জীবনী মুবারক
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আমির বিন আবদিল্লাহ বিন আবদিল ক্বায়েস আল-আনবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
বিলাদত শরীফ: তারিখ উল্লেখ নেই। বিছাল শরীফ: হিজরী ৬০ সনের পূর্বে।
, ০৬ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৫, মে, ২০২৪ খ্রি:, ০১ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইবাদত বন্দেগী:
বর্ণিত আছে যে, একবার (ওয়াদী সিবা’ অর্থাৎ বন্যজন্তুর উপত্যকা) নামে একটি উপত্যকায় হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অবতরণ করেন। উপত্যকার অন্য এক পাশে হযরত হামামা রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে একজন হাবশী আবিদ (দরবেশ) ছিলেন। এক পাশে হযরত আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি নামায পড়তেন, অন্য পাশে হযরত হামামা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও নামায পড়তেন। এইভাবে চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত্র উনারা সেখানে ছিলেন, কিন্তু একজন অপরের নিকট যেতেন না। উনারা এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে শুধু ফরয নামাযের সময় জামায়াতে নামায পড়ার জন্য একত্র হতেন। অতঃপর পুনরায় পৃথক হয়ে নফল নামায পড়া শুরু করতেন। চল্লিশ দিন শেষ হলে হযরত আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হামামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এসে উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার উপর রহম করুন, আপনি কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমাকে ছাড়–ন, আমি চিন্তান্বিত। হযরত আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার নামে কসম দিচ্ছি, আপনি আপনার পরিচয় দিন। তিনি বললেন, আমার নাম হামামা। হযরত আমির রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যদি আপনি হযরত হামামা রহমতুল্লাহি আলাইহি হয়ে থাকেন, যাঁর সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়েছে, আপনি বর্তমানে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। আপনার সবচেয়ে উত্তম অভ্যাস কি, তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, আমি খুব কম ইবাদতকারী। যদি নামাযের ওয়াক্তসমূহ আমার নামাযে দন্ডায়মান ও সিজদা করার বাধা না হতো, তাহলে আমি সারা জীবন রুকূ ও সিজদা অবস্থায় কাটিয়ে দিতাম যে পর্যন্ত না মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আমার সাক্ষাত হতো। কিন্তু ফরয নামায আমাকে তা করতে দেয় না। এখন আপনি বলুন, আপনি কে? মহান আল্লাহ পাক আপনার উপর রহম করুন। তিনি বললেন, আমার নাম আমির বিন আবদিল ক্বায়েস। অতঃপর তিনি বললেন, আপনি যদি হযরত আমির ইবনে আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি হন, যাঁর সম্পর্কে আমাকে অবহিত করা হয়েছে, আপনি মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। সুতরাং দয়া করে আমাকে অবহিত করুন, আপনার সবচেয়ে উত্তম অভ্যাস কি? তিনি বললেন, আমি খুব কম ইবাদত করি। তবে মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি আমার বক্ষে এরূপ যে, উনার এই ভয়ের কারণে আমি মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করি না। হিংস্র বন্যজন্তুসমূহ আমার নিকট আসা যাওয়া করত। হঠাৎ একটি বন্যজন্তু আমার পেছন দিক থেকে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, আমি নির্ভয়ে আমার হাত দু’টি তার কাঁধের উপর রাখলাম। অতঃপর আমি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই আয়াত শরীফ পাঠ করলাম-
ذٰلِكَ يَوْمٌ مَجْمُوْعٌ لَهُ النَّاسُ وَذٰلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُوْدٌ
“ইহা মানুষের জন্য সেই একত্রিত হওয়ার দিন, ইহা (উনার নিকট) উপস্থিত হওয়ার দিন”। হিংস্র বন্য জন্তুটি যখন দেখল, তিনি ইহাকে কোন পরওয়াই করছেন না, সে চলে গেল, উনার কোন ক্ষতি করল না। সুবহানাল্লাহ!
হযরত হামামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! হে আমির, আমি কি অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখলাম! হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতে উনার প্রতি আমার লজ্জা হয়। হযরত হামামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে পেট দিয়ে যদি পরীক্ষায় না ফেলতেন, তাহলে আমরা যৎসামান্য প্রয়োজনীয় বস্তু খেয়ে জীবন ধারণ করতাম, আর সব সময় আমাদের রব তায়ালা উনার রুকুকারী ও সিজদাকারী হিসাবে আমাকে দেখতে পেতেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি প্রতিদিন ৮০০ রাকায়াত নফল নামায আদায় করতেন, আর বলতেন, আমি খুব কম ইবাদত করি, আর তিনি নিজ নফ্সকে এজন্য অর্থাৎ এত কম ইবাদতের জন্য ধিক্কার দিতেন। (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
হযরত আলক্বামা বিন মারছাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যুহদ (সংসার-বিরাগ) ৮ ব্যক্তির মধ্যে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে- হযরত আমির বিন আবদিল ক্বায়েস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত উওয়াইস আল-ক্বারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হারাম বিন হাইয়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত রাবী বিন খাছীম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাসরুক ইবনুল আজদা’ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আসওয়াদ বিন ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু মুসলিম খাওলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১)
২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওহাবীদের চক্রান্ত উন্মোচন
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হালালকে হারাম করা নিষেধ
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ শরীয়তসম্মত, নিখুঁত, ব্যবহারে সহজ এবং রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ (৬)
২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১২)
২০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)