ণনায় এইরূপ রয়েছে- একবার রাজ-কর্মচারীদের একজন এক যিম্মী লোককে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আর সেই যিম্মী লোকটি হযরত আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট সাহায্য চাইল। তিনি যিম্মী লোকটির সম্মুখে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি জিযিয়া দিয়েছো? সে উত্তর দিল, হ্যাঁ দিয়েছি। অতঃপর তিনি রাজ-কর্মচারীর সম্মুখীন হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তার নিকট কি চাও? সে বলল, আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছি, বছরার আমীরের বাড়ীর ময়লা পরিষ্কার করার জন্য। অতঃপর তিনি যিম্মীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজে রাযী আছো? সে বলল, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে এ কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। তখন তিনি রাজ-কর্মচারীকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। সে উত্তর দিল, আমি তাকে ছাড়ব না। তিনি আবার বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। রাজ-কর্মচারীও আবার বলল, আমি ছাড়ব না। অতঃপর তিনি তার কাপড় ধরলেন এবং বললেন, আমি যতক্ষণ জীবিত আছি, তুমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিম্মাকে তুচ্ছ করতে পারবে না। অতঃপর তিনি লোকটিকে ছুটিয়ে নিলেন। বর্ণিত আছে যে, উনাকে বছরা থেকে সিরিয়ায় স্থানান্তরের ইহাও একটি কারণ ছিল। (হিলইয়াতুল আওলিয়া) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)