জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আমির বিন আবদিল্লাহ বিন আবদিল ক্বায়েস আল-আনবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩)
বিলাদত শরীফ: তারিখ উল্লেখ নেই। বিছাল শরীফ: হিজরী ৬০ সনের পূর্বে।
, ০৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০২ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইবাদত বন্দেগী:
হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতেন, দুনিয়াতে রয়েছে চিন্তা ও দুঃখ, আর আখিরাতে রয়েছে দোযখ আর হিসাব, সুতরাং শান্তি ও খুশি কোথায়? আয় বারে ইলাহী! আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমার সৃষ্টিতে আমার কোন ইখতিয়ার রাখেননি। আর আমাকে দুনিয়ার বালা মুছিবত দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। অতঃপর আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন সৎ কাজে দৃঢ় থাকার জন্য। আমি কিভাবে দৃঢ় থাকব, যদি আপনি দৃঢ় না রাখেন? আয় বারে ইলাহী! নিশ্চয়ই আপনি জানেন, আমাকে যদি সারা দুনিয়াপূর্ণ প্রাচুর্য দেয়া হয়, আর আপনি যদি তা আমার নিকট চান, আমি অবশ্যই তা আপনাকে দিয়ে দিবো। সুতরাং আমার নফ্সকে আপনি গ্রহণ করুন।
হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলতেন, দুনিয়ার স্বাদ চারটি জিনিষে রয়েছে- ধন-সম্পদ, স্ত্রীলোক, নিদ্রা ও খাদ্য। অতঃপর ধন-সম্পদ ও স্ত্রীলোকে আমার কোন প্রয়োজন নেই। আর নিদ্রা ও খাদ্য ছাড়া আমার চলে না। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এই দু’টি জিনিষ আমার চেষ্টা-কোশেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অথচ তিনি সারারাত্র দ-ায়মান থেকে নামায আদায় করতেন, দিনের বেলায় রোযা রাখতেন।
বর্ণিত আছে যে, হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি একবার অসুস্থ হয়ে ক্রন্দন করলেন। উনাকে বলা হলো, আপনি কেন কান্না করছেন, অথচ আপনি এইরূপ এইরূপ ছিলেন। তিনি বললেন, আমার কি হয়েছে যে, আমি ক্রন্দন করবো না? আমার অপেক্ষা কান্নাকাটি করার অধিকতর হক্বদার কে? মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি দুনিয়ার প্রতি লোভের কারণে ক্রন্দন করছি না, অথবা মৃত্যুর ভয়েও ক্রন্দন করছি না। বরং এজন্য ক্রন্দন করছি যে, আমার সফর অনেক দূরবর্তী, আর আমার পথের সম্বল অনেক কম। প্রতিদিন আমার সন্ধ্যা হয় এই অবস্থায় যে, হয়ত উর্ধ্বারোহন অথবা নিম্নে অবতরণ, হয়ত বেহেশতে নয়ত দোযখে অবস্থান। আমি জানি না, এই উভয়ের কোন্টিতে আমার স্থান। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
বর্ণিত আছে যে, হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দৈনিক এক হাজার রাকায়াত নামায আদায় করতেন। সূর্য উঠার পর থেকে আছর ওয়াক্ত পর্যন্ত নামাযে দ-ায়মান থাকতেন। অতঃপর বিশ্রাম নিতেন, আর উনার দুই পা ও হাঁটুর নীচের অংশ ফুলে যেত। অতঃপর তিনি নিজকে সম্বোধন করে বলতেন, হে আমার নফ্স! মন্দ কাজের আদেশ দাতা! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই এমনভাবে খাটাতে থাকব যাতে তোমার বিছানায় শোয়া নছীব না হয়। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
কারামত মুবারক:
হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনেক কারামত প্রকাশ পেয়েছে। বর্ণিত আছে যে, হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বার্ষিক দুই হাজার দিরহাম ভাতা পেতেন। তিনি যখন ঘর থেকে বের হতেন, এই অর্থ থেকে দান করার জন্য কিছু অর্থ (টাকা-পয়সা) নিজের সাথে নিতেন। অতঃপর কোন মিসকিনের সাক্ষাত পেলে সেখান থেকে দান করতেন। যখন পুনরায় ঘরে ফিরে আসতেন, বাকী টাকা-পয়সাসহ কাপড়টি গৃহবাসীদের নিকট নিক্ষেপ করে দিতেন। লোকেরা হিসাব করে দেখত, যে পরিমাণ টাকা-পয়সা তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কাপড়ে জড়িয়ে নিয়েছিলেন, সেই পরিমাণ টাকা-পয়সা তখনও বাকী রয়েছে। অর্থাৎ দান করার পরও উনার টাকা পয়সা একটুও কমেনি। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, তবাকাত)
বর্ণিত আছে যে, হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করেছিলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন শীতকালে উনার জন্য পবিত্রতা (ওযূ, গোসল, ইত্যাদি) সহজ করে দেন। অতঃপর এ সময় উনাকে (ঠান্ডা) পানি দেয়া হতো, আর ইহা উনার নিকট গরম অনুভব হতো। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
বর্ণিত আছে যে, ইবলিস হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সিজদার স্থানে সাপের ছূরত ধরে চক্রাকারে বসে থাকত। যখন তিনি তার গন্ধ অনুভব করতেন, হাত দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে বলতেন, যদি তোমার দুর্গন্ধ না থাকত, তাহলে তোমার উপরই আমি সিজদা দিতাম। ইবলিস সাপের আকৃতিতে প্রকাশ পেত। নামাযরত অবস্থায় তিনি তাকে দেখতেন, সে উনার কামীছের মধ্যে প্রবেশ করত অতঃপর হাতা দিয়ে এবং কাপড়ের মধ্য থেকে বের হত। উনাকে বলা হলো, আপনি কি সাপকে ভয় করেন না? তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! নিশ্চয়ই আমি মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট লজ্জা বোধ করি। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! সেই জন্য আমি বুঝতেই পারি না, ইবলিস কখন প্রবেশ করে এবং কখন বের হয়। (হিলইয়াতুল আওলিয়া) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪২)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (৩)
১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা ফরয
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যে সমস্ত উলামায়ে সূ’ ও তাদের শাগরেদ নামধারী মুসলমানরা মুশরিকদের মন্দির ও পূজায় পাহারা দিয়েছে তাদের ব্যাপারে শরঈ ফায়ছালা (২)
১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)